মোদিকে যে কারণে নৌকা উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী

কী ভেবেছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নৌকা উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী? মোটেও তা নয়। এটা ছিল আরো বেশি কিছু।’

গত ৬ ও ৭ জুন নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সব পর্বে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকা একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মন্তব্য এটি।

তার এ মন্তব্যের ব্যাখ্যায় জানা যায়, শুধু তিস্তা নয়, ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির বিষয়ে স্থায়ী ও সমন্বিত সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশ। একান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তুলেছেন এ বিষয়টি। আলাদা আলাদা করে নয়, একসঙ্গে এই ৫৪ নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি সুরাহার প্রস্তাব দেন তিনি।

একইসঙ্গে ২০১১ সালে দু’দেশের মধ্যকার অন্তর্বর্তীকালীন সমঝোতা অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে সমাধানের বিষয়টিও উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়েই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এর জন্য কম্প্রিহেনসিভ, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার কথাও উঠেছে সে বৈঠকে।

‘দুদেশের মধ্যকার অভিন্ন নদীগুলোর সমাধান হলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক কতটা উচ্চতায় পৌঁছাবে তা চিন্তাও করা যাবে না’-দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে এমন কথাও হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদিকে একটি প্রতীকী নৌকা উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপহার হিসেবে কেন এই নৌকা-এমন প্রশ্নের উত্তরে সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান অমীমাংসিত ইস্যু পানি। শুধু তিস্তা নয়। দু’দেশের মধ্যকার অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি বণ্টন নিয়েই আছে মতবিরোধ। এক তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ৫৪টি নদীর আলাদা চুক্তি করতে গেলে শতাব্দী পার হয়ে যাবে। তাই প্রধানমন্ত্রী এ সব নদী নিয়েই চিন্তিত। সে চিন্তা থেকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন। আর সে পানির প্রয়োজনীয়তা বোঝাতেই তিনি উপহারের তালিকায় নৌকাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। উপহারটি খোদ প্রধানমন্ত্রীই পছন্দ করেছেন।

এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, উপহার হিসেবে দেওয়া এ নৌকা শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে দেওয়া হয়নি। নৌকা চালাতে সবগুলো নদীতে সঠিক পানি প্রবাহের প্রয়োজনীয়তা কথা বলা হয়েছে।

আরেকটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, নৌকাটি মোদির হাতে তুলে দেওয়ার সময় এই পানি বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইতিবাচক বাক্য বিনিময়ও হয়েছে।

জানা যায়, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ইস্যুটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথভাবে উত্থাপন করতে পেরেছিলেন। পাশাপাশি যৌথ নদী ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

আর এসব বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীরও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিল বলে জানিয়েছেন সরকারের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি বলেছেন পানি একটি মানবিক ইস্যু। বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনা করে যত দ্রুত সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

নরেন্দ্র মোদি তার ঢাকা সফরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক থেকে শুরু করে আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা এমনকি যৌথ ইশতেহারেও পানির বিষয়টি ‘মানবিকভাবে সমাধানের’ কথা উল্লেখ করেছেন।

সরকারের উচ্চ পর্যারয়ের একজন এ বিষয়ে বলেন, এটাকে মানবিক সমস্যা বলে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী মোদি মূলত ‘সংকট’কে স্বীকার করে নিলেন। পাশাপাশি এমন মানবিক কোনো বিষয় নিয়ে তার সরকার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে লড়াই করতে চায় না, সে বার্তাও তার দেশকে জানালেন। বিশেষ করে যারা এই তিস্তার বিরোধিতা করে আসছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসব নদীর বিষয়ক আলাপের পাশাপাশি পদ্মা নদীর ওপর গঙ্গা বাঁধের বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন শেখ হাসিনা।

Exit mobile version