যৌন ব্যবসা করতে রাজি না হওয়ায় স্ত্রীকে নির্যাতন

রাজশাহীর বাগমারায় যৌন ব্যবসায় রাজি না হওয়ায় এক কিশোরীকে (১৬) তাঁর স্বামী বাবু ইসলাম (৩০) ও স্বামীর দুই সঙ্গী মিলে ধর্ষণ ও অমানবিক নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নির্যাতিত মেয়েটির সূত্র জানায়, গুরুতর অসুস্থ মেয়েটিকে গত সোমবার রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন এক যুবক। নিজেকে মেয়েটির পাড়াত ভাই বলে পরিচয় দিয়ে হাসপাতালে রেখে যান তিনি। এরপর গত মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে মেয়েটি চিকিৎসকদের বিস্তারিত ঘটনা জানান। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। সেইসঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েটিকে রাজশাহী ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তরের সুপারিশ করে। রাতেই পুলিশ মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে গেলেও কোনো অভিভাবক না থাকায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় পড়েই কাতরায় ওই কিশোরী।

গতকাল বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় মেয়েটির সঙ্গে। তিনি জানান, ধর্ষণের পর তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। একপর্যায়ে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। পরে গুরুতর অবস্থায় তাঁকে যাত্রাগাছি বাজারের এক গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হলে সোমবার রাতে হাসপাতালে আনা হয়। আয়নুল হক নামের এক যুবক তাঁকে হাসপাতালে রেখে যান।

মেয়েটির অভিযোগ, তাঁর বাবা অসুস্থ ও হতদরিদ্র হওয়ায় যাত্রাগাছি গ্রামের বাবু ইসলামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন। মাত্র দেড় মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাঁকে দিয়ে যৌন ব্যবসার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলেন স্বামী। রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন সময় নির্যাতন করা হতো। গত সোমবার তাঁকে পাশের শিকদারী গ্রামের সাইফুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যান তাঁর স্বামী। সেখানে সাইফুল ও আরেক যুবক তাঁকে ধর্ষণ করেন। তিনি পালানোর চেষ্টা করলে স্বামী ও ওই দুই যুবক মিলে নির্যাতন চালান তাঁর ওপর।

বাগমারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল গণি বলেন, চিকিৎসকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটির সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিবারের লোকজনের সহযোগিতায় স্বামী তাঁর ওপর নির্যাতন করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাব্বি হোসেন বলেন, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এখানে নেই। তাই তাঁকে রাজশাহী ওসিসিতে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। তবে মেয়েটির কোনো অভিভাবক না আসায় এখনো তিনি এই হাসপাতালেই আছেন।

এদিকে যাত্রাগাছি গ্রামে গিয়ে অভিযুক্ত স্বামী বাবু ইসলাম ও অন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে পাশের হায়াতপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসলাম আলী বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে মেয়েটির স্বামী তাঁকে নির্যাতন করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। মেয়েটিকে হাসপাতালে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুস্থ হলে মামলার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Exit mobile version