রাষ্ট্রদূতকে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন প্রতারিত অভিবাসীরা

57

সাগরপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করা কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের অন্তত কয়েক হাজার মানুষের খোঁজ মিলছে না। তারা কোথায় আছেন, কেমন আছেন বা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তা জানা নেই স্বজনদের।

কেউ কেউ অথৈ সাগরের বুকে তাকিয়ে নিরবে ফেলছেন চোখের পানি। কেউ বা আশায় বুক বেঁধে মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন, হয়তো ঘরে ফিরবেন তাদের প্রিয়জন। নিখোঁজদের অনেক স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগর পথে অবৈধভাবে এ যাত্রাকে কেউই কঠিন মনে করেননি প্রথমে। মালয়েশিয়ায় যেতে অনেকের করুণ দশার চিত্র তাদেরও নজরে এসেছে।

কিন্তু চাকচিক্যময় জীবনের হাতছানির কাছে তা তুচ্ছ মনে হয়েছে। এমনকি অনেক স্বজনও লোভের ফাঁদে পড়ে প্রিয়জনকে ঠেলে দিয়েছেন মৃত্যুর দুয়ারে।

১১ মে মালয়েশিয়ার লংকাবি দ্বীপের উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয় এমনই কয়েক হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিকে। দালালরা তাদের লংকাবি জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে মালয়েশিয়ার পুলিশ তাদের আটক করে। মুহূর্তের মধ্যে এ খবর মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচার করা হয়। বিষয়টি নজরে আসে আন্তর্জাতিক সংবাদগুলোরও। বাংলাদেশি আটকের খবর পেয়ে কুয়ালালামপুর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে লংকাবি এলাকায় ছুটে যান বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধি দল।

তারা সেখান গিয়ে আটক বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নেন। এরপর তারা লংকাবির ডেপুটি চিফ অব পুলিশ জামিল আহমেদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে দরিদ্র-অসহায় অভিবাসীদের ওপর যেন কোনো নির্যাতন না করা হয় সে ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়। পরে প্রতিনিধি দলটি কুয়ালা সুংগাই কামপুংয়ের অভিবাসন বিভাগের প্রধানের সঙ্গে আবারও আটক অভিবাসীদের রাখার স্থান পরিদর্শন করে তাদের খোঁজখবর নেয়। বাংলাদেশিদের যাতে কোনো নির্যাতন করা না হয় বা তাদের যেন অনাহারে রাখা না হয় সে ব্যাপারে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তারা।

প্রাথমিক রিপোর্ট জানতে পেরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধি দল ২ জুন ছুটে যায় লংকাবিতে। শহীদুল ইসলামকে কাছে পেয়ে বাংলাদেশি অভিবাসীরা কান্নায় ভেঙে পড়লে তিনি তাদের বুকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দেন। এসময় তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে লংকাবির আকাশ বাতাস।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি এসময়।

শহীদুল ইসলাম পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের সবার কথা শোনেন। কেউ অভাবের তাড়নায়, কেউ বা দালালের খপ্পরে পড়ে সমুদ্রযাত্রা করেন।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তাদের জায়গা হয়েছে মালয়েশিয়ার জেলে।

শহীদুল ইসলামকে পেয়ে অভিবাসীরা জানতে চান, কবে তারা বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন। তিনি তাদের সান্তনা দিয়ে বলেন, আপনারা কাঁদবেন না। বাংলাদেশ দূতাবাস আপনাদের পাশে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। আল্লাহ পাক আপনাদের প্রতি সহায় হবেন।

বাংলাদেশ সরকার আপনাদের ব্যাপারে কুটনৈতিক তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

এসময় রাষ্ট্রদূতের কথায় স্বস্তি ফেরে অভিবাসীদের মধ্যে। হাইকমিশনের প্রতিনিধি দল ৭১৬ জনের নাম ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছে। এসব তথ্য বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজখবর নিয়ে তারা সত্যি বাংলাদেশি কিনা সে বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে হাইকমিশনের প্রতিনিধি দলটি।