সহকারী শিক্ষক ৮ বছর পর প্রথম শ্রেণির মর্যাদা

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। সন্তোষজনকভাবে আট বছর চাকরির পর তাঁদের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড (নন-ক্যাডার) মর্যাদা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তাঁদের পদবিও পরিবর্তন করা হয়েছে। আট বছর চাকরির পর তাঁরা পদোন্নতি পেয়ে ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হবেন। যেহেতু সহকারী শিক্ষকদের মোট পদের অর্ধেক প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে, তাই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এই পদোন্নতি দেওয়া হবে। গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মুহিবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো দেওয়া
হয়নি।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের সকল সুযোগ-সুবিধা দিতে চাই। কিছু শর্ত যোগ করে আমরা সরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণিতেও উন্নীত করতে চাই। তবে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারে আমি পরে কথা বলব।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে ৩১৭টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এসব বিদ্যালয়ে সাত হাজার ৭৪৬টি সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকার পদ রয়েছে। এত দিন শুধু প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদটি প্রথম শ্রেণির ছিল। তিন বছর আগে সহকারী শিক্ষকের পদটি তৃতীয় শ্রেণির ছিল। তবে ২০১২ সালের ১৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ঘোষণার মাধ্যমে সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেন। তবে এতেও খুশি ছিলেন না তাঁরা। কারণ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সীমিত হওয়ায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করলেও অনেককেই ৩০ বছর একই পদে থেকে অবসরে যেতে হয়। এমনকি পদের নামেরও কোনো পরিবর্তন হয় না। ফলে দ্বিতীয় শ্রেণির ঘোষণা পেয়েও শিক্ষকরা মানববন্ধন, আলোচনা, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যান। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি সহকারী শিক্ষকদের চাকরির আট বছর পর প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার সুপারিশ করে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মোট পদের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ তিন হাজার ৮৮২টি পদ সিনিয়র শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। জাতীয় বেতন স্কেল-২০০৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁরা ১০ নম্বর বেতন স্কেলে (৮০০০-১৬৫৪০ টাকা) বেতন পেতেন। কিন্তু এখন তাঁরা আট বছর সন্তোষজনক চাকরি শেষে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হবেন। তাঁরা জাতীয় বেতন স্কেল-২০০৯ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির গেজেটেড (নন-ক্যাডার) পদে ৯ নম্বর স্কেলে (১১০০০-২০৩৭০ টাকা) বেতন পাবেন। তবে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে তাঁদের ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন, বিএড, বিপিএড বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারির আগেই জনপ্রশাসন, অর্থসহ সব দপ্তরের অনুমোদন নিয়েছে। ফলে এ আদেশ কার্যকরে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।
মাউশি সূত্র জানায়, ৩১৭টি সরকারি স্কুলে ৬০ জন প্রধান শিক্ষক, ৪৫০ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রায় দুই হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আর পদোন্নতির জন্যও মাউশির প্রস্তাবনা সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) পাঠানো হয়েছে। ফলে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে অনেকেই সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়ে যাবেন। এতে সহকারী শিক্ষকের আরো পদ শূন্য হয়ে যাবে। সহকারী শিক্ষকদের মোট পদের অর্ধেক প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হলেও শর্ত পূরণ করা বেশির ভাগ শিক্ষকই পদোন্নতি পেয়ে যাবেন।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘সরকারের এই আদেশে আমরা খুবই খুশি। শিক্ষকদের একটা আক্ষেপ ছিল, চাকরি শুরু করলাম সহকারী হিসেবে আর শেষও করতে হবে একই পদে থেকে। যা অমর্যাদার ছিল। তাই আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পেছনে মন্ত্রণালয় ও গণমাধ্যমের বিশেষ অবদান রয়েছে।’

Exit mobile version