সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় ‘হিজড়ার বেশে’ কয়েকজন ব্যক্তি প্রতিবন্ধী এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার দুপুরে জামতৈল বাজারে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। তারা অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিরাজগঞ্জ জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, গণধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। ওই গৃহবধূকে শনিবার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে।
স্থানীয় লোকজন জানান, জামতৈল স্টেশনে বৃদ্ধ স্বামীর সাথে বসবাস করেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ওই গৃহবধূ। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে কথিত হিজড়া সুলতান তাঁকে শাড়ি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এই প্রলোভনে ওই গৃহবধূ সদর উপজেলার কড্ডার মোড় এলাকার সুলতানের বাড়িতে যান। সুলতানের বাড়িতে পৌঁছার পর কথিত হিজড়ারা বনে যায় পুরুষ। চলে দিনভর শারীরিক নির্যাতন। পরে সুলতানসহ পাঁচজন এই গৃহবধূর হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে। বিকেলে ছেড়ে দিলে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ জানান, সুলতান তাঁকে শাড়ি দেওয়ার কথা বলে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। তাঁর হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে কাপড় গুজে সুলতান, কামরুল, সোহাগীসহ আরো কয়েকজন তাঁকে ধর্ষণ করে।
কয়েকজন এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, হিজড়া বেশে কয়েকজন পুরুষ এলাকায় নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। হিজড়ার বেশে তারা বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায়সহ এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়। একই সাথে তারা এলাকার গরিব-দুস্থ নারীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এলাকার কিছু সুবিধাভোগী মানুষ তাদের এই অপকর্মে সহযোগিতা করে।
কামারখন্দ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত ফারজানা অভিযুক্তদের বিচারের এবং প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে বসবাসের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
ইউএনও বলেন, ‘তাঁর (ওই গৃহবধূ) সাথে তো অন্যায় করা হয়েছে তাই না। এটার ব্যবস্থা তো একটা নিতে হবে। আপাতত যেটা করব, এখান থেকে ওদেরকে একটা খাসজমির ওপরে ছোট একটা ঘর করে ট্রান্সফার করে দেব। আর তাঁর যদি কিছু পুঁজির দরকার হয়, সেই ব্যবস্থা করে দিব। যেহেতু ওই নারী নিগৃহীত হয়েছে, স্বামী যেন তাঁর সাথে থাকে, ছেড়ে না যায়, তাঁরে তো একটা কিছু দিয়ে ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যবস্থাটা আমরা করব। আর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। যারা অপরাধী তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। ও (ভিকটিম) যদি চিনতে পারে, নাম টাম তো কয়েকজনের বলল। আমরা সে ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেব অবশ্যই।’
হিজড়াদের উৎপাত : ইউএনও বলেন, ‘আমি এখানে আসার পর থেকে, আমার হাজবেন্ড প্রায়ই পাবনা থেকে সিরাজগঞ্জ আসে, সেও প্রায়ই বলে। এখন ওদের বিরুদ্ধে আপনারা কিছু বলতে গেলে তারা একদম দল বেঁধে.. ধরেন একটা হিজড়ারে আপনি কিছু বলবেন শুধু সিরাজগঞ্জ কেন সারা রাজশাহীর হিজড়ারা সব একসাথে এসে অ্যাটাক করা শুরু করবে। তো যেহেতু সমাজের একটা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী সেজন্য আমরা সহজে তাদের বিষয়ে, অনেকটা ছাড় দিয়ে থাকি। কিছু বলি না, কিন্তু এইটা না যে কোনো অন্যায় করবে, এ পরিস্থিতিতে তো আর কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নাই।’
জিআরপির ওসি কামাল হোসেন বলেন, ‘ট্রেনের এই যে এই ঘটনাটার সত্যতা আমি স্বীকার করি। ট্রেনে এমন ঝামেলা হয়। বিভিন্ন অভিযোগ আসে। আমাদের পুলিশ থাকে, আমাদের কাছে নোটিশ আসে। আমি যতটা পারি এটাকে নামাইয়া দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এরা আসলে খুব বেপরোয়া। টাকা তোলার চেষ্টা করে। বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্নভাবে টাকা চায়। এ রকম অভিযোগ আমাদের কাছে আছে।’
কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন চৌধুরী বলেন, হিজড়ারা মানুষকে বিরক্ত করলেও আইন না থাকায় কিছু করা যাচ্ছে না।