‘আমাদের বুঝি নিজ দেশে হেসে-খেলে থাকতে ইচ্ছে করে না’

রাখাইনে সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়ন থেকে বাচঁতে নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, দুদিন আগেও মগ সেনাদের নির্যাতন সইতে না পেরে রোহিঙ্গারা এখানে পালিয়ে এসেছেন। ওখানে তারা বন্দুক থাক করে রেখেছে আমাদের মারার জন্যে। আমরা আর কত মার খাব? আমাদের নিরাপত্তা দিন আমরা ফিরে যাব।

গত ২০ জানুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হিলির নেতৃত্বে বিশেষ প্রতিনিধি দল টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প এবং ২১ জানুয়ারি উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এর পর বালুখালী আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর গোলঘরে অপেক্ষমান রোহিঙ্গাদের সাথে একান্তে কথা বলেন। আশ্বস্ত করেন সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। এ সময় রোহিঙ্গারা ব্যানার নিয়ে স্বদেশে ফেরত যেতে বিভিন্ন দাবি পেশ করেন।

রফিক উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, মিয়ানমারে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমার কারাগারে থাকা রোহিঙ্গাদের মুক্তি দিতে হবে। নিজেদের বাপ-দাদার বসত বাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। চাকরি ও ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে নাগরিক সকল সুযোগ সুবিধা এবং স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালনের সুযোগ দিতে হবে। আমাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত তাদের কথা শুনেছেন এবং বলছেন- রোহিঙ্গারা যেভাবে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাতে স্পষ্ট যে, মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী তাদের নাগরিকদের রক্ষা করছে না। গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের প্রকৃত চিত্র জাতিসংঘে তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিজভূমি রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমারের প্রতি জোরালো চাপ সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মংডু উপজেলা চেয়ারম্যান ছৈয়দ উল্লাহসহ অন্যান্যরা

থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত হাইচ্ছুরতা মংডু এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান ছৈয়দ উল্লাহ (৭৮) বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের মা বোনদের জুলুম করে মেরে ফেলেছে। যতক্ষণ আমাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হবে না ততক্ষণ আমরা ফিরে যেতে চাই না। আমাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেলে অবশ্যই আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাব।

মংডু দক্ষিণের ঘরাখালী গ্রামের সায়েত উল্লাহ (৩২) বলেন, সবকিছু হারিয়ে এখানে আশ্রয় পেয়েছি। আবার ফিরে গিয়ে জীবনটাই যেন হারাতে না হয়। আমাদের স্বদেশে ফিরতে আপত্তি নেই। শুধুমাত্র জীবনের নিরাপত্তা চাই।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সমাধান শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের শিক্ষিকা হাফেজা নুর আয়েশা শিশু কিশোরীদের কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে নুর ছেহেনা (৭), আসমা বিবি (৮), আনোয়ারা হোছনা (৯), নুর কলিমা (১০), উম্মে ছাকিলা (৯), আল কায়াছ (১৩). ছেহেরা বিবি (১০), সাজেদা বিবি (১২), আল কামা (১১), হুমায়রা (১৪), নুরে জান্নাত(১৫) -এদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে কিনা জানতে চাইলে সবাই এক বাক্যে বলল, আমরা এখানে শিক্ষা নিতে পারছি। ওখানে তা পারি না। এখানে সবাই আমাদের আদর করে। আর মিয়ানমারে আমাদের জুলুম করে। জুলুম বন্ধ হলে ফিরে যাব।

এখানে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তারা বলল- খুব ভালো। ১৫ বছরের তরুণী নুরে জান্নাত বলল, চোখের সামনে বার্মিজ মিলিটারি আমার বান্ধবী হালিমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। আমাদের মতো অনেককে মেরে ফেলা হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাদের হাতে আমরা কিভাবে নিরাপদ থাকব আপনারাই বলেন। আমাদের বুঝি নিজ দেশে হেসে খেলে থাকতে ইচ্ছে করে না?

Scroll to Top