কামারুজ্জামানের রিভিউ শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায়

32

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে আগামীকাল বুধবারের কার্যকালিকার কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনটি চার নাম্বার আইটেম। বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
এর আগে গত ৯ মার্চ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন শুনানীর জন্য ১ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়।
রিভিউ আবেদন শুনানির বিষয়ে কামারুজ্জামানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: শিশির মনির বলেন, শুনানি চার সপ্তাহ মূলতবি রাখার আরর্জি জানিয়ে আজ আমরা আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি আবেদন দায়ের করেছি।
গত ৮ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রিভিউ আবেদনটি শুনানির দিন ধার্য করার জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দায়ের করেন। ৪৫ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে মোট ৭০৪ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়।
রিভিউ আবেদন দায়ের করার পর এক সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, এখন দেশে একটা অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা যারা আইনজীবী আছি, অনেকেই রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারি না। অনেকেই শঙ্কিত। রিভিউ পিটিশন শুনানিতে আসার ব্যাপারে মাননীয় আদালত তাড়াহুড়া করবেন না, সেই আবেদন আমরা করব। আমরা আশা করি, আদালত আমাদেরকে সেই সুযোগ দেবেন।
তিনি বলেন, এই রায়ে সাক্ষ্য প্রমাণের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। অনেক সময় অনেক কিছু বিচারপতিদের নজরে আসেনি, যা পুণর্মূল্যায়নের দাবি রাখে। ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিচারের সময় দশজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পরে অতিরিক্ত তিনজন সাক্ষী আনা হয়। এই তিনজনের সাক্ষীর উপর ভিত্তি করে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। এই তিনজন সাক্ষী সত্য না মিথ্যা বলেছেন তার সাক্ষ্য সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয়নি। আমরা আশা করবো ওই তিন সাক্ষীর সাক্ষ্য পুণরায় বিবেচনা করা হবে।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়ে বলেছিলেন, রিভিউয়ে বিস্তারিত শুনানির কোনো অবকাশ নেই। মূল রায়ে আদালতের যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে শুধু তা দেখিয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, রিভিউ আবেদন দায়ের হওয়ায় কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত থাকবে। কোন ভুল থাকলে তা সংশোধন করার জন্যই রিভিউ আবেদনের বিধান রেখেছে আপিল বিভাগ। তবে আমার মনে হয় রায়ে কোন ভুল নেই। আমিও মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখার জন্য শুনানিতে আবেদন জানাবো।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় দেন। এর পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুহম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলসুপার ফরমান আলীসহ চারজন কামারুজামানের কনডেম সেলে যান এবং পরোয়ানা পড়ে শোনান।
আপিল বিভাগের আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের রায় অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখেন এ রায় ঘোষণা করে ছিলেন আপিল বিভাগ।
এর আগে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।