বাংলাদেশে গোয়েন্দাগিরি করছে নিউজিল্যান্ড

60

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার ওপর নজরদারি করছে নিউজিল্যান্ডের গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশ সম্পর্কিত তথ্যাদি তারা অন্য কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বিনিময়ও করেছে। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড। তাদের দেয়া প্রতিবেদনে র‍্যাবসহ কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পরিচালিত এ গোয়েন্দা অভিযানে সংগৃহীত তথ্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সাথে ভাগাভাগি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেনের প্রাপ্ত নতুন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নিউডজিল্যান্ড হেরাল্ডসহ দেশটির একাধিক গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তৎপরতার তথ্য ফাঁস করে আসছেন স্নোডেন। এ সব তথ্যে দেখা যায়, এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে গোয়েন্দা তৎপরতা চালাচ্ছে নিউজিল্যান্ডের গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন্স সিকিউরিটি ব্যুরো (জিসিএসবি)। ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত জিসিএসবির একটি অতি গোপনীয় পেপারে বলা হয় যে সংস্থাটি ‘২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লক্ষ্যবস্তুর গোয়েন্দা তৎপরতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।’ ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে গোয়েন্দা তৎপরতাকে নিউজিল্যান্ডের ‘অন্যতম সফলতার গল্প’ বলে মন্তব্য করেছে এনএসএ। পত্রিকাটির খবরে বলা হয়, গত এক দশক ধরে বাংলাদেশে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা, সিআইএ এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে জিসিএসবি। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে গোয়েন্দা তৎপরতার জন্য ঢাকায় একটি ‘তথ্যকেন্দ্র’ গড়ে তুলেছে জিসিএসবি। তারা স্থানীয় মোবাইল ফোন কলে আড়ি পাতছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, জিসিএসবি বাংলাদেশে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সাথে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করার পাশাপাশি র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপরও গোয়েন্দাগিরি করেছে। ২০০৯ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, জিসিএসবির গোয়েন্দা তৎপরতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল র‌্যাব- যাতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হলে ভবিষ্যতে অভিযান চালানো যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নিরাপত্তা সংস্থা ডিজিএফআই, র‌্যাব ও এনএসআই’র বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে এসব বাহিনীর সাথে গোয়েন্দা তৎপরতার তথ্য ভাগাভাগিতে খোদ নিউজিল্যান্ডেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। স্নোডেনের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের গ্রীন পার্টি বৃহস্পতিবার বলেছে যে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জিসিএসবিকে জড়ানো হয়েছে। গ্রীন পাটির সহ-প্রধান ড. রাসেল নরম্যান বলেছেন, জিসিএবসি বাংলাদেশের যেসব নিরাপত্তা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করেছে তারা আদিবাসী, সংখ্যালঘু , রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, শ্রমিক নেতাদের হত্যা ও নির্যাতনে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এতোটাই ‘ব্যাপকবিস্তৃত ও পদ্ধতিগত’ যে জিসিএসবির সরবরাহ করা তথ্য যে এসব সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘনে কাজে লাগায়নি সেকথা নিশ্চিত করে বলা যায় না।  Docu02