নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজের ঘটনায় অবিলম্বে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। বুধবার দেয়া এক বিবৃতিতে তারা এই বিএনপি নেতার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ৮ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করলে ‘দেরি হয়ে যেতে পারে’। সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ অব্যাহত গুমের ধারাবাহিকতার অংশ বলেও মন্তব্য করে এইচআরডব্লিউ।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, বিরোধী দলীয় নেতাদের জোরপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তে ব্যর্থতার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গুমের ঘটনায় বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন তদন্ত শুরু করা উচিত। দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ৮ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করলে এ ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করে তারা।
উল্লেখ্য সালাহ উদ্দিনের পরিবার অভিযোগ করেন, গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হয়েছে। তবে পুলিশ ও র্যাব তাকে গ্রেফতার বা আটকের কথা অস্বীকার করছে। স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেছেন হাসিনা আহমেদ। এ বিষয়ে আগামী ৮ এপ্রিল হাইকোর্টে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়, সালাহ উদ্দিনের বাসার দারোয়ান দাবি করেছেন, তাকে যারা নিয়ে গেছে তারা নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিবির ব্যাজও দেখিয়েছে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর তারা যখন বের হচ্ছিলেন তখন সালাহ উদ্দিনকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে এই সংস্থা জানায়, সালাহ উদ্দিনের বাসার সামনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একটি গাড়িও উপস্থিত ছিল ওই সময়।
২০১২ সালে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া ও ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে সাতখুনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যম প্রশ্ন তুলেছিল বলে উল্লেখ করে তারা।
অ্যাডামস বলেন, জোরপূর্বক গুমের অনেগুলো ঘটনার পেছনে কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। সরকার যে এসব ঘটনার তদন্ত করেছে বরং তার কোনও প্রমাণ নেই। সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এসব ঘটনায় জবাবদিহি করা হচ্ছে না।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে শত শত লোককে খুন ও গুম করা হয়েছে বলেও দাবি করে এইচআরডব্লিউ। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী- সরকারের নির্দেশ, সমর্থন বা মৌন সম্মতিতে সরকারি কোনও সংস্থা বা বাহিনী কর্তৃক গুম হওয়ার ঘটনা এবং সরকার এ ধরনের ঘটনা তদন্তে অসম্মতি প্রকাশ করলে তা জোরপূর্বক গুম হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের অঙ্গীকার করে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা আসেন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতায় কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে সংস্থাটি।
অ্যাডামস আরও বলেন, সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ একই ধরনের ঘটনা ধারাবাহিকতা মাত্র। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, এই ঘটনায় সরকারের কোনও সদস্যের যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার ও এ ব্যাপারে তদন্ত বা অর্থপূর্ণ কোনও পদক্ষেপ নিতে সরকারের অস্বীকৃতি এসব আচরণবিধির অংশ।