পাকিস্তানকে দুশমন বানাতে ব্রেনওয়াশ চলছে ভারতে: নাসিরুদ্দিন শাহ

পাকিস্তানের প্রায় সব পত্রিকাই বলিউড অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের সাক্ষাৎকারটি ছেপেছে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের ইমেজ দুশমন দেশ হিসেবে বানানোর জন্য ব্রেনওয়াশ চলছে ভারতে। নাসিরুদ্দিনের বরাত দিয়ে ওই ইন্টারভিউতে আরও লেখা হয়েছে, ভারতে তো প্রায়ই পাকিস্তানি শিল্পীদের বিরোধীতার মুখে পড়তে হয় অথচ পাকিস্তান দুইবাহু খুলে আমাদের স্বাগত জানায়।

পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ট্রিবিউনে লেখা হয়েছে, পাকিস্তানে সফল সফর শেষে নিজ দেশ ভারতে ফিরে গিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে নাসিরুদ্দিন শাহ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন যে তার দেশে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘৃণা বাড়ছে।

পাকিস্তানের অন্যান্য প্রধান পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলের ওয়েবসাইটেও একই কথার জিগির তোলা হয়েছে। মূলত বিনোদন বিষয়ক ওয়েবসাইট বলিউড হাঙ্গামায় তিনি এসব কথা বলেছিলেন বলে দাবি করা হয়।

শুক্রবার নবভারত টাইমস জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নিজের লিখিত বইয়ের প্রচারণা কাজে ভারতের চিরবৈরী প্রতিবেশী পাকিস্তানে যান। তার রচিত বইটির নাম ‘অ্যান্ড দেন ওয়ান ডে: অ্যা মেম্বার’। এ সূত্রে তিনি লাহোর লিটারেরি ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। এছাড়া পাকিস্তানের অপর শহর করাচির আর্ট কাউন্সিলে অভিনয়শিক্ষা সংক্রান্ত একটি থিয়েটার ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করেন। পরে পাকিস্তান থেকে ফেরার পর বলিউড হাঙ্গামায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক যে পাকিস্তানি শিল্পীদের অনুষ্ঠান করতে এখানে প্রায়ই বাধার মুখে পড়তে হয়। অতি সম্প্রতি কয়েকটি খারাপ ঘটনা ঘটে। আহমেদাবাদে পাকিস্তানি শিল্পীর শিল্পকর্মের ক্ষতি করা হয়েছে। অথচ পাকিস্তানে তো আমাদের দুই বাহু খুলে স্বাগত জানানো হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে নাসিরুদ্দিন বলেন, আমি পাকিস্তান আসা যাওয়া করি নিয়মিত। আমার মনে হয় লোকজনের মাঝে সম্পর্ক জাগরুক থাকা উচিৎ। কেননা, রাজনীতিকরা তো প্রয়োজন পড়লেই রং বদলে নেবে। ভারতীয়দের মগজ ধোলাই চলছে এ ধারণায় যে পাকিস্তান একটি শত্রু দেশ। কিন্তু জনগণকে এটা জানানো হচ্ছে না যে, এর ঐতিহাসিক পটভূমিটা কী ছিল!

নাসিরুদ্দিন রাজনৈতিক মতভেদ শেষ করে দিয়ে লোকজনের মাঝে সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, সম্পর্ক গড়া উচিৎ। আমার ‍মুসলমান হওয়ার সঙ্গে একথার কোনও সম্বন্ধ নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘৃণায় আমাদের লাভটা কী? এটা তো একধরনের দাদাগিরি। শেষপর্যন্ত তো তারা আমাদের প্রতিবেশী-ই।

তিনি বলেন, যখন আমি পাকিস্তান যাই, তখন শুনি ২৫% মানুষ ভারতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে কিন্তু এর বিপরীতে পাকিস্তানে এই হার মাত্র ১ শতাংশ। আমি জেনেছি যে, ১৯৪৭ এর আগে করাচীর ৯৫% মানুষ সিন্ধি ভাষায় কথা বলতো। কিন্তু ১৯৪৮ সালে দেখা যায় সেখানে মাত্র ২% মানুষ রয়েছে সিন্ধি বলনেওয়ালা। এটা জেনে খুব আফসোস হয়েছে।

পাকিস্তানে ভারতীয়দের প্রতি ভালোবাসার প্রশংসা করে এই জননন্দিত অভিনেতা বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে দূরত্ব তা স্রেফ রাজনৈতিক, এর শেষ হওয়া দরকার।

তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা আমাকে খুব পছন্দ করে। তারা সালমান আর শাহরুখ খানের মতো তারকাদের ভক্ত, তবে ওম পুরি, ফারুক শেখ আর আমার মতো অভিনেতাদেরও তারা কদর করে।

নিজের লেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার নিজের কিতাব নিয়ে পাকিস্তানে যেমন বিশাল আগ্রহ জাগানোর আস্থা ছিল সেরকম আশা আমার নিজদেশ ভারতে ছিল না।সূত্র: নবভারত টাইমস

Exit mobile version