আফগানিস্তানকে সুরক্ষা দিতে বাগরাম বিমানঘাটি তৈরি করে আমেরিকানরা – ১৯৫০এর দশকে। এরপর ১৯৭৯ সালে রাশিয়ার রেড আর্মি আফগানিস্তানে আক্রমণ চালানোর পর এই বিমানঘাঁটির দখল নেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন।
পরে এই বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ছিল মস্কো সমর্থিত আফগান সরকারের হাতে। এরপর এটির দখল নেয় একটি মুজাহেদিন প্রশাসন এবং ১৯৯০এর দশকের মাঝামাঝি তালেবান ক্ষমতায় এলে বিমানঘাঁটিটি তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে।
আমেরিকা ২০০১ সালে আফগানিস্তানের দখল নিয়ে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটিটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
এটিকে তারা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকা এক বিশাল সেনা ঘাঁটিতে রূপান্তর করে। এখান থেকেই মার্কিন বাহিনী গত বিশ বছর ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে। গত বিশ বছরে কুখ্যাত বাগরাম কারাগার নামে পরিচিতি পেয়েছে। কেউ কেউ এটিকে গুয়েন্তানামো কারাগারের বর্বরতার সাথে তুলনা করে আফগানিস্তানের গুয়েন্তানামা বলেও আখ্যায়িত করেন।
গত বিশ বছর আমেরিকান ঘাটি ছাড়াও পৃথিবীর অন্যতম বন্দীশালা ছিলো বাগরাম। বাগরামে আমেরিকানদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। যেখানে এক সাথে ১০ হাজার সেনা বাস করার জন্য উপযোগী করা হয়েছিল। এখানে বন্দী ছিল প্রায় ৬-৭ হাজার। আমেরিকার সেনারা ফিরে যাওয়ার পর এখন এ এলাকাটি নির্জন চেহারায় পরে আছে।
এখানে কারাগারে একটি ছোট রুমের মধ্যে প্রায় ৩০ জন বন্দিকে রাখা হত। তাদের বিছানার জন্য ছিল শুধুই চাদর।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের একজন রিপোর্টার আলিখান রুম পরিদর্শনের সময় বলেন, আপনারা চারপাশে কমলা রংয়ের যে কাপড় দেখতে পাচ্ছেন এগুলো বন্দীরা পরতো। এই ভাইটি যেখানে বসে আছেন এটি বন্দীদের তৈরি করা একটি পাঞ্চিং ব্যাগ যেটা তারা তৈরি করেছিল ব্যায়াম করার জন্য। আশেপাশে কিছু কাপড়-চোপড়, ডিটারজেন্ট, টাওয়েল এবং জায়নামাজ ছিল তাদের রুমে। সাথে ছিল অনেক ধর্মীয় বই, তার মধ্যে ছিল বেশিরভাগই কুরআন।
এরকম একটি ছোট ইউনিটে ৩০-৪০ জন থাকতো বলে ধারণা করা হয়। এটি ছিল একটি সাধারণ সেল, এমন অনেক সেল ছিল বাগরামে। বাইরে তাদের জন্য বিনোদনের একটি জায়গা ছিল। কিন্তু তারা সবসময়ই নজরদারিতে থাকত। তাদের রুমের উপরে ছিল লোহার জালের ছাদ, যেখান থেকে কারারক্ষীরা তাদের ওপর নজর রাখত। হঠাৎ করে যখন আমেরিকানরা চলে যায়, তখন বন্দীরা পাঞ্চ ব্যাগ ব্যবহার করে উপরের লোহার খাচা সরিয়ে ফেলেন। সেখান থেকে তারা উপরে উঠে গ্লাস ভেঙে পালিয়ে যান।
আমেরিকানরা যখন চলে যায় তখন সেখানে ৭০০০ বন্দী ছিলেন। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা কর্মীরা বলেন সেখান থেকে ৫০০০ বন্দী পালাতে সক্ষম হন। অন্যদের তালেবানরা মুক্তি দিয়েছে। তার মধ্যে আলকায়দার অনেক বড় ধরনের অভিযুক্তরাও ছিল।
কিন্তু তালেবানরা সে দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, তারা যখন সেখানে পৌঁছেন, তার আগেই সকলে পালিয়ে গিয়েছিল।
তালেবান কমান্ডার মৌলবি মুস্তফা বলেন- নিরাপত্তা কর্মীরা যতক্ষণে তাদের অবস্থান নিয়েছিল তার আগেই বন্দীরা পালিয়ে যায়। দখল নেয়ার পর কয়েকজন বন্দী তালিবানের কাছে আত্মসমর্পণ করে, কিন্তু ততক্ষণে অন্যরা অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।
তালেবানদের এখনও পরিকল্পনায় নেই যে, এ বাগরাম ঘাটি দিয়ে তারা কী করবে? এখানে আছে ৮৪টি নিরাপত্তা টাওয়ার। এর আকার প্রায় একটি ছোট শহরের মতো।