মিষ্টি আলু সাধারণ আলুর মতো দেখতে হলেও এটি ভিন্ন গোত্র ও প্রজাতির। এটি বিভিন্ন রঙ ও চমৎকার পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি বিশেষ ধরনের আলু। তবে সবচেয়ে প্রচলিত মিষ্টি আলু হালকা হলুদ বা সাদা রঙেরটি।
মিষ্টি আলুর মিষ্টি স্বাদটা আসে সাধারণত বিটা ক্যারোটিন থেকে। আমাদের দেহ একে ব্যবহার করে ভিটামিন এ উৎপাদনে ব্যবহার করে থাকে, এজন্য বিটা ক্যারোটিনকে প্রোভিটামিন এ বলা হয়। এছাড়া বেগুনি ধরনের শাঁস যুক্ত মিষ্টি আলুতে ব্লুবেরি থেকে বেশি পরিমান অ্যান্টঅক্সিডেন্ট থাকে।
তবে অন্যান্য দেশে বেশ কয়েক ধরনের মিষ্টি আলু পাওয়া গেলেও সাদা মিষ্টি আলুই আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
মিষ্টি আলুর স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডায়াবেটিসের জন্য ভালো
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধক ক্ষমতাকে স্থির রেখে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
হজমের জন্য
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর খাদ্য আঁশ যা স্বাস্থ্যকর হজমতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ফুসফুসের রোগ নিরাময়ে
ধূমপায়ীদের মাঝে এমফিসেমা বা শ্বাস কষ্টজনিত রোগ থাকে এবং তারা ভিটামিন এ এর অভাবে ভোগেন। মিষ্টি আলুতে থাকা ক্যারাটিনয়েড দেহে ভিটামিন এ তৈরি করে শ্বাসতন্ত্রকে পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে।
প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ভিটামিন ডি থাইরয়েড গ্ল্যান্ড, দাঁত, ত্বক, হার্ট, স্নায়ু, হাড় এবং দেহের শক্তির মাত্রা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মিষ্টি আলু ভিটামিন ডি এর শক্তিশালী উৎস।
হৃদপিণ্ডের সুস্থতায়
মিষ্টি আলুতে থাকা পটাসিয়াম হৃদপিণ্ডের কাজকে সামগ্রিক ভাবে উন্নত করতে সাহায্য করে সোডিয়ামের প্রভাব থেকে রক্ষা করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ইলেক্টোলাইটেএর ভারসাম্যতা বজায় রাখে এছাড়া মিষ্টি আলুর ভিটামিন বি৬ স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং degenerative disease প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
দেহের পেশী ও কলার সুস্থতায়
মিষ্টি আলুতে থাকা পটাসিয়াম খেলোয়াড়দের পেশীতে টান পরা বা ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে। তাদের শক্তি প্রদান এবং পেশীর শিথিলতা আনতে সাহায্য করে। এছাড়া তাদের নার্ভ সিগনাল ও হার্টবিট নিয়ন্ত্রনেও সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
বিটা ক্যারোটিন বাতের ব্যাথা, হাড়ের ব্যাথা, অ্যাজমা ও বুড়িয়ে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে এবং স্তন ও ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ভ্রুণের বৃদ্ধিতে
মিষ্টি আলু ফলিক এসিডের একটি খুব ভালো উৎস। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে তাদের ভ্রুণের সুস্থ কোষ ও কলার বৃদ্ধির জন্য ফলিক এসিড খাওয়া খুবই প্রয়োজনীয়।
বিষন্নতা দূর করতে
মিষ্টি আলুতে থাকা পটাসিয়াম দেহের পানির ভারসাম্যতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, অক্সিজেনের সরবরাহকে বাড়ায়। এছাড়া এতে থাকা ম্যাগনেসিয়ামের বিষন্নতা বিরোধী গুনাগুন হার্টবিটকে স্বাভাবিক করে।
ভিটামিন সি
মিষ্টি আলুতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি যা সমস্ত দেহের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে
মিষ্টি আলুতে থাকা উচ্চ মাত্রার আয়রন দেহের রক্তশূন্যতার বিরুদ্ধে কাজ করে কারন আয়রন রক্তের শ্বেত ও লোহিত কনিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সতেজ ত্বক
মিষ্টি আলু সেদ্ধ করে সেই পানিটা দিয়ে মুখ ধুলে ত্বকের বিরক্তিকর দাগ দূর হয় এবং রোমকূপ পরিষ্কার হয়। এতে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেনের উৎপাদনে সাহায্য করে যার ফলে ভিটামিনই ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে। এছাড়া ত্বকের বলিরেখা, চোখের চারদিকের কালো দাগ এবং ফোলাভাব দূর করতে সাহায্য করে।
চুল সুন্দর করতে
মিষ্টি আলুর বিটা ক্যারোটিন চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমন খুস্কি দূর করে, ক্ষতিগ্রস্ত চুলের অবস্থা উন্নত করে।
খনিজ পদার্থ
মিষ্টি আলু অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পদার্থের যেমন পটাসিয়াম, ম্যাগানেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের খুব ভালো উৎস যা শর্করা, প্রোটিন এবং এনজাইমের মেটাবলিজমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সতর্কতা
যদি কারো মুত্রনালীতে পাথর থাকে বা ছিল ওই রকম অবস্থায় অবশ্যই মিষ্টি আলু খাবেন না। আর খেতে চাইলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
লেখিকা : শওকত আরা সাঈদা (লোপা); জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ এক্স ডায়েটিশিয়ান,পারসোনা হেল্থ খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান (স্নাতকোত্তর) (এমপিএইচ)