ফাতিমা আল-ফিহরি : বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা

471
ফাতিমা আল-ফিহরি : বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা

মরক্কোর ফেজ শহরে, ফাতিমা আল-ফিহরি একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা বিখ্যাত আল-কারাউইয়িন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বর্তমানে এটি বিশ্বের প্রাচীনতম বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত।

ফাতিমা আল-ফিহরি কে ছিলেন?

ফাতিমা আল-ফিহরি ৮০০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মোহাম্মদ বনু আবদুল্লাহ আল-ফিহরির কন্যা। বনু আবদুল্লাহ একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। যিনি দ্বিতীয় ইদ্রিসের রাজত্বকালে পরিবারের সাথে ফেজে বসতি স্থাপন করেন। আজ অবধি, ফাতিমার জীবন নিয়ে ইতিহাসবিদদের কাছেও অনেক গোপনীয়তা রয়েছে। এরকম একটি রহস্য তার মৃত্যুর তারিখকে ঘিরে, যা ৮৭৮ -এর দিকে হতে পারে।

ফাতিমার জীবদ্দশায় তাকে “মাদার অব বয়েজ” বা ‘ছেলেদের মা’ বলা হতো। ইতিহাসবিদ মোহাম্মদ ইয়াসির হিলালির মতে, “এই ডাকনামটি সম্ভবত তার দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে। এবং এটা সত্য যে, তিনি ছাত্রদেরকে আঁচলের তলায় রেখেছেন।”

ফাতিমা আল-ফিহরি কেন একটি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন?

ফাতিমা আল-ফিহরি কেন মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন?

ফাতেমা ছিলেন দৃঢ় বিশ্বাসী। যখন তার পিতা এবং তার স্বামী মারা যাওয়ার সময় তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়েছিলেন, তখন তিনি এটিকে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। যেটি ফেজে তার মুসলিম সম্প্রদায়ের জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন ছিল। কারণ তখন মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছিল।

‘হাওয়ারা’ উপজাতির একজন লোকের কাছ থেকে তিনি জমি কেনেন। ২৫৪ হিজরি রমজানের শুরুতে তথা ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ফাতিমা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

দশম শতাব্দিতে বিখ্যাত আল-কারাউইয়িন প্রথম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উত্তর আফ্রিকায় বৃহৎ আরব বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে। এটি বহু শিক্ষার্থী ও খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করে।
সেখানে নিয়মিত সিম্পোজিয়াম ও বিতর্কের আয়োজন করা হতো। প্রাপ্ত নথি অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ফেজজুড়ে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাদান করা হতো। একই রেকর্ডে বহু-সংখ্যক গ্রন্থাগারের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়।

আল-কারাউইয়িন বিশ্ববিদ্যালয় কেন এত বিখ্যাত?
কারাউইয়িন মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ইতিহাসবিদরা বিশ্বের প্রাচীনতম, ক্রমাগতভাবে চলমান, ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় বলে মনে করেন।

আল-কারাউইয়িন বিশ্ববিদ্যালয় কেন এত বিখ্যাত?

আল-কারাউইয়িন বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা এখনও চালু রয়েছে। ইউনেস্কো এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে এটা ইউরোপে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও আগের। যে বছর আল-কারাউইয়ীন একটি মসজিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে হিসেবে এটি টিমবুক্টুর সাঙ্কোর মসজিদের (৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত) এক শতাব্দীরও বেশি এবং বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (১০৮৮ খ্রিস্টাব্দ) দুই শতাব্দীরও বেশি আগে প্রতিষ্ঠিত হয়।

এর স্নাতকদের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক কবি, ফকিহ (মুসলিম আইনবিদ), জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- ঐতিহাসিক আবদুর রহমান ইবনে খালদুন, ডাক্তার ও দার্শনিক আবু ওয়ালিদ ইবনে রুশদ, আন্দালুসিয়ান ডাক্তার মুসা ইবনে মাইমনো এবং অরিলাকের গারবার্ট, যিনি পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার হয়েছিলেন।

ফাতিমা আল-ফিহরিকে কীভাবে স্মরণ করা হয়?

ফাতিমা আল-ফিহরিকে একজন সাধক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে ফেজে মুসলিমদের মধ্যে তিনি অনেক সম্মানিত। ২০১৭ সালে, তিউনিসিয়ায় তার সম্মানে একটি পুরস্কার চালু করা হয়। এটি এমন উদ্যোগগুলিকে পুরস্কৃত করে যা নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত দায়িত্বে অন্তর্ভুক্তিতে উত্সাহিত করে৷
উপরন্তু, ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি একাডেমিক প্রোগ্রাম ও বৃত্তি দিয়ে ফাতিমা আল-ফিহরিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এই নিবন্ধের তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করেছেন- ইতিহাসবিদ প্রফেসর ডুয়ালে কোনাতে, লিলি মাফেলা, পিএইচডি, এবং প্রফেসর ক্রিস্টোফার ওগবোগবো৷ গেরদা হেঙ্কেল ফাউন্ডেশন দ্বারা সমর্থিত।

সূত্র: DW | ভাষান্তর : মো. বাকীবিল্লাহ