কথায় আছে, প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায়। তবে শুধু মাত্র আপেল না, আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এমন অনেক ফল রয়েছে যেগুলো খুবই উপকারী। প্রতিদিনই কোন এক ধরনের ফল খেতে হবে সেটা আপেল হোক বা পেয়ারা, কলা, কাঁঠাল যাই হোক। তাই যে ফলই আমরা খাই না কেন সেটার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা জানা থাকা প্রয়োজন। আজ সবাইকে কাঁঠালের স্বাস্থ্য উপকারিতা জানাবো। তার আগে চমকপ্রদ এই ফলটি সম্পর্কে কিছু ধারনা দেয়া দরকার।
কাঁঠালের পুষ্টিমুল্য- কাঁঠাল মূলত তুঁত গোত্রীয় উদ্ভিদের অন্তর্গত। কাঁঠালের মিষ্টি ও সুস্বাদু স্বাদের কথাতো সবারই জানা। কাঁচা ও পাকা দুইভাবেই কাঁঠাল খাওয়া যায়।কাঁঠালের স্বাস্থ্য উপকারীতার কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে এর পুষ্টিমূল্যের কথা। কাঁঠালে ভিটামিন এ, সি, নায়াসিন, থায়ামিন, রাইবোফ্লোবিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে।
এবার আসা যাক কাঁঠাল কিভাবে খাওয়া হয়।যদি কাঁচা কাঁঠাল অনেক সুস্বাদু উপায়ে রান্না করা সম্ভব। অনেকেই হয়তো জানেন না এটা সঠিক মশলা ও সঠিক উপায়ে রান্না করলে এর স্বাদ মাংসের মতো হয় যা নিরামিষ ভোজীদের জন্য খুব ভালো একটি খাবার হতে পারে। অন্যদিকে পাকা কাঁঠাল সরাসরি খাওয়া ছাড়াও তা জ্যাম, জেলি, ক্যান্ডি, কেক ইত্যাদি বানিয়ে খাওয়া যায়।
এখানে কাঁঠালের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা উল্লেখ করা হলো-
শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা- এটি কাঁঠালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে থাকা ভিটামিন সি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে এবং রক্তের শ্বেতকনিকার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দৃঢ় করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে- কাঁঠালে রয়েছে lignans, saponins ও isoflavones নামক ফাইটোনিউট্রিঅ্যান্ট অর্থাৎ এই পদার্থগুলোতে স্বাস্থ্য রক্ষার গুণাবলী রয়েছে। এই পদার্থগুলোর রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক এবং বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধক ক্ষমতা।
হজমে সাহায্য করে- হজমের ক্ষেত্রে কাঁঠালের অনেক উপকারি ভূমিকা রয়েছে। এর আলসার প্রতিরোধক গুনাগুনের জন্য এটি আলসার প্রতিরোধ করতে পারে এবং হজমের সমস্যা দূর করে। এছাড়া কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থাকলে কাঁঠাল খেলে তা অন্ত্রের চলাচল সহজ করে।
দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে- কাঁঠাল দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। কাঁঠালে থাকা ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ চমৎকারভাবে দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে রক্তের সুগারের মাত্রা কোন রকম না বাড়িয়েই।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়- এটি পটাশিয়ামের খুব ভাল উৎস হওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
অ্যাজমা প্রতিরোধ করে- কাঁঠালের স্বাস্থ্য উপকারিতার মাঝে রয়েছে অ্যাজমা প্রতিরোধের গুণাবলী। গবেষণায় বলা হয়ে থাকে যদি কাঁঠালের শিকড় এবং এর নির্যাস ফুটিয়ে পানিটা খাওয়া হয় তাহলে অ্যাজমা প্রতিরোধ সম্ভব।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে- কাঁঠাল রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে এবং এটি দেহের সর্বত্র রক্ত চলাচলে সাহায্য করে।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে- কাঁঠাল হচ্ছে কপারের একটি খুব ভালো উৎস ফলে এটি থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণে ভালো ভূমিকা রাখে। তাই থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে যেকোনো কড়া ঔষধ খাওয়ার আগে কাঁঠাল খেয়ে দেখতে পারেন।
হাড়কে মজবুত করে- কাঁঠালে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম যা ক্যালসিয়াম শোষণ করে। আর ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনকে মজবুত করে এবং হাড়ের বিভিন্ন রোগ যেমন অস্টিওপেরোসিস, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।
ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখা ও বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধে- ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে কাঁঠালে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এতে থাকা পানি ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং মুখের ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখে। যার ফলে অকালে ত্বকে বলিরেখা পরে না।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি- কাঁঠালে ভিটামিন এ থাকার ফলে তা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত ও শক্তিশালী করে। এছাড়া এটা চোখকে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির মতো ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং চোখের ছানি প্রতিরোধ করে।
পাইলস ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলনের বিষাক্ততা পরিষ্কার করে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। আর কাঁঠালে থাকা উচ্চ আঁশ কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধ করে পাইলসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী নারীদের প্রয়োজনে- কাঁঠালে থাকা পুষ্টি উপাদান গর্ভধারণ ও স্তন্যদানকালে বেশ উপকারি। এতে থাকা নায়াসিন গর্ভবতী নারীদের শক্তি বৃদ্ধি করে, হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা- কাঁঠালের কোন কিছুই ফেলনা নয়।কাঁঠাল বিচি ফেলে না দিয়ে মিহি গুঁড়ো করে মধু আর দুধের সাথে মিলিয়ে মাস্ক বানিয়ে মুখে দিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের বলিরেখা কমে যাবে।
অন্যান্য উপকারিতা- কাঁচা কাঁঠাল ও এর বিচিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার শ্বেতসার, আমিষ ও খনিজ পদার্থ। কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তরকারি রান্না করে আর এর শুকনো বিচি ভেজে বিকেলে চায়ের সাথে খাওয়া যায় আবার তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়।
তথ্য সূত্র : ইউর হেলদি পেজ