শুধু কিশোরী কেন, অনেক কিশোরও কি বয়সী মহিলার প্রতি ক্রাশ (!) খায় না? আর নায়িকাদের ভেবে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ফ্যান্টাসি করে না? অসম বয়সী কারো প্রতি প্রেমানুভব মানুষের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তবে এখানে কিশোরদের চেয়ে কিশোরীদের বাস্তবতাটা একটু ভিন্ন। এটা তো জানা কথা, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে একটু আগেই শারীরিক ও মানসিকভাবে ম্যাচিউর হয়। তাই মেয়েদের বিয়েশাদীর ব্যাপারটাও একটু আগেভাগে ঘটে।
মেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধিকাল পার করছে, ছেলেরা সে বয়সে নিছক “নাবালক”। কিশোরী মেয়ের মন যখন একজন সঙ্গীর অভাবে উচাটন, কিশোরেরা তখনো দলবেঁধে পাড়ায় আড্ডা দিয়ে বেড়ায়, ক্রিকেটে মন মজায়। ছেলেরা যেখানে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবার বাড়তি চাপে সকাল বিকাল বইয়ের ভার বইতে বইতে নাস্তানাবুদ, সেখানে বউয়ের ভার বইবার চিন্তা রীতিমত আত্মঘাতী।
ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঠেলায় কিশোরী মেয়েরা কায়মনে আচমকাই পাল্টাতে থাকে। আবেগের বাধভাঙা উচ্ছাসে তারা অকারণ হাসে, অকারণ কাঁদে। বলা নেই কওয়া নেই অভিমানে গাল ফুলিয়ে থাকে। বিষন্নতা ভর করে সময়ে অসময়ে, নিঃসঙ্গতায় ভোগে কখনো। কী কারণে এসব কাদন হাসি, মন খারাপের প্রহর সে নিজেও জানে না। সে চায় কেউ একজন তাকে বুঝুক, কেউ একজন তার ভরসা হোক। কেউ একজন তার সহমর্মী হোক। কিন্তু কিশোরীর চেয়ে ৫-৭ বছরের বড় যে খোকাবাবুটি আছে, সেও তখন বাপের হোটেলে খায় নতুবা চাকরির খোঁজে খোঁজে জুতার সুকতলা ক্ষয় করে ফেলেছে। তো কিশোরীরা কী আর সাধে বয়স্ক লোকের দিকে ঝোঁকে! ভরণ পোষণ বলেও তো একটা কথা আছে।
আবার দেখুন সমাজে কিছু বুড়ো হাবড়া আছে, ফুঁসলিয়ে কচি কচি মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করাই যেন তাদের প্যাশন। ইস্ট্রোজেনের চোটে কিশোরীদেরও এদের ফাঁদে পা দিতে দেরি হয় না। এ বয়সটা ওদের ভালোমন্দও বুঝতে দেয় না।
আসলে কিশোরী মেয়েরা কেন সমবয়সী ছেলেদের উপর কম ক্রাশ খায়? এর সামাজিক কারণ তো ইতিমধ্যে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন। মনস্তাত্ত্বিক কারণ কিছুটা বলা যাক। যৌবনের দুয়ারে কড়া নাড়া কিশোরী জৈবিক কারণেই সঙ্গীর অভাববোধ করতে পারে। সে তখন কোনো এক ছেলের অপেক্ষা করে, যে তাকে সুরক্ষা দিতে পারবে, তাকে বুঝবে; হবে তার ভরসাকেন্দ্র। এমনটা হতে হলে, সেই ছেলেকে কিশোরী মেয়েটির চেয়ে জ্ঞান-বুদ্ধি-অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকতে হবে। সমবয়সী কিশোরের জ্ঞান-বুদ্ধি-অভিজ্ঞতা তো তার সমপর্যায়ের। সে তাকে কী আর বুঝবে, প্রস্তাব করতেও তার হাত-পা কাঁপে। সে সমবয়সী তার কী কাজে দেবে! অতএব, মেয়েটি তখন বয়সী লোকের দিকে আকৃষ্ট হয়। সে স্কুল পালানো ছেলেদের মতো উচ্ছৃঙ্খল নয়, খোকাবাবুর মতো বাপের হোটেলেও খায় না আবার মাইনেও ভালো পায়। প্রেমিক প্রেমিক একটা ভাবও যে থাকে তার চোখেমুখে!
এই হলো আপনার অনেক কিশোরী মেয়ের বয়স্ক লোক পছন্দ করা। মেয়েদের মতিগতি বোঝেন তো? বয়ঃসন্ধির কেরামতি সবটা ধরে ফেলেছেন বলে গর্ব করবেন না। কত টিনএজ মেয়ে যে কত বখাটের সাথে পালিয়ে গেল। স্কুল ফাঁকি দিয়ে কত সহপাঠিনী যে সহপাঠীর হাত ধরে পার্কের কোনায় বসে মাতছে। কত মেয়ে জুনিয়রের সংসারের হাঁড়ি টানছে, তার ইয়ত্তা নাই। আসলে মশাই প্রেম ভালোবাসায় ছোটবড় বিচারের সেই দিনও আর নেই।