সুস্থ থাকতে ফলমূল ও শাক-সবজির জুড়ি নেই, এ তো আমরা সবাই জানি। নানারকম ফল ও শাক-সবজিতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ পদার্থসহ শরীরের প্রয়োজনীয় আরও নানা উপাদান।
আচ্ছা রঙভেদে কি ফল বা শাক-সবজির পুষ্টি উপাদান ভিন্ন হয়? অথবা এদের কার্যকরী ভূমিকায় কোনো তারতম্য? চলুন তাহলে জেনে নিই।
লাল
লাল ফল যেমন- তরমুজ, স্ট্রবেরি, চেরি, রেসবেরি, আপেল ও লাল আঙুর এবং শাক-সবজির মধ্যে লাল শাক, টমেটো, লাল মরিচ, লাল পেঁয়াজ ও লাল বাঁধাকপিতে রয়েছে লাইকোপেন, এলাজিক এসিড, কুয়ার্সটিন, হেসপেরিডিন, ফাইবার, ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি। এছাড়াও টমেটো থেকে তৈরি ক্যাচআপ, সালসা এবং স্প্যাগেডি সসেও রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান।
এসব লাল ফলমূল ও শাক-সবজি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রেখে সহজেই এড়াতে পারেন প্রোস্টেট ক্যান্সার, জরায়ু ও ফুসফুস ক্যান্সার। এছাড়া লাল রঙের ফলমূল টিউমার বড় হতে দেয় না, হৃদরোগ প্রতিরোধ করে, রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা দূর করে।
সবুজ
সবুজ রঙের ফল যেমন- কাওয়াই, অ্যাভোকাডো, পেয়ারা, সবুজ আঙুর, আপেল, কামরাঙা, লেবু, বরই, আমড়া, আমলকি, জলপাই, কাঁচা আম এবং শাক-সবজির মধ্যে পুঁইশাক, পালংশাক, লেটুসপাতা, পুদিনাপাতা, ব্রোকোলি, বাঁধাকপি, শতমূলী, শসা, কাঁচামরিচ, মটরশুঁটি ও অন্যান্য সবুজ শাক-সবজিতে রয়েছে নানারকম ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও উদ্ভিজ্জ পুষ্টি উপাদান। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে ক্লোরোফিল, ফাইবার, লিউটেইন, জিজানথিন, ক্যালসিয়াম, ফলেট, ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন।
নিয়মিত এসব সবুজ ফলমূল ও শাক-সবজি খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়, রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে, হজম ও অন্ত্রের ক্রিয়া সচল ও স্বাভাবিক থাকে। সবুজ শাক-সবজি শরীরকে বিষমুক্ত রাখে, ওজন কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক ও চুলকে সুন্দর রাখে।
হলুদ ও কমলা
হলুদ ও কমলা ফল যেমন- কমলা, মালটা, হলুদ আপেল, কলা, লেবু, জাম্বুরা, পাকা আম, পিচ, ফুট, কাঁঠাল, আনারস ও পেঁপে এবং সবজির মধ্যে গাজর, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, হলুদ ক্যাপসিকাম, হলুদ বিট ইত্যাদিতে রয়েছে জিজানথিন, ফ্লেভোনয়েড, লাইকোপেন, পটাশিয়াম ও ভিটামিন এ।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং হাড় সবল রাখতে এসব ফল ও সবজি খুব উপকারী। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ হওয়ায় এসব হলুদ ও কমলা রঙের খাবার রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও প্রোস্টেট ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের ঝুঁকি এড়াতেও ভালো কাজ করে। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে বলে সবল হাড় গঠনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
নীল ও বেগুনী
নীলচে বা বেগুনী রঙের ফল যেমন- ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, জাম, কালো আঙুর, কালো জলপাই, শুকনো বরই, বেগুনী ডুমুর ও আলুবোখারা এবং সবজির মধ্যে বেগুন, বাঁধাকপি, শতমূলী ও বেগুনী গাজরে রয়েছে লিউটেইন, জিজানথিন, রেসভেরাট্রল, ভিটামিন সি, ফাইবার, ফ্লেভোনয়েড, এলাজিক এসিড ও কুয়ার্সটিন।
এসব খাবার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমায়, শরীরকে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শুষে নিতে সাহায্য করে, রেটিনাকে সুস্থ রাখে, শরীরে ক্যান্সার সেলের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে আনে ও টিউমার বড় হতে দেয় না।
সাদা ও বাদামী
সাদা ও বাদামী ফল যেমন- কলা, খেজুর, বাদামী পেয়ারা, নাশপাতি, সফেদা এবং সবজির মধ্যে রসুন, আলু, ফুলকপি, মাশরুম, শালগম ইত্যাদিতে রয়েছে পটাশিয়াম, মিনারেল, ফাইবার, ভিটামিন এ, বি১, বি২, সি ও ই। এছাড়াও রয়েছে ফলিক এসিড, নিয়াসিন, কপার, ফসফরাস, কুয়ার্সটিন, প্লেভোনয়েড, ক্রোমিয়াম, ট্রিপটোফেন, সেলেনিয়াম ও প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
এসব উপাদান হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে যা পরবর্তীতে হরমোনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নানারকম ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও এসব খাবার শরীরে প্রয়োজনবোধে শ্বেত রক্তকণিকা ও বি সেল (অ্যান্টিবডি হিসেবে জীবাণু চিহ্নিত করে) সক্রিয় করতে সহায়তা করে।
তাহলে বন্ধুরা, আজ থেকে আপনার ডায়েট চার্টে রঙ-বেরঙের এসব ফলমূল আর শাক-সবজি থাকছে তো?
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট