‘জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায় না’-কেবল ছবির সংলাপ নয়। এটাই বাস্তব। একটি শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মায়েরও জন্ম হয়। শিশু যেমন বড় হতে থাকে, তেমনি বাবা-মা হয়ে ওঠেন তাঁরা, যাঁরা এতদিন ছিলেন সন্তান। ভালো বাবা-মা হতে গেলে অনেক কিছুই নতুন করে শিখে নিতে হয়, ঠেকে শেখা হয় বাকিটা। সন্তানদের কীভাবে আরো ভালো করে গড়ে তোলা যায়, নিজেরা কীভাবে ভালো বাবা-মা হয়ে ওঠা যায়, সেটার কিছু টিপস দেওয়া হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ায়।
১. সত্য কথাটাই বলুন
জীবন রূপকথার গল্প নেই। এখানে ভালোর সঙ্গে মন্দ আছে সমানতালে। শিশুদের শুধু ভালোটা নয়, মন্দের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিন। জীবনের রুঢ় দিকটা যত দ্রুত তাদের সামনে আসবে, ভালো মানুষ হয়ে উঠতে তাদের ততই সুবিধা হবে। মন্দকে স্বীকার করে বেড়ে ওঠাটাই সঠিক বেড়ে ওঠা। তাহলে ভালো-মন্দের ফারাক বুঝতে খুব একটা কষ্ট পোহাতে হবে না আর। খারাপ জিনিস সম্পর্কে শিশুদের অজ্ঞ রাখা নয় বরং তাদের বুঝিয়ে বলা এবং সেটা থেকে দূরে রাখাটাই ভালো বাবা-মায়ের কাজ। সন্তানদের শেখান কীভাবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কীভাবে জীবনের ডাকে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।
২. সন্তানের আচরণকে গুরুত্ব দিন
সন্তানের আচরণকে গুরুত্ব দিন, ঠিক জায়গায় ঠিকভাবে আচরণ করতে শেখান। তাকে ভালো কাজে উৎসাহিত করুন, প্রশংসা করুন সরাসরি। যেমন সে যদি কোনো ভালো কাজ করে, তাহলে ‘আইডিয়াটা চমৎকার ছিল’-এভাবে না বলে বলুন, ‘তোমার মাথায় তো অনেক বুদ্ধি!’ বাবা-মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানকে নিজের গুরুত্ব শেখানো, সে যে গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ সেটা তাকে বোঝানো, সেই আত্মবিশ্বাস তার ভেতরে তৈরি করে দেওয়া। জীবনে সাফল্য-ব্যর্থতা থাকবেই কিন্তু আত্মবিশ্বাস থাকলে সে যে কোনো পরিস্থিতি সহজে মোকাবিলা করতে পারবে।
৩. শাস্তি নয় শুধরে দিন
অতীতের ভুলের জন্য শাস্তি দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়। বরং তাকে শুধরে দিন যাতে ভবিষ্যতে সে আর ভুল না করে। ভুল করে অন্যায় করে থাকতে পারে সে, অথবা কারো প্ররোচনায় পড়ে। তাকে বোঝান ভুলটা কোথায় ছিল এবং এর ফলে কী ক্ষতি হয়েছে। ঠিকমতো বোঝালে সে পরেরবার থেকে ঠিকই সামলে নেবে নিজে থেকে। তাকে নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে পারেন, অন্যদের জীবনের উদাহরণও দিতে পারেন। সহজে যেন সে বুঝতে পারে এবং সামলে নিতে পারে সেভাবেই তাকে বোঝান।
৪. আত্মোপলব্ধি
সন্তানদের আত্মোপলব্ধির জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে বাবা-মাকে। সব সময় কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ সেটা বাবা-মা ঠিক করে দিতে পারবেন না। তাই সন্তানদের মধ্যেই এই সচেতনতা তৈরি করতে হবে যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জীবনের কোনো অভিজ্ঞতাই ফেলনা নয়। সন্তানদের বোঝান জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তাদের শিখে নিতে হবে।