গরমের দিনে নিজের যত্ন

60

এসেছে গরমের মওসুম। আমাদের দেশে গরমকাল খুবই অস্বস্তিকর একটা সময়। গরম, রোদের তাপ, ঘাম, ধুলা, দূষণ সব কিছু মিলিয়ে এই সময়ে প্রায় সবাই অস্থির থাকেন। ত্বকেরও ক্ষতি হয় বেশি। কারণ সূর্যের তাপ। তাই এ সময়ে ত্বকে আর্দ্রতা জোগানো খুবই জরুরি। কারণ আর্দ্রতা ত্বককে শীতল রাখতে সাহায্য করে। আবহাওয়ার প্রখরতা থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি স্বস্তিতে থাকার জন্য প্রয়োজন সঠিক জীবনচর্চা।

প্রচুর পানি পান করুন
গরমের মওসুমে ত্বক থেকে প্রচুর জলীয় অংশ বের হয়ে যায় ঘামের মধ্য দিয়ে। তাই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রচুর পানি পান করুন। পানি ছাড়াও ফল, ফলের রস, ডাবের পানি বা শরবতও পান করতে পারেন। এগুলো আপনার ত্বকে আর্দ্রতা জোগাবে এবং ত্বক রাখবে সতেজ, কোমল।

রোদ এড়িয়ে চুলুন
সম্ভব হলে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঘরের ভেতরে থাকার চেষ্টা করুন। কারণ এ সময় সূর্যের রশ্মি ত্বকের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। বাইরে বের হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সানস্ক্রিন ত্বকে লাগাবেন। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকতে হলে অবশ্যই টাচআপ করে নেবেন।

টোনার ব্যবহার করুন
ত্বক পরিষ্কারের পর অবশ্যই টোনার ব্যবহার করবেন। কেনা টোনার ছাড়াও গোলাপ পানি তুলায় নিয়েও টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। টোনার লোমকুপ সঙ্কুচিত হতে সাহায্য করে ও ত্বককে শীতল রাখে।

ওয়াটার প্রুফ ময়শ্চারাইজার
গরমের দিন হলেও ত্বকের ময়শ্চারাইজিং বন্ধ করবেন না। প্রতিদিন নিয়ম করে ত্বক ময়শ্চারাইজ করবেন। এতে ত্বকে আর্দ্রতা বজায় থাকবে। স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের ওয়াটারবেজ ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

দিনে দু’বার ত্বক পরিষ্কার করুন
প্রতিদিন অন্তত দু’বার ত্বক পরিষ্কার করবেন। এমনকি যদি আপনি বাইরে নাও বের হন, তবুও। রাতে ঘুমের আগে ত্বক পরিষ্কার করুন ও ময়শ্চারাইজিং করুন।

কোমল পানীয় বাদ দিন
অনেকেই গরমের কারণে বিভিন্ন কোমল পানীয়, কেনা জুস খেয়ে থাকেন। এগুলো বাদ দিতে হবে।

ত্বক শীতল রাখতে মাস্ক
ত্বক শীতল ও সজীব রাখার জন্য অর্ধেক শসা ব্লেন্ড করে তাতে এক টেবিল চামচ টকদই মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। গরমে আরাম পাবেন।
পেঁপে চটকে তার সাথে মধু ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন।
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে বেসন খুবই কার্যকর। বেসনের সাথে দই ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। এরপর ধুয়ে ফেলুন।
একটি বাটিতে দুই টেবিল চামচ কুচানো গোলাপের পাপড়ি নিন। এবার এর মধ্যে গরম পানি ঢেলে দিন। আধা ঘণ্টা পর এর সাথে এক কাপ আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে নিন। এই পানি ছেঁকে ফ্রিজে রেখে দিন। বাইরে থেকে ফিরে তুলোর সাহায্যে মুখে মেখে দিন। তরতাজা দেখাবে।
বাইরে থেকে ফিরে এক টুকরো বরফ সারা মুখে ঘষে নিন। চোখের জন্য ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা টি ব্যাগ, আলু বা শসার স্লাইস ব্যবহার করুন। আরাম পাবেন।

গরমে চুলের যত্ন
ত্বকের মতো গরমে চুলের জন্যও যত্নের প্রয়োজন। ঘাম, রোদ, ধুলোর কারণে চুল ভঙ্গুর ও নির্জীব হয়ে পড়ে। তাই নিয়মিত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করার পর চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নেবেন। যাদের চুলে রোদ বেশি লাগে, তারা রাতে কোনো ডিপ কন্ডিশনার বা জোজোবা অয়েল চুলের শুষ্ক অংশে ভালো করে লাগিয়ে কাপড় জড়িয়ে রাখুন। সকালে শ্যাম্পু করুন।
দিনের বেলায় বাইরে বের হলে ছাতা ও স্কার্ফ ব্যবহার করুন।

গরমে কী খাবেন
গরমের দিনে খাবারের দিকে নজর দেয়া খুবই জরুরি। কারণ বাড়িতেই হোক অথবা বাইরে, খাবারের প্রতি যত্নশীল হওয়া সুস্থ থাকার প্রথম শর্ত। এ সময়ে খাবারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তবে সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চললে গরমের সময়ও ঘরে-বাইরে আপনি থাকতে পারেন সুস্থ ও সজীব।
লবণ-চিনির শরবত শরীরের জন্য ভালো। তবে যাদের ডায়াবেটিস ও ব্লাডপ্রেসার আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।
স্যালাইন ওয়াটার প্রতিদিন এক প্যাকেট করে খেতে পারেন। কারণ এ সময় অনেকের শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যায়।
যারা বাইরে বের হন, তারা দুপুরের লাঞ্চে ফল, দই, ছানা, হালকা খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন। দইয়ের লাস্যি বা তাজা ফলের রস পান করতে পারেন।
খালি পেটে কখনোই বাইরে বের হবেন না, এতে সানস্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। সকালে নাশতা করুন পরিমিত। সকালের খাবার হচ্ছে ফ্রেশ ও ফিট থাকার পূর্বশর্ত। তেল-মসলাজাতীয় খাবার এ সময় এড়িয়ে চলুন।
গরমের সময় বেশি তেল-মসলা ও ঝাল দেয়া খাবারের বদলে টাটকা ও হালকা খাবার খান। যেমনÑ ভাত, পাতলা ডাল, মাছের ঝোল, চিকেন, সবজি।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খান।