গরমে ঘাম ও ঘামাচি

বাংলায় আমরা যাকে ঘামাচি বলি তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় Miliara। এটি একটি ঘর্মগ্রন্থির রোগ। ঘর্মগ্রন্থির নালী অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও গরমে বন্ধ হয়ে এ রোগের সৃষ্টি করে। এ রোগটি গ্রীষ্মকালে দেখা যায় এবং শীতকাল এলে আপনা-আপনিই ভালো হয়ে যায়। লিখেছেন ডা: দিদারুল আহসান

গ্রীষ্মকালে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম নিঃসরণ হতে থাকে। ফলে তখন এত বেশি পরিমাণ নিঃসরণ কেবল ঘর্মগ্রন্থিকে ছিদ্র পথে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ফলে ওই নিঃসরণ ঘর্মগ্রন্থিকে ফুটো করে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে এবং সে স্থান ফুলে ওঠে। সেই সাথে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি, সামান্য জ্বালাপোড়া ভাব ও ঘামাচি। ঘামাচি তিন ধরনের হয়। যেমন মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা। এই ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর মুখের অংশটি কালো দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ত্বক দেখতে প্রায় স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। সাধারণত এ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গই থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উজ্জ্বল পানির দানা স্বাভাবিক ত্বকের ওপর হতে দেখায় যায়। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ মিলিয়ারিয়া রুবরার ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর রুদ্ধতা দেখা যায়। ত্বকের বহিঃত্বকের মধ্যের ঘর্মনালীতে এবং এ ক্ষেত্রে ত্বকের ওপরে ছোট ছোট অসংখ্য গোটা দেখা যায়। যে গোটার মাথায় পানির দানা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে, যা লালচে ত্বকের ওপর হতে দেখা যাবে এবং সেই সাথে থাকবে প্রচণ্ড চুলকানি, যা মূলত শরীরের মূল অংশ ও ঘাড়ে বেশি হতে দেখা যায়।
তৃতীয়টি অর্থাৎMiliaria Profounda-এর ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর Block বা বদ্ধতা মূলত ত্বকের বহিঃত্বক ও অন্তঃত্বকের মিলনস্থানে দেখা দেয় অর্থাৎ ত্বকের অনেক গভীরে। কাজেই ত্বক দেখতে অনেকটা স্বাভাবিক ধরনের মনে হয় এবং এ ক্ষেত্রে এই দানা বা গোটা মূলত দেহের মূল অংশে এবং হাতে ও পায়ে হতে দেখা যায়। এই তিন ধরনের মধ্যে Miliaria Rubra সবচেয়ে বেশি হয়। এই রোগটি গরমকালে হয় বলে তাকে Heat Rash বলা হয়ে থাকে। গরম ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশি হয় এবং গরমকালে যারা গায়ে তেল মাখেন তাদের এ রোগ বেশি হয়। এ রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। চোখে দেখে চিকিৎসকেরা এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে Folliculiltis কিংবা ত্বকের CANDIDIASIS অথবা Contact Dematititis-এর মতন দেখতে মনে হয় বলে চিকিৎসকেরা Confusion-এ ভুগে থাকেন।

চিকিৎসা
মূল চিকিৎসা হলো গরম আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটিয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশে যেতে হবে। আর যদি অরৎ ঈড়ড়ষবৎ-এর ব্যবস্থা সম্ভব না হয় তাহলে সার্বক্ষণিক ফ্যানের নিচে থাকতে হবে, যেন ত্বকের সংস্পর্শে বাতাস খেলতে পারে। এ ছাড়া হাইড্রোকটির্সোন ১ শতাংশ ব্যবহার করলে ত্বকের চুলকানি কমে যায়। এ ছাড়া অহঃযরপধষ খড়ঃরড়হ অথবা ঈধষধসরহব খড়ঃরড়হ লাগিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায় এবং এর সাথে অহঃরযরংঃধসরহ ও ব্যবহার করা যায়।

অতিরিক্ত ঘাম
হাত ও পায়ের তালুসহ শরীর থেকে অল্প পরিমাণ ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক দৈহিক ক্রিয়া। কিন্তু সে যদি অধিক পরিমাণে হয় বা তা থেকে যদি দুর্গন্ধ নির্গত হয় তাকে বলা হয় ঐুঢ়বৎযুফৎড়ংরং। এটা খড়পধষরুবফ বা এবহবৎধষরুবফ অর্থাৎ সারা শরীরেও হতে পারে। লক্ষ করলে দেখবেন অনেকেরই শুধু হাত কিংবা হাত ও পা একত্রে অধিক পরিমাণে ঘামে এবং কখনো কখনো দুর্গন্ধও হয়। এই রোগ-শোক, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও আবেগতাড়িত ব্যক্তিদেরই বেশি হয়। এ ছাড়া ংঢ়রপু ঋড়ড়ফ, টমেটো, সচ, চকোলেট, চা-কফি এবং গরম সুপ খেলে অতিরিক্ত ঘর্ম হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কপালে, ওপরের ঠোঁটে, ঠোঁটের আশপাশে এমনকি বুকের মধ্যখানে অধিক মাত্রার ঘাম শুরু হতে দেখা যায়। খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ধরনের অতিরিক্ত ঘর্ম হওয়াকে বলা হয় এঁংঃধঃড়ৎু যুঢ়বৎ যুফৎড়ংরং।

চিকিৎসা
২০ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম কোরাইড টিংচার সপ্তাহে তিন বার প্লাস্টিক গ্লোবসের মাধ্যমে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঘুম ও দুশ্চিন্তানাশক ওষুধের সাথে চৎড়নধহঃযরহব ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঘর্মরোধ
ঘাম না হওয়াকেই ঘর্মরোধ বলা হয়। বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। যেমন জন্মগতভাবে যদি ঘর্মগ্রন্থি অনুপস্থিত থাকে কিংবা স্নায়ুতন্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অনুভূতি ক্ষমতা কমে যায়। অথবা কোনো বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহারে ধর্মগ্রন্থি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে, লোমকূপের মধ্যে অধিক পরিমাণে ময়লা জমলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে উরঢ়ৎড়াধঃব-গঋ মলম ব্যবহারের পাশাপাশি ঞধন. ইবঃহবষধহ ঙ.৫সম একটি করে দিনে তিনবার দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।

লেখক : চর্ম, এলার্জি ও যৌনরোগবিশেষজ্ঞ
গ্রিনলাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, গ্রিন রোড, ঢাকা।
ফোন : ০১৮১৯২১৮৩৭৮

Exit mobile version