গরমে জ্বালা-পোড়ার সমস্যা কমাতে ৬ খাবার

এই গরমে শরীরে নানা ধরনের জ্বালা-পোড়া বা প্রদাহের মতো সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় এগুলো স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হলে বা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে এ ধরনের সমস্যা থেকে স্থায়ী ব্যথা এবং অসুখ-বিসুখ হতে পারে। তবে সুখবর হলো, নির্দিষ্ট কিছু খাবার আপনার শরীরে এ রকম অনিয়ন্ত্রিত প্রদাহ বা জ্বালা-পোড়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। খাদ্যাভ্যাসে ছয়টি বিশেষ উপাদান যোগ করে সহজেই উপকার পাবেন। খাবারগুলো আপনার হাতের নাগালেই পাওয়া যায়।

১. মিষ্টি ফলমূল
গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে হরেক রকমের মিষ্টি ফল পাওয়া যায়। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি ফল মানুষের দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগ (যেমন: হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসার) প্রতিরোধে সাহায্য করে। জার্নাল অব নিউট্রিশন সাময়িকীতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রীষ্মকালীন ফলমূল খেলে শরীরে জ্বালা-পোড়া ও অসহনীয় প্রদাহের মাত্রা অনেকটাই কমে যায়।

২. বীজশস্য
মসুর, ছোলা, অন্যান্য ডাল ও মটরশুঁটির মতো বীজশস্যগুলো প্রোটিন এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন এক কাপ ডাল মানবদেহে প্রদাহের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমায় এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার উন্নতি করে। এসব খাবারের আরেকটি সুবিধাজনক দিক হলো, এগুলো সহজলভ্য এবং দামও কম। স্যুপ তৈরিতেও বিভিন্ন বীজশস্য ব্যবহার করতে পারেন।

৩. আম
আমে পুষ্টিকর উপাদানের পাশাপাশি রং ও স্বাদেও রয়েছে বহুবিধ বৈচিত্র্য। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই ফল মানবদেহে প্রদাহ মোকাবিলায় শক্তিশালী উপাদান হিসেবে কাজ করে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা যায়, আমের পলিফেনল নামে একটি জৈব উপাদান রয়েছে, যা স্তনে ক্যানসারজনিত এবং ক্যানসার-বহির্ভূত প্রদাহ দমন করতে পারে। আমে রয়েছে অন্তত ২০ রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। যেমন: ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-সিক্স, ফলিক অ্যাসিড ও পটাশিয়াম।

৪. আদা
বমি বমি ভাব এবং ব্যথা নিরাময়ে শত শত বছর ধরে আদা ব্যবহার করা হচ্ছে। আধুনিক গবেষণায় প্রদাহ দূর করতে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। মার্কিন এক গবেষণায় দেখা যায়, অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগীর শরীরের সন্ধিস্থলে ব্যথা ও কঠিনতা কমাতে বিকল্প ওষুধের (প্ল্যাসেবো) তুলনায় আদা ৪০ শতাংশ বেশি কার্যকর। চলমান একাধিক গবেষণায় স্নায়বিক প্রদাহ এবং সংশ্লিষ্ট কারণে স্মৃতি ও বোধশক্তির হ্রাস নিয়ন্ত্রণে আদার ভূমিকা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

৫. হলুদ
সোনালি রঙের এই মসলা যুগ যুগ ধরে ভারতীয় উপমহাদেশ এলাকার রসনায় এক অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী চীনা এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতেও হাজার হাজার বছর ধরে হলুদের ব্যবহার রয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, হলুদে কারকিউমিন নামের একটি যৌগ রয়েছে, যা মানবদেহে বিভিন্ন প্রদাহ দমনে সহায়তা করে। চিকিৎসা গবেষকেরা গেঁটে বাত ও সোরিয়াসিস (ত্বকের রোগ) থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরিতে হলুদ ব্যবহার করছেন।

৬. সবুজ শাক
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের জন্য সবুজ শাক অত্যন্ত কার্যকর। ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ এবং প্রদাহজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতেও সবুজ শাকসবজির জুড়ি নেই। পুষ্টিমানেও এসব খাবার অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সালাদের উপাদানে সবুজ শাকের পরিমাণ বেশি রাখুন।
খাদ্যাভ্যাসে ছোটখাটো এই পরিবর্তনগুলো আপনার সুস্থতা নিশ্চিত করার চেষ্টায় বড় সাফল্য এনে দিতে পারে। তাই দেরি না করে আজই শুরু করুন।
সূত্র: ওয়েবএমডি

Scroll to Top