চোঁখ ওঠাঃ করণীয় ও প্রতিকার

113

 চোঁখ ওঠা একটি স্পর্শকাতর রোগ। বছরের কোন এক ঋতুতে চোখ ওঠা রোগ প্রকট আকারে দেখা দেয়। আবার বন্যা পরবর্তী সময় এ রোগ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

চোখ ওঠাকে ডাক্তারী ভাষায় “ কনজাংটিভাইটিস ” বলে। অর্থাৎ কনজাংটিভাইবা নামক চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে চোখ ওঠা রোগ হয়। আমাদের চোখের মনির চারিদিকে সমস্ত চোখ জুড়ে এবং উভয় পাতির ভেতরের দিকে এই পাতলা পর্দা জড়িয়ে থাকে। যদি চোখের ঐ পাতলা পর্দায় ভাইরাস বা জীবানু দ্বারা আক্রান্তি কিংবা এলার্জির সমস্যা হয়, তবে পর্দাটি রক্তিম হয়ে যায়। তখন চোখ থেকে পানি ও সাদা সাদা ময়লা নির্গত হয়, চোখ দেখতে লাল দেখায়। একে চোখ ওঠা বলে।

 চোখ ওঠা রোগ দু’ধরনের হতে পারেঃ স্বল্প মেয়াদের ও দীর্ঘ মেয়াদের। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণত যে চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তা স্বল্প মেয়াদের চোখ ওঠা রোগ। চোখ জীবাণু কিংবা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ৩/৪ দিন পর উপসর্গ হিসেবে চোখ লাল হতে থাকে। অনেক সময় একটি চোখ ওঠার পর অন্য চোখটি আক্রান্ত হয়।

চোখ ওঠা রোগের লক্ষণঃ

              চোখ ওঠার সময় চোখ লাল হয়ে যাওয়া ছাড়াও পানি বের হওয়া, আলোতে দেখতে অসুবিধা, চোখের ভেতরে বালির কণা ঢুকেছে অনুভুত হওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দেখা যায়, চোখের দু’টি পাতা লেগে গেছে আঠার মতো এক জাতীয় পদার্থ দ্বারা- যাকে চোখের ময়লা বা কেতুর বলে। চোখ ফুলে যায়, অনেক সময় ব্যাথাও করে।
দীর্ঘ মেয়াদের চোখ ওঠা স্বল্প মেয়াদের চোখ ওঠার মতই। তবে দীর্ঘ মেয়াদের চোখ ওঠে যদি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেউ বাস করে। স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে বাস করলে, বায়ুতে ধুঁয়া ও ময়লা মিশ্রিত থাকলে, চোখের পাওয়ারের সমস্যা থাকলে এবং বাত বা গিটেবাত হলে, তখন দীর্ঘদিন চোখ লাল থাকে। এ সময় চোখে জ্বালাপোড়া, চুলকানো, ময়লা জমা, আলোতে দেখতে অসুবিধা ইত্যাদি সমস্যা হয়।
আবার এক প্রকার চোখ ওঠা আছে যা অ্যালার্জির জন্য হয়। চোখে কোনো জীবাণু বা ভাইরাস থাকে না। তেমনিভাবে টিবির জীবাণু ও গণোরিয়ার  জীবাণু দ্বারাও চোখ ওঠতে পারে।

যেভাবে এরোগ ছড়ায়ঃ

অনেকের ধারনা একজনের চোখ থেকে ভাইরাস কোন কিছুর মাধ্যমে অন্যজনের চোখে ছড়িয়ে থাকে। যেমন, কারো চোখ উঠলে, সে হাতের সাহায্যে চোখ কচলালে ভাইরাস বা জীবানুগুলো হাতে লেগে যায়। তখন রিকশা, সাইকেল, টেম্পু, বেবিট্যাক্সি, বাস ইত্যাদিতে ছড়িয়ে যায়। এভাবে দোকানে, অফিস- আদালতে কিংবা অন্য কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সময় ভাইরাসগুলো অন্য স্থানে ছড়ায়। তখন অন্য সুস্থ লোক স্পর্শ করার পর তার মাঝে হাত দ্বারা পরে চোখে ভাইরাস ও জীবাণুগুলো ছড়িয়ে থাকে। এভাবে তাদের চোখ ওঠার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।  কিন্তু ইসলাম বলে – সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। বরং আল্লাহ তা’য়ালা প্রথম ব্যক্তিকে যেভাবে রোগে আক্রান্ত করেন, পরবর্তীদেরকেও সেভাবেই রোগে আক্রান্ত করেন। এ রোগ একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে যায়নি, বরং মহান আল্লাহর হুকুমেই তা যে কারো কাছে যেয়ে থাকে। এ বিশ্বাস করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য।

চোখ ওঠার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাঃ

১) চোখের পানি বা ময়লা কেতুর মোছার জন্য নির্দিষ্ট ছোট তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
২) ঘুম থেকে উঠেই চোখ পরিস্কার করতে পানিতে ভাল করে ধুতে হবে, যাতে ময়লা লেগে না থাকে।
৩) ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিসেপটিক চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।
৪) ব্যথা হলে ব্যথার ঔষুধ (পেরাসিটামল) খেতে হবে।
৫) বেশী সমস্যা হচ্ছে মনে হলে, চক্ষুবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

চোখ ওঠার প্রতিকারে করণীয়ঃ

১) পরিছন্নতা অবলম্বন করতে হবে। এজন্য অপরিস্কার টাওয়েল, রুমাল ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
২)  চোখ ওঠা বাচ্চাদের আলাদা বিছানায় শোয়ানো ভাল। যাতে তাদের দ্বারা পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন না হয়।
৩) হাত না ধুয়ে যখন- তখন চোখ ঘষা বা চুলকানো যাবে না। এমনকি হাতও লাগানো যাবে না।
৪) চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব হলে ছেলে- মেয়েদেরকে শিক্ষাঙ্গন থেকে ফেরার পর পর গোসল করিয়ে দেয়া উত্তম। যারা বাইরে রিকশা- টেম্পুতে চলাফেরা করেন, তারা হাত না ধুয়ে চোখে হাত দেবেন না। অফিস- আদালতে কাজ কর্ম করার সময়ও নিয়মগুলো মনে রাখা উচিত।