অধিকাংশ স্ত্রীই অভিযোগ, বিয়ের পর স্বামীর ভালোবাসা আগের মতো নেই। তার রূপ পাল্টে গেছে। ইত্যাদি ইত্যাদি নানা অভিযোগ! আবার অনেক স্বামীও একই ধরনের অভিযোগ করেন। কিন্তু কেন এমনটা হয়? এই অভিযোগ্যর সত্যতাই বা কতটুকু? আসুন জানি এই লেখায়।
অক্সিটোসিন হরমোনটি গর্ভবতী মেয়েদের হরমোন হিসেবেই সবাই চেনে। অক্সিটোসিন এমন একটা হরমোন, যা সন্তান জন্মের সময় মায়ের শরীরে বেশি পরিমাণে তৈরি হয়। যেন জরায়ুতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়, ফলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হতে সুবিধা হয়।
কিন্তু আপনারা কি জানেন ছেলেদের অক্সিটোসিন হরমোন আছে কি-না? যারা খুব ভালো ডক্টর তারা জানেন একটা বিশেষ সময়ে নারীদের পাশাপাশি পুরুষের শরীরেও অক্সিটোসিন হরমোন অত্যন্ত বেশি পরিমাণে নিঃসরণ হয়। যখন স্বামী স্ত্রী পরস্পর আলিঙ্গন, চুম্বন ও যৌন ক্রিয়াকর্মে রত হয়। বিশেষ করে উভয়ের চরম পুলকের সময়। তখন উভয়ের শরীরে অক্সিটোসিনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। তাই একে ভালবাসার হরমোনও বলা যায়।
এই হরমোনের প্রভাবে ভালবাসার বন্ধন অটুট থাকে। ফলে তারা একে অপরকে ভালোবেসে ৫০ বছরও সংসার করতে পারে।
কিন্তু যৌবনের শুরুতে যখন ভালবাসার সংজ্ঞা থাকে ভিন্নরকম। প্রচণ্ড আবেগে কাছে ছুটে আসা, দূরে থাকার কারণে বিরহে কাঁদা, কবিতা লেখা- তখন কিন্তু এই হরমোন ক্রিয়াশীল থাকে না। তখন নরএপিনেফ্রিন, ডোপামিন ও সেরোটোনিন নামে অন্য তিনটি হরমোন ক্রিয়াশীল থাকে।
কিন্তু বিবাহের ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে নরএপিনেফ্রিন, ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে সে উদ্দাম ভালোবাসা আর থাকে না। মানুষ হা-হুতাশ করে, হায় কোথায় গেল সে দিনগুলো। এখন তো আর বর আগের মতো ফুল নিয়ে আসে না, নানা ধরনের এটা সেটা করে চমকে দেয় না!
আসলে এটা হচ্ছে নরএপিনেফ্রিন, ডোপামিন ও সেরোটোনিনের অভাব। কিন্তু তখন সে স্থান দখল করে নেয় অক্সিটোসিন। যদি তারা নিয়মিত স্পর্শ, চুম্বন ও যৌন মিলন করেন তখন স্বামী স্ত্রীর উভয়ের শরীরে প্রচুর পরিমাণে অক্সিটোসিন তৈরি হয়। ফলে একে অপরের প্রতি নির্ভরতা খুঁজে পায়।
বিয়ের প্রথম দিকের প্যাশন তখন পরিণত হয় অ্যাফেকশনে। তারা একজন অপরজনকে অনুভব করেন। সংসারের উন্নতির চেষ্টা করেন। স্বামী বাইরে কাজ করেন যাতে তার স্ত্রী সন্তান সুখে থাকে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে হাসিমুখে বাসায় ফেরেন। স্ত্রী তার সন্তানকে পরম মমতায় বুকের দুধ পান করান, বাচ্চা হিশু করলে হাত থাকে ফেলে দেন না। স্বামীর কাপড় ধুয়ে দেন, ভাত তরকারী রাঁধেন। স্বামীর বিছানায় অন্য কাউকে এলাউ করেন না। একজন অসুস্থ হলে আরেকজন রাত জাগেন।
এটাই হলো অক্সিটোসিন। আল্লাহ তায়ালার কুদরত। তিনি তার এক নেয়ামত প্যাশনকে বদলে অন্য আরেক নেয়ামত অ্যাফেকশনে পরিণত করেন। যদি প্রথমদিকের সেই উদ্দাম প্রেম চালু থাকত তাহলে সমাজে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতো। কেউ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারত না। এমনকি আবেগের বাড়াবাড়িতে সংসার পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যেত। বিয়ের দশ বছর পর ডোপামিনের অভাবে স্বামী হয়তো ফুল হাতে বাসায় ফেরে না, কিন্তু অক্সিটোসিনের আধিক্যে অন্য কিছু হাতে নিয়ে ফেরে। ফুলের বদলে ঘরে আসে টেবিল, এসি, রান্নার স্বাস্থ্যসম্মত উপাদান ইত্যাদি।
এজন্য বিয়ের পরপর স্ত্রীকে স্বামীর সংসারে তুলে দেয়া উচিত। অনেক মা-বাবা বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন থাকেন। নানা ধরনের সামাজিক আচার অনুষ্ঠান করার জন্য জন্য তুলে দেয়াকে বিলম্বিত করেন। অনেকে ক্যারিয়ার বা লেখাপড়ার জন্য সময় দিতে গিয়ে সংসারে সময় দিতে পারেন না। অনেকে প্রবাসে থাকেন। এতে সময় মতো নরএপিনেফ্রিন, ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা হ্রাস পেয়ে যায়, কিন্তু অক্সিটোসিন হরমোন বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ হয় না। ফলে দাম্পত্য সম্পর্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।