আপনি কি জানেন যে, প্রাণীর শব্দ আপনার সন্তানের প্রাথমিক স্পিচ বা বক্তৃতা ও ভাষার বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? বক্তৃতা বলতে শব্দের উত্পাদনকে বোঝায়, যা কথা বলার শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শব্দে রূপান্তরিত হয়। আর ভাষা বলতে যোগাযোগের জন্য শব্দ ও অঙ্গভঙ্গির ব্যবহারকে বোঝায়।
একটি গরুর ডাক থেকে একটি মশার গুঞ্জন পর্যন্ত, প্রাণীর শব্দগুলি ছোট বাচ্চাদের বক্তৃতা ও ভাষার দক্ষতা শেখা এবং অনুশীলন করার জন্য মজাদার ও আকর্ষণীয় উপায় হতে পারে।
শিশুরা ছয় মাস বয়সে তাদের ভাষাগত জ্ঞান বিকাশ শুরু করে। তাদের প্রথম শব্দগুলির মধ্যে প্রায়ই প্রাণীর শব্দ থাকে। পশুর শব্দ শিশুদের জ্ঞানীয় দক্ষতা বিকাশের জন্য একটি আকর্ষণীয় উপায়। সুতরাং, আপনি যদি আপনার সন্তানের বিকাশে সহায়তা করতে চান, তবে প্রাণীর শব্দকে অবহেলা করবেন না।
অন্যেদেরকে বোঝা ও নিজেকে প্রকাশ
বাচ্চাদের বক্তৃতা ও ভাষার দক্ষতা তাদের অন্যদেরকে বোঝা ও নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা গঠন করে।
শিশুদের মধ্যে বক্তৃতা ও ভাষার বিকাশকে উত্সাহিত করার অনেক উপায় থাকলেও একটি পদ্ধতি হলো প্রাণীর শব্দের মাধ্যমে। কথা বলতে দেরি করাসহ সব শিশুর মধ্যে যোগাযোগের দক্ষতা বিকাশের জন্য পশুর শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে।
এর কিছু কারণ: প্রাণীর শব্দ সহজ, পুনরাবৃত্তিমূলক এবং কখনও কখনও শিশুদের পরিবেশের একটি সাধারণ অংশ (যেমন পোষা প্রাণী বা বইয়ের মাধ্যমে)। ছোটবেলা থেকেই শিশুরা পশুর শব্দ চিনতে ও সাড়া দিতে সক্ষম হয়। এই শব্দগুলি বাচ্চাদের নতুন শব্দ এবং ধারণাগুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি অনন্য উপায়।
যেহেতু শিশুরা প্রাণী পছন্দ করে এবং তারা কীভাবে নড়াচড়া করে, শব্দ করে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাই তারা প্রাণীদের সাথে সম্পর্কিত শব্দগুলিতে আগ্রহী হতে পারে।
পশুর শব্দ অনুকরণ করা শিশুদের নতুন শব্দভাণ্ডার ও বক্তৃতা দক্ষতা শিখতে সাহায্য করতে পারে। এটি শিশুদেরকে মিনি, ঘেউ ইত্যাদির মতো সাধারণ শব্দ ব্যবহার করতে শিখতেও সাহায্য করতে পারে।
ভাষা-সমস্যা সনাক্ত করণ
উল্লিখিত কারণে, বাবা-মায়ের জন্য বাচ্চার প্রারম্ভিক বক্তৃতা-ভাষার বিকাশে প্রাণীর শব্দের তাৎপর্য বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর কোনো সমস্যা আছে কি-না, তা শনাক্ত করতে পিতামাতারা তাদের সন্তানদের বক্তৃতা ও ভাষার বিকাশ পর্যবেক্ষণ করতে এটাকে ব্যবহার করতে পারেন।
ছোট বয়সে তারা এগুলো বুঝতে না পারলে বা এ ধরনের শব্দ না করতে পারলে বাচ্চাদের ভাষার বিকাশে সমস্যা হচ্ছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।
বাচ্চাদের বক্তৃতা ও ভাষার সমস্যার কিছু লক্ষণ রয়েছে। দেরিতে কথা বলা, সীমিত শব্দভান্ডার, প্রশ্ন ও নির্দেশাবলি বুঝতে অসুবিধা, সহজ শব্দ ও শব্দের দুর্বল উচ্চারণ এবং দুই বছর বয়সের পরেও শব্দগুলিকে একত্রিত করে ছোট বাক্য বলতে না পারা ইত্যাদি।
যদি পিতামাতারা মনে করেন যে, তাদের সন্তানদের এই ক্ষেত্রের যে কোনো একটিতে অসুবিধা আছে, তবে তাদের কোনো বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
স্পিচ থেরাপিতে প্রাণীর শব্দ
যদি আপনার শিশুর বক্তৃতা বা ভাষায় অসুবিধা হয় বলে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে একজন স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজিস্ট তাকে নতুন শব্দ শেখানো এবং শব্দ শিখতে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে প্রাণীর শব্দ ব্যবহার করতে পারেন।
তারা শিশুদের বিভিন্ন প্রাণীর নাম ও বৈশিষ্ট্য শেখানোর জন্য প্রাণীর শব্দও ব্যবহার করতে পারেন। যা শিশুর শব্দভাণ্ডার ও প্রকৃতির জ্ঞানকে উন্নত করতে পারে।
স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজিস্টরা এমন গেমও খেলেন যা ছোট বাচ্চাদের শুনতে ও শব্দে মনোযোগ দিতে শিখতে সাহায্য করে। সেজন্য প্রাণীর শব্দকে ব্যবহার করেন না। গেম ও শারিরীক ক্রিয়াকলাপে প্রাণীর শব্দ অন্তর্ভুক্ত করা শিশুর জন্য অনুশীলনকে আরও মজাদার ও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
বাচ্চাদের সাথে খেলার সময় প্রাণীর শব্দ অন্তর্ভুক্ত করা
পিতামাতারা তাদের বাচ্চাদের বিভিন্ন উপায়ে পশুর শব্দ ব্যবহার করে বক্তৃতা ও ভাষার দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করতে পারেন। একটি উপায় হলো একসঙ্গে খেলা বা বই পড়ার সময় পশুর শব্দ করা।
উদাহরণস্বরূপ, খামারের প্রাণী সম্পর্কে একটি বই পড়ার সময়, আপনি আপনার সন্তানকে প্রাণীর সাথে শব্দের সংযোগ করতে সাহায্য করার জন্য একটি মোরগ বা ভেড়ার শব্দ করতে পারেন।
আরেকটি পদ্ধতি হলো পশুর শব্দ-ম্যাচিং গেম খেলা, যেখানে শিশুরা একটি প্রাণীর শব্দকে সংশ্লিষ্ট ছবির সাথে মেলাবে। বাচ্চাদের নতুন শব্দ শেখার জন্য এটি একটি মজার উপায় হতে পারে।
পিতামাতারা তাদের বাচ্চাদের প্রকৃতিতে হাঁটাতে বা চিড়িয়াখানায় নিয়ে যেতে পারেন আসল প্রাণীর শব্দ শুনতে, যা তাদের তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
বক্তৃতা, ভাষা উন্নয়নের ভিত্তি
প্রাণীদের শব্দগুলি শিশুদের বক্তৃতা ও ভাষা বিকাশের একটি সাধারণ অংশ বলে মনে হতে পারে। তবে শিশুদের শেখা ও বিকাশের জন্য একটি মজাদার ও আকর্ষণীয় উপায় হতে পারে৷
সুতরাং, পরের বার যখন আপনি আপনার সন্তানের সাথে খেলবেন, গরুর মতো হাম্বা ডাক ও গায়ে ঝাঁকুনি দিতে ভুলবেন না। ব্যাঙের মতো পাঁজর লাফ বা ঘোড়ার মতো শব্দ করতে ভুলবেন না। এটি আপনার সন্তানের শেখা ও বিকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় পার্থক্য আনতে পারে!