খাদ্যের ছয়টি উপাদান শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। আঁশজাতীয় খাবারগুলো কিন্তু এর কোনোটির মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত নয়। তবু খাটো করে দেখার উপায় নেই। সবকিছু বিবেচনায় এনে আঁশজাতীয় খাবারকে এখন খাদ্য উপাদান হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। একে বলা হয় ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবার। সাধারণভাবে এ খাবার আমাদের পরিপাকতন্ত্রে হজম হয় না। কারণ এগুলো হজম করতে আমাদের পরিপাকতন্ত্রে কোনো পাক রস বা এনজাইম নেই। আর হজম না হওয়ার জন্য ধারণা হতে পারে, এগুলো কি প্রয়োজনহীন? ঠিক তা নয়। খাবারের আঁশজাতীয় অংশটুকু হলো হজম না হওয়া শর্করার অংশ। এগুলো দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ না করলেও বিভিন্ন দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে, যা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য বড় শর্ত। খাদ্যের আঁশ অংশ হজম না হওয়ার কারণে পরিপাকতন্ত্রের বেশ কিছু জলীয় অংশ শোষণ করে ধরে রাখে। এ জলীয় অংশসহ এগুলো মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এতে মল নরম হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। আরামদায়ক মল ত্যাগের জন্য মলদ্বারের বেশকিছু ঝামেলামুক্ত রোগ প্রতিরোধ হয়। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ পাইলস বা অর্শ, ভগন্দর, পায়ুপথের ফোঁড়া ইত্যাদি। যারা বেশি পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের পরিপাকতন্ত্রের ক্যানসার, অ্যাপেনডিসাইটিস, ডাইভারটি-কুলাইটিস হওয়ার ঝুঁকি কম। নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য হারনিয়া হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আঁশযুক্ত খাবারের তা প্রতিরোধ সম্ভব।
খাবারের আঁশ পরিপাকনালি থেকে আমাদের খাবারের কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়। এতে রক্তে কোলেস্টেরলসহ চর্বির মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালির রোগ বা অ্যাথেরোসক্লেরোসিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। খাদ্য গ্রহণের পর আমাদের রক্তের গ্লুুকোজের মাত্রা যাতে হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে আঁশজাতীয় অংশ গুরুত্ব বহন করে। এতে ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমে। আবার যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের অনেক সময় রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে আঁশজাতীয় খাবার সেটির নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দেখা গেছে, যারা বেশি আঁশজাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের পিত্তথলির রোগ ও লিভারের রোগও কম হয়। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত মোটামুটি সব খাবারের মধ্যেই কমবেশি আঁশজাতীয় অংশ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেমি আছে শাকসবজিতে।
আঁশসমৃদ্ধ খাবার : কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমিশাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, লাউয়ের ও মিষ্টি কুমড়ার আগা-ডোগা শাকে প্রচুর আঁশ রয়েছে। অপেক্ষাকৃত বেশি আঁশযুক্ত সবজি হলো শজনে, কলার মোচা, ঢেঁড়স, ডাটা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, শিম, পটোল, কচু, বেগুন, বরবটি, মটরশুঁটি। বেল, পেয়ারা, কদবেল, আমড়া, আতাফল, নারকেল, কালোজামের মধ্যেও আঁশ আছে। এছাড়া গাব, কামরাঙা, পাকা টমেটো, পাকা আম, পাকা কাঁঠাল, আপেল ও আমলকীর মধ্যে মাঝারি পরিমাণে আঁশ থাকে। মটর, মুগ, ছোলা ও খেসারি ডালে ভালো আঁশ পাওয়া যায়। যব, ভুট্টা, আটা, তিল, কাঁচামরিচ ও সরিষাতেও আঁশ অংশ বিদ্যমান। গতানুগতিক আংশিক ভুল খাদ্যাভ্যাস সম্পূর্ণ শুদ্ধ খাদ্যাভাসে পরিণত করা সম্ভব। এতে আপনি থাকবেন সুস্থ। মনে হবে বেঁচে থাকা মানেই সুস্থতা। তাই আঁশযুক্ত খাবার রাখুন প্রতিদিনের খাবারের তালিকায়, পরিমাণে ও রান্নার ভিন্নতায়।
ডা. শাহজাদা সেলিম
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.