এই যুগে বাটপারি থেকে বাঁচার উপায় কী?

এই যুগে বাটপারি থেকে বাঁচার উপায় কী?

পৃথিবীতে যুগে যুগে বাটপারি ছিল, আছে, থাকবে। পুলিশ অফিসার হিসেবে আমাদের ট্রেনিং-এ এগুলো কিছুটা পাঠ্য ছিল ক্রিমিনোলজিতে, বাকিটা নিজে নিজে পড়ে নিয়েছি। যদিও এই স্ট্যাটাস দেয়াটা অর্থহীন কারণ ধরা খাবার আগে খুব কম মানুষই শেখে।

আরো বড় সত্য হচ্ছে, এই বাটপারদের বিশ্বাস করে জিএম খাওয়া ( জিএম এর এম দিয়ে হয় Death এর বাংলা প্রতিশব্দ, জি দিয়ে দেহের পশ্চাদ্দেশের বাংলা আঞ্চলিক শব্দ বোঝায়) লোকের অভাব মানব সমাজে কোনো দিন ছিল না, হবেও না।

প্রবাদই তো আছে- there is a sucker born every minute, প্রতি মিনিটে দুনিয়ার কোথাও কোনো না কোনো উল্লু কা পাঁঠা জন্ম নিচ্ছে।

বাটপারি থেকে বাঁচার উপায়

বাটপারি থেকে বাঁচতে, অভিজ্ঞতা থেকে মৌলিক কিছু সূত্র শিখিয়ে দিই-

এক. কোনো কিছু অবিশ্বাস্য রকমের লাভবান- এর মানে হচ্ছে ব্যাপারটা আসলে অবিশ্বাস্যই। অবিশ্বাস্য জিনিস বিশ্বাস করছেন মানে আপনি উল্লু হবার পথে সেধে সেধে হেঁটে যাচ্ছেন।

দুই. অপরিচিত লোকের কথা যত বেশি মিষ্টি ও মনোমুগ্ধকর, সে তত বেশি বাটপার হবার আশংকা।

তিন. যার ফাঁপর এবং শো-অফ যত বিশাল, সে তত বিশাল মাপের বাটপার।

চার. আপনার টাকা নিয়ে ব্যবসা করে স্বল্প সময়ে “বিশাল লাভে” মাসে মাসে আপনাকে ফেরত দেবে- NEVER going to happen.

এই জিনিস বেশি হয় সরকারী চাকুরিতে উঁচু পদে থেকে রিটায়ার করা বড় বড় মানুষদের সাথে। সারাজীবনের সঞ্চয় খুইয়ে পথে বসতে আমি নিজে দেখেছি অন্তত কয়েক ডজন। এরকম লোক যদি আপনার নিকটাত্মীয় হয়, আল্লাহর ওয়াস্তে তাকে নিবৃত্ত করুন।

পাঁচ. দুনিয়াতে লোক ঠকানোর নতুন কোনো উপায় নাই। মাধ্যম পাল্টায়, টেকনোলজি পাল্টায়, কিন্তু মূল পদ্ধতি পাল্টায় না। আপনি যদি নিজের ভেতরের লোভী এবং দুর্বল সত্তাটাকে না সামলান, রাস্তার নেড়িও আপনাকে দেখে পা তুলে জলবিয়োগ করে যাবে।

ছয়. বাটপারির হাত থেকে কেউই নিরাপদ না। আমেরিকার জেনারেল ইউলিসিস গ্রান্টের নাম শুনেছেন না? তাকে সর্বশান্ত করে ছেড়েছিল ফার্দিনান্ড ওয়ার্ড নামে এক বাটপার। এই বাটপারের নাতি আবার দারুণ মানুষ- দাদুর কুকীর্তি নিয়ে বই লিখেছে। বইটই তো পড়বেন না, কমেন্টে তাও দশটা বইয়ের একটা লিস্টের নাম দিলাম। এর মধ্যে “মাল্টিলেয়ার মার্কেটিং” এর বাপ পনজি স্কিমও আছে। ভাবছি বাংলাদেশের বাটপারদের নিয়ে আলাদা একখানা বই লিখলে মন্দ হবে না।

সাত. আমার চোখের সামনে আমার বডিগার্ডকে ইউনিফর্ম পরা অবস্থাতে টাকা ভাঙানোর কথা বলে নকল নোট গছিয়ে দিয়ে চলে গেছে, লজ্জায় কাউকে বলেনি। আপনি আর্মি পুলিশ যা-ই হোন, বাটপাররা আপনাকে ছাড় দেবে এটা ভুলে যান।

আট. হানিট্র‍্যাপ বা মধুর ফাঁদে ধরা পড়বে না এমন বাপের ব্যাটা জগতে নাই। আপনার out of the league কোনো সুন্দরী/সুদর্শন ব্যক্তি আপনার প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ দেখাচ্ছে মনে হলে বুঝবেন, ধরা খেতে যাচ্ছেন।টাইগারকে একটু সামলে সুমলে রাখুন, বিশেষ করে যদি ম্যারিড হন- সাবধান!

এই যুগে বাটপারি থেকে বাঁচার উপায় কী?
কোনো সুন্দরী/সুদর্শন ব্যক্তি আপনার প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ দেখাচ্ছে মনে হলে বুঝবেন, ধরা খেতে যাচ্ছেন।

বাটপারি থেকে বাঁচতে বোকাচোখা পদ্ধতি

সবশেষে, “বোকাচোখা” অ্যাক্রোনিমটা মনে রাখুন-

বো- বোঝাপড়া ভালোভাবে না করে, এক্সপার্টদের জিজ্ঞাসা না করে কোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেবেন না।

কা- কাউকে না জানিয়ে গোপনে কিছু করবেন না। আত্মীয়-স্বজনকে জানান, বুদ্ধি নিন।

চো- চোখ কান খোলা রাখুন, যে লোভ দেখাচ্ছে তার কথা অন্তত নিজস্ব দশটা আলাদা সোর্স থেকে যাচাই করুন।

খা– খাই-খাই স্বভাবটা বাদ দিন। শিমুল ভাই (বাংলাদেশের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং আমার অন্যতম সুহৃদ) আমাকে একটা পরামর্শ দিয়েছেন যেটা সমস্ত পারসোনাল ফাইনান্সের মূলকথা। “উপার্জনকে তিন ভাগ করে এক ভাগ ভাত কাপড়ের পেছনে, একভাগ বিপদের সঞ্চয়ে আর অবশিষ্ট এক ভাগ নিজের মতো খরচ করবেন।মরে গেলেও, আই রিপিট, মরে গেলেও প্রথম দুই ভাগে হাত দেবেন না, তা যত লোভই হোক না কেন”।

মাল্টি বিলিওনিয়ার আপনার না হলেও চলবে, মাথার উপরের ছাদটুকু যেন চলে না যায়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।

লেখাটা ভালো লাগলে শেয়ার দিন, মানুষকে উল্লু কা পাঁঠা হওয়া থেকে বাঁচান, নিজে বাঁচুন।

Scroll to Top