ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে বাচ্চাকে নিয়ম মানানো সম্ভব কি?

3
ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে বাচ্চাকে নিয়ম মানানো সম্ভব কি?

আগের লেখায়, আমি আপনাকে জানিয়েছিলাম যে গত ২৫ বা ৩০ বছরে প্যারেন্টিং কতটা বদলেছে…
এবং কেন আপনার বাবা-মায়ের ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো, যা আপনার ক্ষেত্রে কাজ করেছিল, তা আপনার সন্তানের জন্য কার্যকর নয়।
শেষে, আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, সন্তানের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি সঠিক নিয়ম-কানুন মেনে চলানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে কথা বলবো…
তাই আজ আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।
এখন, অনেক প্যারেন্টিং পদ্ধতি বাবা-মায়েদেরকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে:

  • আপনি হয় সন্তানের আচরণ উন্নতি করতে পারেন, কিন্তু এর ফলে সম্পর্কের ক্ষতি হয়…
  • অথবা আপনি সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিতে পারেন, কিন্তু এর ফলে সন্তানের আচরণ উন্নতির স্পষ্ট কোনো পথ থাকে না।

তবে, সুখবর হচ্ছে, তৃতীয় একটি পথ আছে – এমন একটি উপায় যেখানে আপনি দুটোর সেরা অংশ পেতে পারেন:
আপনার সন্তানের সাথে একটি ভালোবাসাময় সম্পর্ক এবং একই সাথে উন্নত আচরণ ও সহযোগিতা।

এবার আমি তিনটি পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করবো-

পরিস্থিতি # ১: নিয়ম-কানুন স্থাপন, কিন্তু সম্পর্কের ক্ষতি

ঐতিহ্যবাহী শৃঙ্খলা, যেমন- শাস্তি, বহু যুগ ধরে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের আচরণ সংশোধনের জন্য ব্যবহার করে আসছে।
এই ধরনের শৃঙ্খলা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে এসেছে।
এটি হয়তো আপনার বাবা-মা থেকে আপনার মধ্যে এসেছে।
যদি আপনি এখনও প্যারেন্টিংয়ের একটি ভিন্ন উপায় খুঁজে না পান, তবে হতাশ বা অসহায় অবস্থায় আপনি চিৎকার, হুমকি, টাইম আউট এবং অন্যান্য শাস্তির দিকে ঝুঁকবেন।

এখন, আমরা যদি অন্য প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে একইভাবে আচরণ করতাম তাহলে কী ঘটতো?
সর্বনিম্ন, তারা সম্পর্ক শেষ করে দিতো।

কিন্তু আমাদের সন্তানরা সেটা করতে পারে না। অন্তত যখন তারা ছোট এবং আমাদের উপর নির্ভরশীল থাকে তখন।
তারা আমাদের ভালবাসাও বন্ধ করে না।
বরং, তারা নিজেদেরকে ভালবাসা বন্ধ করে দেয়।
বহু গবেষণার তথ্য প্রমাণ করে যে, যারা মৌখিক বা শারীরিক শৃঙ্খলার শিকার হয়, তারা:

  • আত্মহত্যার চিন্তা করে বেশি;
  • আবেগগত কষ্টে বেশি ভোগে;
  • অ্যালকোহল এবং তামাকের ব্যবহার বাড়ায়;
  • আরও সহিংস আচরণ করে;
  • যৌন সহিংসতার প্রবণতা বাড়ায়।

এই নেতিবাচক প্রভাবগুলো দীর্ঘদিন শুধুমাত্র শারীরিক শাস্তির (যেমন পেটানো) সাথে যুক্ত ছিল।
কিন্তু এগুলো তখনও থাকে যখন শিশুদের মানসিকভাবে আহত করা হয়, যখন আমরা চিৎকার করি, হুমকি দিই, বা তাদের অপমান করি।
যে কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা হোক না কেন, আমাদের সন্তানের স্ব-মূল্যবোধ, নিরাপত্তা, এবং আত্মমর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফলে, আমরা শুধু তাদের সাথে সম্পর্কই নয়, বরং তাদের ভবিষ্যতও ক্ষতিগ্রস্ত করি।

পরিস্থিতি #২: ভালোবাসাময় সম্পর্ক, কিন্তু নিয়ম-কানুনের অভাব

ঠিক আছে, আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, আর কখনও চিৎকার, হুমকি, অপমান, বা শাস্তি দেবেন না।
এটি একটি সুন্দর প্রতিশ্রুতি এবং আমি পুরোপুরি আপনাকে সমর্থন করি!
কিন্তু যদি আপনি সতর্ক না হন, তবে আপনি স্লাইড করতে পারেন (যা আজকাল বলা হয়) পেরমিসিভ প্যারেন্টিং বা ‘জেন্টল প্যারেন্টিং’ পদ্ধতির দিকে।
এই পদ্ধতিগুলো বেশ ভালো, এবং এটি পুরোনো প্যারেন্টিং কৌশল থেকে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।
এ পদ্ধতি শাস্তি বা কঠোর শৃঙ্খলার উপর নির্ভর করে না।
আসলে, এসব পদ্ধতি কোনো শৃঙ্খলার উপরই নির্ভর করে না।
বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের মধ্যে উন্মুক্ত যোগাযোগ থাকে (যা দারুণ)…
কিন্তু নিয়ম-কানুন বা সীমাবদ্ধতা খুবই কম থাকে (যদি থাকে)।
আপনি হয়তো সন্তানের সাথে ঝামেলায় পড়ার ভয়ে শিথিলতা দেন, এবং সন্তানকে ঘুমের সময়, পড়াশোনা, খাওয়া, এবং স্ক্রিন টাইমে বেশি স্বাধীনতা দেন।

কিন্তু কোনো কাঠামো না থাকায়, এই শিশুদের স্বাধীন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
আরেকটি কারণ হলো যে, এই পদ্ধতিগুলোতে ‘ইনকনসিস্টেন্সি’ থাকে তথা ধারাবাহিকতা থাকে না।
যদি একদিন আপনি আপনার সন্তানকে একটি খেলনা না কিনে দেন, আর পরের দিন তাকে দিয়ে দেন (কারণ আপনি ধৈর্য হারাতে চান না…) তাহলে আপনার সন্তান শিখবে:

“আমি যদি আমার মা / বাবাকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারি, তাহলে আমি যা চাই তা পাব।”

এভাবে, এই পদ্ধতিতে সামঞ্জস্য, দৃঢ়তা, বা সহানুভূতির অভাব থাকে এবং এটি শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পরিস্থিতি #৩: ভালোবাসাময় সম্পর্ক এবং উন্নত আচরণ ও সহযোগিতা

এখানে আপনি উভয়ের সেরা অংশটি পেতে পারেন।
আপনার সন্তানদের সাথে ভালোবাসাময় এবং যত্নশীল সম্পর্ক গড়ে তুলুন, আর তাদের খারাপ আচরণ সীমাবদ্ধ রাখুন সম্মানের সাথে।
আপনার সন্তানদের অনন্য ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান, এবং তারা আপনাকে সেই শ্রদ্ধা ফিরিয়ে দেবে।
আপনার সন্তান যখন রাগ করছে বা বিরোধিতা করছে, তখন আপনি তাদের জানাবেন যে তাদের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় (এবং কেন)।
আর আপনি জানেন ঠিক কী করতে হবে যখন তারা সীমা অতিক্রম করে বা খারাপ আচরণ করে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: ‘সংযোগ’

যখন আপনার সন্তান চিৎকার করছে, কামড়াচ্ছে বা আঘাত করছে, তখন সংযোগের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

আমি চাই আপনি দুটো পরিস্থিতির সেরা অংশটি পান – যাতে তৃতীয় পরিস্থিতি আপনার বাস্তবতা হয়ে ওঠে।
সুতরাং, আমি আগামী দিনগুলোতে এই বিষয়ে আরও লিখবো।