ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম
মাঝে-মাঝে আমরা ডাক্তাররা রোগীদের অনেক ক্ষেত্রে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলি। আমি এ সমস্যাটির নাম দিয়েছি ‘ডক্টরস ইনডিউসড সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম’। আর এ ধরনের রোগীদের মাঝে মধ্যে পেয়ে থাকি। গতকালের কথা। মা নিয়ে এসেছেন তার ছেলেকে। চুলপড়া সমস্যা। ঢাকা শহরে নামী-দামী চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ একজনও বাদ যায়নি। সর্বশেষ গিয়েছিলেন একটা লেজার সেন্টারে। সেখানে চিকিত্সা চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা লেজার ইত্যাদি বাবদ ইতিমধ্যে ৬/৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আমি তরুণটির সাথে কথা বলতে বলতে একটা প্রেসক্রিপশন লিখে ফেললাম। সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের যেভাবে বলি সেভাবেই বললাম চুলপড়ার কোন ম্যাজিক চিকিত্সা নেই। ডাক্তারের সব ধরনের চেষ্টা এবং দামী দামী ওষুধ, লেজার ব্যবহারের পরও বেশিরভাগ রোগীর আশানুরূপ ফল মেলে না।
তরুণটি বললো, আপনি যে সব ওষুধ দিয়েছেন তা আমি বিগত তিন বছর ধরে ব্যবহার করছি এবং এই তিন বছরে ডজন খানেক চিকিত্সক বদল করেছি। কোন লাভ তো হয়নি বরং চুলপড়া আরও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনিতো সেই পুরানো ওষুধই দিলেন। আমি এতো সব শুনতে চাই না। তিন মাসের মধ্যে চুল গজানো দেখতে চাই। আমার কথায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে তরুণটি বেশ খানিকটা রাগান্বিত হয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে গেল। এ ধরনের সমস্যাকেই আমি ডক্টরস ইনডিউসড সাইকোলজিক্যাল সমস্যা বলে থাকি। অর্থাৎ এই তরুণটিকে আমরা যদি শুরু থেকে বুঝাতে পারতাম চুলপড়া কোন রোগ নয় বরং চুলপড়া সমস্যার কোন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়ে চিকিত্সা করা সম্ভব নয়। তাহলে তরুণটি এতো ক্ষিপ্ত হতো না। এটা আমার বিশ্বাস। আমি বলার চেষ্টা করি অনেক ক্ষেত্রে চুল গজায়। রোগী খুশি হয়। আবার শতকরা ৩০/৪০ ভাগ ক্ষেত্রে সব ধরনের চিকিত্সা সত্ত্বেও রোগীর সমস্যার সমাধান হয় না। আমরা রোগীকে যথেষ্ট সময় দিয়ে কাউন্সিলিং করতে পারলে চিকিত্সা করতে না পারলেও অন্তত রোগীকে খানিকটা স্বস্তি দিতে পারি।
যাই হোক গতকালের তরুণটি চুলের চিকিত্সা করতে করতে এতোটাই ফ্রাস্ট্রেটেড যে তাকে অনেকক্ষণ ধরে সত্ভাবে যথেষ্ট ভালো করে বুঝাবার চেষ্টা করেও কোন লাভ হলো না। সে আমাদের মতো ডাক্তারদের সম্পর্কে এতোটাই নেতিবাচক যে আমার কোন উপদেশ ও সরল বাক্য সে বিশ্বাস করলোই না। চেম্বার থেকে বের হবার সময় বললো কোন ডাক্তারকেই আর বিশ্বাস করি না। মা তুমি ডাক্তারের ভিজিট দিয়ে চলে আসো।
আমি মনে করি আমরা যদি প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে মমত্ববোধ দিয়ে বুঝাতে পারতাম তাহলে চিকিত্সায় হতাশাগ্রস্ত তরুণরা সাহস পেতো। ডাক্তারদের প্রতি আস্থাশীল হতো। কিন্তু আমাদের অনেকের কারণে তরুণরা ডাক্তারদের ওপর থেকে অনেক ক্ষেত্রে আস্থা হারিয়ে ফেলছে। আমাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত। তাহলেই একদিন রোগীদের আস্থা ফিরতে শুরু করবে। অবশ্য অনেক ভালো চিকিত্সক আছেন। যাদের প্রতি রোগীদের নিশ্চয়ই আস্থা আছে।
লেখক : চুলপড়া, এলার্জি, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ