বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলন বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতার সংগ্রাম থেকে শুরু করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন পর্যন্ত, দেশের ছাত্রসমাজ বারবার জাতির সংকটকালে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্র আন্দোলনও তেমনই একটি ঘটনা, যা দেশের রাজনীতিতে একটি বড়সড় পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদী শাসনামলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নিয়ে যতই প্রশংসা করা হোক না কেন, সেই শাসনকালে একচেটিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার, বিরোধী দল দমনের কৌশল, এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করার অভিযোগে বিতর্কিত হয়। বিরোধী দলগুলো দমনের পাশাপাশি মিডিয়ার কণ্ঠরোধ এবং বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে, ছাত্র আন্দোলন জনগণের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
ছাত্রদের এই আন্দোলনকে কোনো সাধারণ বিদ্রোহ হিসেবে দেখা ভুল হবে। এটি মূলত সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের জন্য একটি সংগ্রাম। তরুণ সমাজের এই দাবিগুলো প্রমাণ করে যে, দেশের যুবসমাজ একটি অধিকতর স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা কামনা করে। তাদের এই আন্দোলন শুধু রাজনীতিকেই নয়, সমাজকেও নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।
শেখ হাসিনার পতনকে অনেকে একটি যুগের অবসান হিসেবে দেখছেন। তবে এটি কি শুধুই একটি রাজনৈতিক পালাবদল, নাকি একটি নতুন যুগের সূচনা? এটি এখনও প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসন এবং সমাজের কাঠামোতে পরিবর্তনের দাবি এখন আরও জোরালো হয়েছে।
এখন আমাদের উচিত এই পরিবর্তনের স্রোতে নিজেকে সামিল করা, তবে তা যেন হয় শান্তিপূর্ণ ও সংলাপের মাধ্যমে। ছাত্র আন্দোলনের দ্বারা উত্থাপিত প্রশ্নগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা, এবং একটি অধিকতর সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশ গঠনের দিকে এগিয়ে যাওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব।
তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকার, রাজনীতিবিদ এবং জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কেননা, একটি স্থিতিশীল, উন্নত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই আমাদের ভবিষ্যৎ। এই আন্দোলন সেই ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে নবায়ন করেছে।