শেখ আসিফ এস. মিজান:::::
দেশে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’ এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। প্রাইভেট সেক্টরে উচ্চশিক্ষা সেবায় নবদিগন্ত সৃষ্টিকারী বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১৮ সালে পা রাখল ২২তম বছরে।
বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক ও গবেষক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. আবুল হাসান এম সাদেক সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ, অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তুলেছেন। যার অন্যতম উদ্দেশ্য আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে দেশ ও জাতি গঠনে অবদান রাখা।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবান্ধব টিউশন ফি, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও পরিবেশ নজর কেড়েছে দেশবাসীর। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় পনের হাজার। প্রতিবছর চার হাজারের মতো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে কর্মজীবনে প্রবেশ করছে।
আধুনিক শিক্ষার সাথে সাথে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া ও চর্চা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এখানে আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়। ফলে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী বেকার নেই। মূলত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ায় মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রফেসর ড. আবুল হাসান এম সাদেক ১৯৯৬ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশাল মহীরূহ রূপ লাভ করেছে। ঢাকার অদূরে আশুলিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু রোডে প্রায় ২০০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। গত ১০ ডিসেম্বর এই স্থায়ী ক্যাম্পাসেই অনুষ্ঠিত হলো ৬ষ্ঠ সমাবর্তন। নিজস্ব ক্যাম্পাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্ছ্বসিত। আধুনিক নির্মাণশৈলীতে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন। প্রায় ২০০ কোটি টাকার মেগা পরিকল্পনা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হলে তা সকলেরই দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হবে। ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী অভ্যাগতরা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের সার্বিক অবস্থা অবলোকন করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশংসা করে বলেন, “শিক্ষা সম্প্রসারণের সাথে সাথে মান সমুন্নত রাখার মাধ্যমেই কেবল যোগ্য গ্রাজুয়েট তৈরি করা সম্ভব। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে সেই কাজটি করে চলেছে। সেজন্য এর প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। এইউবি শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তাদের মাঝে দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ, সংরক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণসহ জঙ্গীবাদমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ বজায় রেখে চলেছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমার অভিনন্দন।”
৬ষ্ঠ সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, “এইউবি ব্যবসায়িক মনোভাব নয়, মূল্যবোধ ও নৈতিক মানবিকতাসম্পন্ন মানুষ গড়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে শিক্ষা লাভ করে শিক্ষার্থীরা স্বার্থপরতাকে বাদ দিয়ে সবার জন্য ও মানবতার জন্য কাজ করছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অতীতে আমার সম্পৃক্ততা ছিল এবং সেই সুবাদে এশিয়ান পরিবারের সাথে আমার একটি পারিবারিক ও আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মানসম্মত ও নৈতিকতাসমৃদ্ধ শিক্ষা দান করে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু থাকা অধিকাংশ বিভাগের বাজার চাহিদা না থাকলেও তা কর্তৃপক্ষ চালু করেছে মানবতার কল্যাণের জন্য।”
এইউবি’র প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক বলেন, “জীবনের স্বপ্ন বিনির্মাণ এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং নিরলস প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আজকে তোমরা যে ডিগ্রি অর্জন করলে এবং এর মাধ্যমে কর্মজীবনে আরো যে অর্জন তোমরা করবে তা শুধু তোমাদের ব্যক্তি জীবনের জন্যই নয় বরং পরিবার, সমাজ, জাতি ও মানব কল্যাণের জন্য বিলিয়ে দিবে।”
সনদপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য ঘোষণা করে তিনি বলেন, “আমাদের পথ চলায় আশা করি আমরা তোমাদেরকে সব সময় পাশে পাব। ”
অন্য এক অনুষ্ঠানে এইউবি সম্পর্কে প্রাক্তন বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, “শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের অন্যতম প্রধান উপায় বুদ্ধিভিত্তিক কাজের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রাখা। ডিবেটিং শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিভিত্তিক অনুশীলনের একটি কার্যক্রম মাধ্যম বলে আমি মনে করি। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ডিবেটিং ক্লাবকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন।”
ভিন্ন এক অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় বলেন, “এশিয়ান ইউনিভার্সিটি আমার পরিবারের মতো, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সাথে আছি, সবসময় থাকব।”
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এমন এক ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। এখানে ধনী-গরীব সব ধরনের শিক্ষার্থীর শিক্ষা গ্রহণের এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে কর্তৃপক্ষ। মেধাবী গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ দিয়ে সমাজকে আলোকিত করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য- নৈতিকতা ও মানবতার সমন্বয়ে এমন শিক্ষা প্রদান করা, যা জাতির পরিচয়ের বাহক কৃষ্টি, সভ্যতা ও আদর্শের পরিপূরক।
বিশ্ববিদ্যালয়টি এই কারণেই সিলেবাসের বাইরেও নৈতিক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বর্তমান নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে। যাতে যুবসমাজকে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনা হওয়ার পাশাপাশি আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো উন্নতমানের শিক্ষার মাধ্যমে এমন মানবসম্পদ তৈরি, যারা পেশাগতভাবে দক্ষ ও নৈতিকতায় উন্নত এবং দেহমনে সুস্থ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি অনন্য এই জন্য যে, এখানে বাংলা বিভাগসহ কলা অনুষদের ৪টি সাবজেক্ট এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগসহ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৫টিসহ মোট ১৩টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে মার্কেট বিবেচনায় বিভাগ খুলছে সেখানে এইউবি কর্তৃপক্ষ দেশ-জাতির স্বার্থের কথা বিবেচনায় এসব বিভাগে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন।
শুধু তাই নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। মনোরম নিরিবিলি পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত বিশাল ক্যাম্পাসে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন ও শারীরিক বিকাশে খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও ডিবেটিংসহ বিভিন্ন কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে অংশ নেয়ার অফুরন্ত সুযোগ। আধুনিক জ্ঞানচর্চার জন্য এখানে রয়েছে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি। যেখানে বিশ্বের নামকরা লেখকদের বই, খ্যাতনামা জার্নাল ও গবেষণাগ্রন্থ রয়েছে। এখানে একটি সমৃদ্ধ গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে- যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী গবেষণাকর্মের মাধ্যমে জাতির উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি ভবিষ্যতে বিশ্বের নামকরা গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
একথা স্পষ্ট যে, বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আলোকিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে এইউবি এগিয়ে যাচ্ছে।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
E-mail: asifsmizan@gmail.com