এই নির্মম শিক্ষা আমার প্রয়োজন ছিল

ফেইসবুকের মাধ্যমে জানলাম- আমি নাকি ১৮৬১টি ভোট পেয়েছি। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আমাকে উত্তম শিক্ষা প্রদানের জন্য। আর ঢাকাবাসীকে ধন্যবাদ আমাকে উচিত জবাব দেয়ার জন্য।

আমার মনে হচ্ছে- যেসব বিষয় নিয়ে আমি এক ধরনের সন্তুষ্টি কিংবা আত্মতৃপ্তিতে ভুগছিলাম সেই সব বিষয়ে আমার অন্ত:দৃষ্টি খুলে গিয়েছে। আগামীতে আমি আরো সতর্ক হবো এবং আরো বিনয়ী হয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবো।

আমার ফেইসবুকে, বন্ধু, অনুসরণকারী এবং সমর্থকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। যাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ২/৩ বছরের। সারা দেশে আমার পাঠকের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। অন্যদিকে টকশোর দর্শকের সংখ্যা কয়েক কোটি। রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে গিয়ে এত্তোসব মানুষের আবেগ উচ্ছাসের বাড়াবাড়ি দেখে আমার মনে হতো- আমি হয়তো কিছু একটা হয়ে গেছি। ১৮৬১টি ভোট প্রাপ্তির পর মনে হচ্ছে – আমি হয়তো যাত্রাদলের নটরাজ বা নটিরানী।

শেয়ার মার্কেটের পুঁজি হারানো দশ লাখ পরিবারের জন্য আমার অশ্রু বিসর্জন, নিজ দলের লোকদের সঙ্গে শত্রুতা, জেল খাটা এবং তারপর অভিমান করে দল ও দলীয় মনোনয়ন থেকে নিজেকে দূরে রাখার উত্তম প্রতিদান এবং সমুচিত জবাবও আমি পেয়ে গেছি।

বিভিন্ন সময়ে মজলুম ব্যক্তি বা পরিবারের পক্ষে সাহস নিয়ে দাঁড়ানো, তাদের পক্ষে কথা বলা- কলম ধরার মূল্যও আমি পেয়েছি। আমার মঞ্চটি ব্যবহার করে হেফাজতে ইসলাম, তাবলীগ জামাত, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলের পক্ষে যে সত্য কথা নির্ভয়ে উচ্চারণ করেছি তার মূল্যায়নও আমি পেয়েছি।

বিএনপির দুর্দিনে বেগম জিয়া, তারেক রহমানও কোকো সম্পর্কে যে সত্য কথা বলেছি এবং লিখেছি তার জবাব ঢাকাবাসী জিয়ার সৈনিকগণ আমাকে দিয়েছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এবং শেখ কামাল সম্পর্কে ইতিহাসের অজানা অথচ মূল্যবান তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে তাদেরকে মর্যাদার আসনে বসানোর প্রচেষ্টার ফলাফলও এই ভোটের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে।

আমার মনে হয় সিটি নির্বাচনে আল্লাহ উত্তম ফয়সালা দিয়েছেন। নেতা আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত হয়। জনগণের স্বভাব চরিত্র, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, অভ্যাস এবং আশা-আকাঙ্খা সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়কে নেতা উপহার দেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের কর্মের ফল। আর আমাদের খালেদা জিয়া আমাদের দু’হাতের কামাই। তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ উচ্চারণ করার নৈতিক শক্তি এদেশের কারুর নেই। দেশের সকল বিশৃঙ্খলা, হত্যা, গুম, জেল, জুলুম হুলিয়া -সবই আমাদের দুই হাতের কামাই।

আল্লাহর কোনো দোষ নেই। আল্লাহ যদি তার ঐশী ক্ষমতায় সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং জনগণকে স্বাধীনভাবে ভোট দেবার সুযোগ দিতেন তবে কারা নির্বাচিত হতেন? তারা কি বর্তমানের জোর জবরদস্তিতে হয়ে যাওয়া আদম সন্তানদের তুলনায় উত্তম হতেন নাকি অধম? অতীতকে খোঁজ করুন- সব পেয়ে যাবেন। কাজেই এবারের ভোট জালিয়াতিকে আমি বলবো বেদাতে হাসানা।

এবার নিজের কথা কিছু বলি। ৫টি বছর এমপি ছিলাম। উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দেশ জাতির জন্য কাজ করেছি। আমার এলাকায় স্থাপন করেছি এশিয়ার বৃহত্তম বীজ বর্ধন খামার। যার কারণে আগামী ২০ বছরে দেশের খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এটি আমার ব্রেইন চাইল্ড। আজকে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে এটিও এই অধম বান্দার মস্তিস্কের ফসল। সারা জীবন ভালো ছাত্র ছিলাম। জীবনের বহুক্ষেত্রে হাজারো সফলতা, সুনাম এবং কৃতিত্বের কারণে আমার মাঝে মধ্যে ভয় হতো যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে কি জবাব দিব যদি আল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন তোমাকে তো নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়েছিলাম – সেই গুণাবলী নিয়ে কেন জনতার মাঝে যাওনি। সিটি নির্বাচনের পর আমার অন্তর থেকে সেই দায় চলে গেছে। এখন আমি আল্লাহকে বলতে পারবো-
ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার বান্দাদের নিকট গিয়েছিলাম। ১৮ লাখ ৭০ হাজার বান্দা-বান্দীর মধ্যে ১৮৬১ জন আমায় সমর্থন দিয়েছেন। আমার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে । তোমার মসজিদে গমনকারী নামাজী এবং দাড়ি টুপিধারীরা আমায় যোগ্য মনে করেনি। তোমার তরুণ-তরুণী বান্দা-বান্দীরা সাড়া দেয়নি। তুমি যাদেরকে কলমের মাধ্যমে শিক্ষিত করেছ, তারা তাদের চেয়ে কম শিক্ষিতজনকে তাদের অভিভাবক মনোনীত করেছে। হে আল্লাহ তুমি আমায় ক্ষমা কর এবং একজন সাধারণ বান্দা হিসেবে সাধারণ কর্ম করে তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের তওফিক দাও।

(লেখাটি লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া)

Exit mobile version