রাজনীতি

এই সময়ে আপনার কাজ

বাংলাদেশের সব লোক বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত, বাম বা ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতি করে না। তাই সবাই এদের কর্মসূচিতে যাবে না। প্রত্যেক দল বা গোষ্ঠীর কর্মসূচিতে যাবে মূলত তাদের নেতাকর্মীরা।
ধরেন আমার কথা। আমার কোনো নিজস্ব দল নাই। তাই রাজনীতি নিয়া নানা কথা বললেও কারো কর্মসূচিতে যাই না। আর এই না যাওয়াটাই আমার কাজ। একইভাবে আপনারা যারা আসলে কোনো দল করেন না তাদেরও কাজ হলো কারো কর্মসূচিতে না যাওয়া।

আমার এমন কথা শুনে লোকজন বলবে এ কেমন সুবিধাবাদী কথা! সারা দিন দেশ গেল দেশ গেল বলে কারো সভাসমিতিতে না যাওয়ার কথা বলি কিভাবে।
এরকম যারা ভাবেন তাদের জন্যই এ লেখা। দেখুন আপনি কোনো দল না করলে তাদের কর্মসূচিতে যাওয়াটা হবে অকাজ। এর আরেকটা মানে হলো আপনি নিজের কাজটা করছেন না। আপনার কাজের বিষয়ে একটু পরে আসছি।

তার আগের কথা হলো, আপনি যেসব দল করেন না, তাদের কর্মসূচিতে গেল হতাশ হবেন, লোকসান করবেন। কারণ প্রত্যেক গোষ্ঠীর নিজস্ব এজেন্ডা আছে। সে অনুযায়ী তারা আন্দোলন করে এবং থেমে যায়। ফলে আপনি যখন তাদের সঙ্গে বিপ্লব করতে যাবেন তখন মূলত হতাশই হবেন।

আমার লেখালেখির দুইটা কাজ। একটা হলো- নানা দলগোষ্ঠীর লোকদেরকে তাদের দল সম্পর্কে ক্রিটিকাল চিন্তা করতে শেখানো, যাতে তারা সেখানে আমার চিন্তা নিয়া কাজ করতে পারে। দ্বিতীয় কাজ হলো- যারা কোনো দল করেন না তাদেরকে আমার সঙ্গে কাজ করার উপযুক্ত করা।

এখন আমি জানি না আপনি কোন গ্রুপে পড়ছেন। তবে যে গ্রুপেই থাকেন না কেন আপনি নিজের কাজ বিষয়ে আমার থেকে শিখতে পারেন।

তবে দু’ কথা যদি শিখেও থাকেন, তাহলে আবার মনে করবেন না যে, আপনি আমার শিষ্য বা ভক্ত। আমি শিষ্যত্ব দেই না। আমি মূলত কমরেড বা সহযোদ্ধার সম্পর্ক তৈরি করি।

যাই হোক, আপনার কাজ হলো আমার কাছ থেকে শেখা। সেটি হলো- আপনার কাজ কী।
দেখুন প্রত্যেক দল ও গোষ্ঠীর যেমন একটা টার্গেট আছে, তেমনি প্রতিটা জাতিরও একটা টার্গেট থাকে। কোনো দল হয়তো জাতির টার্গেট পূরণের জন্য কাজ করে। আবার কোনো দল হয়তো নিজের টার্গেট নিয়ে থাকে যা জাতির টার্গেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা একটা কোটারি স্বার্থ তৈরি করে জাতির আপদ হয়ে দাড়ায়।

আমি লোকজনকে যেই জিনিশটা বলি, বাংলাদেশের সকল ধারার দল মূলতঃ আমাদের জাতির আকাঙ্খা ও টার্গেটের বিপরীতে ক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থ নিয়ে পড়ে আছে। এটা বিএনপি জামায়াত হেফাজত বাম সবার বেলায় সত্য। এরা সব তৎপরতা চালায় নিজেদের ফায়দা লুটতে। তবে তারা কিছু অবদানও রাখছে যা জাতির জন্য উপকারী হলেও জাতীয় আকাঙ্খার জন্য তা যথেষ্ট নয়।

এদের ভূমিকার একটা ত্রুটি দেখবেন জাতীয় সঙ্কটের বিষয়ে কী করবে না করবে তার কোনো দিশা তারা খুঁজে পায় না।

এই যে বিএনপি জামায়াত বা হেফাজত হঠাৎ মাঠে আসে, আবার হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়, এর কারণ হলো- তারা নিজস্ব স্বার্থের বাইরে কী করণীয় তা জানে না।

এ কারণে দেখবেন, জাতীয় সঙ্কট যখন সার্বভৌমত্বের, তখন বিএনপির দাবি হলো- তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, জামায়াতের হলো- নেতাদের ফাঁসি ঠেকানো, আর হেফাজত নাস্তিকদের ফাঁসি।

এখন দেখেন, ইস্যু হলো শুধু মোদি, আর্গুমেন্ট হলো সে গুজরাটের কসাই, সাম্প্রদায়িক লোক। এই এতটুকু ইস্যু হওয়ার কারণ হলো একেক দলের স্বার্থ এতটুকুই। সবকিছু মিলিয়ে কথা বলা কারো দরকার নাই।
ফলে দেখবেন অনেক রক্ত ঝরিয়েও এরা থেমে যাচ্ছে। সামনে যাইতে পারছে না।

আপনার প্রথম কাজ হলো এদের সীমাবদ্ধতাটা দেখে এটি তালাশ করা যে আসলে মূল সঙ্কট কী। আমাদের আসল লড়াইটা কী। তার চ্যালেঞ্জগুেলো কী, আর এতে যেসব বাধা আছে তা কেমনে উত্তোরণ করবেন।

আপনি আসলে কখনোই সঙ্কট বুঝবেন না, যদি না আমাদের জাতির বাসনা সম্পর্কে না জানেন। আপনি নিজেকে জিগান জানেন কি না। জবাবটা হলো জানেন না। কেন জানেন না তাও আপনি আসলে জানেন না।

আপনারা এসব বিষয়ে আলাপ করুন, তারপর নিজেকে রেডি করেন। জাতি ও আপনার স্বপ্ন তখন মিলে যাবে। তখন দারুণভাবে কাজ করতে পারবেন।

Scroll to Top