‘ক্যাম্পাস কাউকে ক্ষমা করে না’

০১. ক্যাম্পাসের পুরো ছয় বছর (এক বছর সেশন জট) বেশ দাপটের সাথে দল করেছে বন্ধুটি। এমনকি ছাত্রদলের কোনো বন্ধু বিপদে পড়লে তাকে হেল্পও করেছে। বন্ধুটি বলতো, “রাজনীতি একটা সংস্কৃতি। আর সংস্কৃতি চর্চার ব্যাপার।”
যাইহোক, একদিন সেন্ট্রাল লাইব্রেরির মসজিদে বন্ধুটি আজান দিলো। চা খেতে গিয়ে দেখি মাথায় টুপি। কয়েকদিন নামাজের ইকামত দিলো। পরে আমি হাসতে হাসতে টিপ্পনি কাটলাম, “বন্ধু, কী খবর? রাজাকারের খাতায় নাম লেখাইছো নাকি?”
আমার হাত ধরে বন্ধুটি বললো, “কবি, বসো। চা খাই।” কথায় কথায় বন্ধুকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলাম। হঠাৎ দেখি চোখ মুছছে। বলে, “বন্ধু, ক্যাম্পাসে যত পাপ করেছি। সব পাপ সুদ-আসলে ফিরে আসছে। তার শাস্তি পাচ্ছি। ছয়-সাত বছর কুত্তার মতো খেটে প্রাইমারিতেও হলো না। কত দিন বাড়ি যাই না। বাবা-মাকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারি না!”
আমি আর কথা বাড়ালাম না। বললাম, চলো। ভেতরে যাই। হাঁটতে হাঁটতে লাইব্রেরির সিঁড়িতে। সিঁড়ি টপকে রিডিং রুমে ঢোকার সময় পিঠে একটা মোছা দিয়ে বললো, “বন্ধু, ক্যাম্পাস কাউকে ক্ষমা করে না! মনে রেখো!! সিরিয়াসলি!!!”

০২. হলের বড় নেতা ছিল। পরে পদ পায়নি। পদ পেতেআন্দোলন করেছে। অনশন করেছে। বন্ধুকে দেখতে গেছি। অনশন ভাঙতে বলেছি। শরীরের যত্ন নিতে বলেছি। মনে হলো, এতেই আমি ক্যাম্পাসের সাধারণ বন্ধু থেকে তার পরম বন্ধু হয়ে গেছি। লাইব্রেরিতে টানা সাত বছর ‘কুত্তার মতো খেটে’ ১৩ গ্রেডের একটা চাকরিও শিকেয় জোটাতে না পেরে বিদেশ চলে গেছে বন্ধু আমার। আমাদের বন্ধু। এখনো কথা হলেই বলে, “জীবনের সবচে বড় ভুল ক্যাম্পাসের পাপ।” এই পাপের অর্থ, ব্যাখ্যা সবাই বোঝেন। ভালো করেই জানেন।
এখানে মাত্র দুটি বাস্তব ঘটনা বললাম। এমন ঘটনা শত শত। ক্যাম্পাসের প্রত্যেক সাধারণ শিক্ষার্থীর চির পরিচিত এসব ঘটনা। এসব করুণ চিত্র।
সবকিছুতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছে। এমন ঘটনাও আছে। আত্মহত্যার আগে চিরকুট লিখেছে, “ক্যাম্পাস কাউকে ক্ষমা করে না!”

০৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেকশন অফিসার, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি, ঠিকাদারিসহ দল করা ২-৪% বন্ধু মোটামুটি ভালো আছে। মোটামুটি থাকা সবাই প্রথম সারির নেতা। দ্বিতীয় সারি থেকে শেষ সারির খবর কী? সবাই জানি। নতুন করে বলে কষ্ট দিতে চাই না।

আজকে যারা ক্যাম্পাসে ‘পাপ’ করছেন। তারা প্রস্তুত হন। প্রকৃতির চরম প্রতিশোধ মাথা পেতে নিতে হবে। আপনার মতো আমার বন্ধুরাও অস্ত্র হাতে বিন্দাজ চিল করেছিল। চিল করেছিল মা-বোন সমতুল্য ছাত্রীদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে।

১৫. ০৭. ২০২৪ খ্রি.

Exit mobile version