নতুন বছরের ভাবনা

নতুন বছরের ভাবনা

খুবই জনপ্রিয় একটি কবিতা “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।” কবি যেখানে পূর্ণিমার চাঁদ নিয়ে কবিতা লেখেন তখন একজন ক্ষুধার্ত মানুষ ভাবে যে, চাঁদ যদি একটা রুটি হোত তাহলে সে তা খেয়ে জীবন বাঁচাতে পারত।
কথাটা বললাম বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে।
একজন সাংবাদিক গ্রামের একজন খেটে খাওয়া মানুষকে প্রশ্ন করছে- আপানার ২০২৪ সাল কেমন কাটলো ? সে জবাবে বললো আমরা সাধারন খেটে যাওয়া মানুষ। পরিশ্রম করে কোন মতে খাবার সংগ্রহ করে জীবন বাঁচাই। রাজনীতি, বিপ্লব এগুলো কিছুই বুঝিনা শুধু বুঝি জীবন বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম।
কবি নজরুলের ভাষায়: “ক্ষুধার্ত শিশু চায়না স্বরাজ, চায় দুটি ভাত একটু নুন।”
বিদায় নিল ২০২৪ সাল। অনেক ঘটনাবহুল এ ২০২৪ বিশেষভাবে জুলাই-আগষ্ঠের বিপ্লবের পর অনেকের ভাষায় নতুন স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই নতুন প্রেক্ষাপটে আমরা সবাই সংস্কার চাচ্ছি। কিন্তু সংস্কার কোথা থেকে শুরু হবে, এর রূপরেখা কি সেটা কি আমাদের কাছে পরিষ্কার? যাই হোক যে বিষয়টা দিয়ে কথা শুরু করেছি সেটা হলো দারিদ্রতা। সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ দারিদ্র দুরিকরন।
আল্লাহ মানুষকে যেমন খাওয়ার জন্য একটি মুখ, দিয়েছেন তেমনি কাজ করার জন্য ২ টি হাত, হাঁটার জন্য দুটি পা, দেখার জন্য চোখ, সর্বোপরি চিন্তা ভাবনার জন্য একটি মস্তিষ্ক দিয়েছেন। আমাদের এই সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে কাছে লাগালে যে product আমরা পাবো তা এক মুখ দিয়ে খেয়ে শেষ করার কথা নয়। বিশেষভাবে যে দেশে আমরা জন্মেছি সেটা সুজলা-সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ। এখানের মাটি উর্বর, আবহাওয়া বিভিন্ন মৌসুমে ফসল ফলানোর উপযোগী।
তাহলে আমরা কেন দরিদ্র? পর্যালোচনা করলে হয়ত অনেক কথা বলা যাবে, কিন্তু মোটা দাগে যে কথাগুলো আমি বলতে চাই তা হলোঃ
-আমরা অলস। পরিশ্রম করতে চাইনা।
– বুদ্ধিকে ভাল কাজে না লাগিয়ে অন্যের ক্ষতি, কারো সমালোচনা, ইত্যাদি খারাপ কাজে ব‍্যায় করি।
– কি করে অন্যকে ঠকিয়ে নিজে লাভবান হতে পারি তার চেষ্টায় লিপ্ত থাকি।
– দেশপ্রেমের, উদার চিন্তার কোন শিক্ষা আমরা পাইনি, জবারদিহীতার কোন অনুভূতি ( না আল্লাহর কাছে, না মানুষের কাছে) আমাদের নেই। বরং “নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকীর খাতায় শূন্য থাক” এই মন মানসিকতার কারণে ভোগ বিলাস, আনন্দ স্ফুর্তিতে সময় অতিবাহিত করতে অভ্যস্ত হই।
এভাবে অনেক দুর্বলতা আমাদের আছে। এই দুর্বলতাগুলোকে সামনে রেখে স্বার্থানেষী মহল দীর্ঘদিন সিন্দাবাদের ভূতের মত আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে শাসন করেছে। জাতি যাতে করে সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে, সঠিক চিন্তার উপযুক্ত না হতে পারে সেজন্য তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। তারা জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংস করেছে। বিচার ব্যাবস্থা ধ্বংস করেছে। সর্বোপরি মানুষের নৈতিকতা ধ্বংস করেছে। এগুলোর ফিরিস্তি অনেক লম্বা।
আমহামদুলিল্লাহ এ থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের যে নৈতিকতা ধ্বংস হয়েছে তা মেরামত কি ভাবে করবো? সংস্কার কোথা থেকে শুরু করবো? এটাই আমাদের ভাবতে হবে। যদি আমরা সঠিকভাবে এ পথ বের করতে না পারি তাহলে আজ সচিবালয়ে আগুন লাগবে, কাল অমুক বিদ্রোহ, পরশু আরেক সমস্যা লেগেই থাকবে। আর সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়বে।
মানুষ ভাবেই জন্মগত ভাবেই অসৎ প্রবন নয়। আল্লাহ পাক বলেন:
“শপথ মানবের (মানব সত্তার ) আর তাঁর, যিনি তাকে যথাযথভাবে গঠন করেছেন। তারপর তার মধ্যে ইলহাম করেছেন ফজুর (সীমালঙ্ঘনের প্রবনতা) এবং অফওয়া (সীমার মধ্যে অবস্থানের প্রবনতা)। (সুরা আশ শামস: ৭-৮)
মানুষের এই ভালো আর খারাপের অনুভূতি জন্মগত। একজন চোর জানে চুরি করা খারাপ একজন মিথ্যাবদীও নিজেকে মিথ্যাবাদী উপাধী পছন্দ করবে না। কিন্তু তবুও মানুষ খারাপ কাজ করে। মানুষ যখন জন্মগ্রহণ করে তখন সে থাকে নিষ্পাপ। শিশু বয়সেও সে সত্য কথা বলে। এরপর যে পরিবেশে সে বড় হয় সেভাবেই সে নিজে তৈরি হয়।
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠন প্রকৃতিতে । তারপর তাকে আমরা পৌছে দিই নীচদের চাইতেও নিচুতে।” ( সুরা আত তীন: ৪-৫)
সুন্দর গঠন অবয়বের মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত কত নীচে নামতে পারে তো আমরা প্রতি নিয়ত দেখছি। বলা হয়েছে তারা পশু বা তার চাইতেও অধম। এ অবস্থা থেকে বাঁচার উপায়ও আল্লাহ জানিয়েছেন সুরা আত তীন এর ৬ নং আয়াতে আর তা হোল ইমান আনা ও আমলে সলেহ করা। সবশেষে আল্লাহ প্রশ্ন ছুড়ে দেন-
” আল্লাহ কি সব বিচারকের বড় বিচারক নন?”
(সুরা আত্ তীন-৮)
আল্লাহ বিচার করবেন। দুনিয়াতেও আখেরাতেও আর যার যার কর্মফল সে পাবে।
এ সোনার দেশের মানুষকে সোনার মানুষে পরিনত করার দায়িত্ব আমাদের। মানুষ গড়ার এ কাজই সংস্কারের ১ম ধাপ। এ ধাপে কাজ করার জন্য আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ডাক দিয়েছেন দারিদ্র দূরীকরণের জন্য। নিজের শক্তিকে কাছে লাগিয়ে নিজেই উদ্যোক্তা হতে হবে। দূর করতে হবে দারিদ্রের অভিশাপ। সাথে সাথে রাসূল (স) এর দেখানো পথে মানুষের, নৈতিকতা সংশোধনের কাজ করে যেতে হবে।
সময় খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ বিদায় নিয়েছে ২০২৫ ও শেষ হবে। আমাদের অবস্থান কোথায় সময় শেষ হওয়ার আগেই তা নিরুপন করতে হবে। যা আল্লাহ পাক আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন –
“সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই নিশ্চিত ক্ষতির মধ্যে রয়েছে (সূরা আসর ১-২)
সময় চলে যাওয়া মানে শেষ হওয়া। এটা ক্ষতি, কিন্তু এটাকে লাভে পরিণত করতে তারাই পরে যাদের মধ্যে রয়েছে নিম্নলিখিত গুণাবলী-
” যারা ঈমান এনেছে আমলে সালেহ করেছে একে অপরকে হকের দিকে ডাকে সবরের সাথে অটল থাকে।
( সূরা আসর ২-৩)
২০২৫ সালের এই সময়টাকে আমরা লাভজনকভাবে দেশ মেরামতের কাজে নিয়োজিত থাকবো এটাই হোক প্রধান এবং প্রথম পদক্ষেপ।
৩ জানুয়ারি ২০২৫ ইং

Leave a Comment Cancel Reply

Exit mobile version