এক. দল হিসেবে খেলা
বিশ্বকাপেই আমরা পরিবর্তনটা লক্ষ্য করেছিলাম। বাংলাদেশ এখন একজন-দুজন নির্ভর নয়। খেলছে দল হিসেবে। তামিম-সাকিব-মুশফিক-তিনজনই বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়। আমাদের প্রত্যাশা থাকে, এ তিনজন জ্বলে উঠলেই জিততে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন দৃশ্যপটে বদল এসেছে। তিনজন-নির্ভর দল নয় বাংলাদেশ। এগারোজন খেলোয়াড়ই এখন মাঠে নামে জ্বলে ওঠার প্রত্যাশায়। নিজের দায়িত্ব পালনে সবাই প্রস্তুত থাকে। সবাই মনে করে, জ্বলে ওঠার এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। বিশ্বকাপে দেখুন, উল্লিখিত তিনের বাইরে নিয়মিত জ্বলে উঠেছে মাহমুদউল্লাহ। নতুনের মধ্যে সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার। সাব্বির অনেক কষ্টে করে দলে সুযোগ পেয়েছে। সেই সুযোগ সে কাজে লাগিয়েছে। মোদ্দা কথা, বাংলাদেশ এখন খেলছে দল হিসেবে।
দুই. আত্মবিশ্বাস
এখন বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস ও শারীরী ভাষা অন্যরকম। আত্মবিশ্বাস বলতে, আগে খেলোয়াড়েরা ভাবত, হারলেও লড়াই করব। আর এখন লড়াই কেবলই জয়ের জন্য। লড়াই করেও সব সময় ফল নিজেদের পক্ষে আসে না। তবে এখন আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভালো ক্রিকেট খেলায় জয়টা আমাদের পক্ষে আসছে। আগে এ দৃশ্যটা বিরল ছিল।
তিন. নিয়ন্ত্রিত বোলিং
বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ অনেক নিয়ন্ত্রিত। আগে বাংলাদেশ দল স্পিন-নির্ভর ছিল। এ কৌশলে এসেছে পরিবর্তন। এখন পেসাররা গতিময়, নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করছে। রুবেল হোসেনের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন দেখতে পারছি। সে এখন অনেক পরিণত। চাপের মধ্যেও কোথায় বল করতে হবে, ভালো জানে। তার সঙ্গে রয়েছে তাসকিন আহমেদ। আগে তাসকিনের মতো বোলার বাংলাদেশ খুব একটা পেত না। বিশ্বকাপে দ্রুত গতিতে বল করেছে। এমসিজিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাকে ১৪৬ কিলোমিটার বেগে বল করতে দেখেছি। সে বেশ পরিণত হয়ে উঠছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিং ছিল সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রিত। কীভাবে? অন্য দলের তুলনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে কম ওয়াইড-নো বল করেছে।
চার. ‘মি. ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক
ভীষণ ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। টেকনিকে সবচেয়ে এগিয়ে। আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। চাপ কমাতে ওয়ানডে অধিনায়ক থেকে তাঁকে ‘বিশ্রাম’ দেওয়াটা দারুণ সিদ্ধান্ত বিসিবি ও নির্বাচকদের। তাঁকে এখন অনেক নির্ভার মনে হচ্ছে। নিজের মতো করে ব্যাটিং করতে পারছে। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং দারুণ উপভোগ করছে।
পাঁচ. মাশরাফির অধিনায়কত্ব
অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজার জুড়ি মেলা ভার। অধিনায়কের দায়িত্ব কেবল ভালো খেলা বা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া নয়; সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সবাইকে এক বিন্দুতে মেলানো। সবার ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনা। সে সব খেলোয়াড়কে সম্মান করে, সমান গুরুত্ব দেয়। একইভাবে খেলোয়াড়েরাও মাশরাফিকে ভীষণ সম্মান করে। অধিনায়কের নির্দেশ-পরামর্শ পালনে সবাই সচেষ্ট থাকে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে হুট করে ভালো পারফর্ম করেনি, ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সেটিই বোঝাল এ সিরিজে। পাকিস্তানকে দুর্বল দল ভাবা ভুল। তারা সবচেয়ে আনপ্রেডিক্টেবল দল। তাদের সম্পর্কে আগ থেকে কিছুই অনুমান করা যায় না। হয়তো এ দলের ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে। তবে তাদের বোলিং লাইন-আপ বিশ্বের অন্যতম সেরা। গত দুই ম্যাচে বোলিং-ব্যাটিং-ফিল্ডিং কোনো বিভাগেই পাকিস্তানকে দাঁড়াতে দেয়নি বাংলাদেশ! এমন দাপট আগে কখনো দেখিনি। এ পারফরম্যান্সে শীর্ষ দলগুলোর প্রতি বাংলাদেশ বার্তা, সতর্ক থেকো তোমরা! পুরো ব্যাপারটাই একই সঙ্গে উৎসাহব্যাঞ্জক দেশের উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য।
সূত্রঃপ্রথমআলো