সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা

১৭ জুন (২০১৫) জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। তিনি বলেছেন, সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। উপরন্তু তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সাধারণ কোটা বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা নেই। কোটা পদ্ধতি যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্লাটফর্ম থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবি জানানো হচ্ছে। এমনকি কোটা পদ্ধতি পুনর্বিন্যাসের আবেদনও জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি লিখেছে; রাজপথে মানববন্ধন করেছে এবং সংবাদপত্রে কলাম লিখে আবেদন-নিবেদন জানিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সরকারের দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তিকে প্রতিক্রিয়া জানাতেও দেখিনি। বাস্তবতা এ রকম, যারা আইন তৈরি করেন অর্থাৎ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করেন তারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচন করতে পারেন, তাদের বয়সের কোনো বাধা নেই অথচ আমাদের তরুণ ছাত্রসমাজকে ত্রিশের পর সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করে হতাশার অন্ধকারে ফেলে দেওয়া হয়। অন্যান্য দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার তথ্য-প্রমাণ এবং আমাদের দেশের শিক্ষাজীবনের বাস্তবতা বিবেচনায় আনলে ৩০ থেকে ৩৫-এ বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার যৌক্তিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। উল্লেখ্য, ৩৫ বছর বয়সি একজন ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব এবং অন্যান্য দেশের সরকারি চাকরির বৈশিষ্ট্য স্মরণে রেখেই এই নিবন্ধ লেখা হয়েছে।
উন্নত বিশ্ব তাদের জনগণকে মানবসম্পদে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমারেখা নির্দিষ্ট করে রাখেনি। পার্শ্ববর্তী দেশসহ ওই সব দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। কোনো কোনো দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে। যেমনÑ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০ বছর, শ্রীলংকায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়া ৩৫, ইতালি ৩৫ বছর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্স ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনিম্ন ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত, দক্ষিণ আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মতো সীমাবদ্ধ নেই। অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যে কোনো বয়সে আবেদন করতে পারে। রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যের মতো দেশে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগের দিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও স্টেট গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে তবে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনিম্ন ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায়। এসব দেশে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মতো অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের ঘটনা অনুপস্থিত। তবু তারা আমাদের মতো ত্রিশের কোটায় বয়স বেঁধে দেয়নি। আশ্চর্য হচ্ছে, এ দেশে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর করার সব বাস্তবতা থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। অবশ্য বিষয়টি একেবারে আলোচনায় আসেনি এটাও সত্য নয়।
বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকাকালীন ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয় এবং অনেক সংসদ সদস্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার পক্ষে মতামত দেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একই বছর ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ২১তম বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সুপারিশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে নবম জাতীয় সংসদের শেষদিকে মহাজোট সরকারের চমক হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক নির্দেশনার বিষয়ে পত্রিকায় খবর বের হয়। এমনকি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশের সুশীল সমাজও। বর্তমান সরকারের আমলে গত ৮ জুন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল। এই প্রস্তাবের পক্ষে বিভিন্ন জেলা প্রশাসকরা সমর্থন দিয়েছিলেন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২০১১ অধ্যাদেশ মোতাবেক সরকারি কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়েছে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা ৩০ বছর রয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
সরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের এসব আলোচনার পরও কোনো এক অজানা কারণে লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত যুবসমাজের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রাণের দাবি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। অবশ্য এ দেশের স্বপ্নবাজ তরুণ প্রজন্ম এখনো আশাবাদী তাদের এই যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন হবে শিগগিরই। কারণ ৩৫ বছরের পক্ষে অনেকগুলো যুক্তি আছে তাদের কাছে। যেমনÑ প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার ন্যূনতম বয়স ৬+ বছর করা হয়েছে। ফলে আগে যেখানে একজন ছাত্র ১৪-১৫ বছর বয়সে এসএসসি পাস করতে পারত এখন সেটা ১৬ বছরের আগে কোনোক্রমেই সম্ভবপর নয়; স্নাতক ও সম্মান উভয় ক্ষেত্রে লেখাপড়ার সময় এক বছর করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩ ও ৪ (চার বছরের অনার্স) বছর করা হয়েছে; ডাক্তারদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়েছিল এই বলে যে, তাদের সাধারণদের চেয়ে ১ বছর বেশি অর্থাৎ ৪ বছর অধ্যয়ন করতে হয়। পরবর্তীকালে সাধারণদের স্নাতক ও সম্মান উভয় পর্যায়ে সময় ১ বছর বৃদ্ধি করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়নি; এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স বা ডিগ্রি ও মাস্টার্সের রেজাল্ট বের হওয়ার মধ্যবর্তী সময় নষ্ট হয় সব মিলিয়ে প্রায় দুই বছর; প্রচলিত নিয়মানুসারে ২৩ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সমীকরণটি শুধু কাগজ-কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে তার প্রমাণ ২৭-২৮ বছরের আগে কোনো ছাত্রের শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়া; যথাসময়ে লেখাপড়া শেষ করতে না পারার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে ২ থেকে ৩ বছর সেশনজট; বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য প্রতিটি ছাত্রের জীবন থেকে যে সময় নষ্ট হচ্ছে তার ক্ষতিপূরণ করতে; বিপিএসসির যথাসময়ে পরীক্ষা নিতে না পারা (২৭ থেকে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার গ্যাপ ছিল ৩ বছর); সরকারি চাকরি থেকে অবসরের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে; নার্সদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৬ বছরে উন্নীত করা হয়েছে; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরির আবেদনের সুযোগ পেয়ে থাকে। অন্যদিকে সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও ৩০ বছরের ঊর্ধ্বের জনবল (অভিজ্ঞতা ছাড়া) নিয়োগ দেয় না। ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রেও কর্মের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে; নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া উচিত যোগ্যতার ভিত্তিতে, যোগ্যতার সঙ্গে বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই; ৫৭ বছর বয়স্ক ব্যক্তির কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু বাড়লে ৩০ বছরের যুবকের কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু কমে না তা প্রমাণ করতে; সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সঙ্গে সরকারের কোনো প্রকার আর্থিক সংশ্লেষ নেই। কিন্তু সিদ্ধান্তটি হবে জনমুখী। ফলে উপকৃত হবে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী ও তাদের পরিবার এবং সর্বোপরি দেশ।
২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়েছে। যার সুফল ভোগ করছেন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বর্তমান সরকারের আমলেই মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছরে উন্নীত হয়েছে; কর্মক্ষমতাও বেড়েছে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের ৮৭% শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধীনে অধ্যয়ন করছে। তথ্যমতে, এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর সবাই ২ থেকে ৩ বছরের সেশনজটে আক্রান্ত। আর ১৩% শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করলেও তাদের মাত্র ৪% সেশনজটমুক্ত। সেশনজটমুক্ত এই ৪% শিক্ষার্থী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়ানোর যথাযথ কারণ হতে পারে না। কল্যাণ রাষ্ট্রে সর্বদাই সংখ্যাগরিষ্ঠের সুবিধা-অসুবিধা, ভালো-মন্দ চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই ৯৬% শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাছাড়া দলীয় সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ঘন ঘন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, বিলম্বে ফল প্রকাশ ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; বিনা দোষে জীবন থেকে ঝরে যাচ্ছে অনেকগুলো বছর। শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। দেশে প্রতি বছর পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরি প্রার্থী হচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত কর্মসংস্থান না থাকায় প্রতিনিয়ত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। (বর্তমান সরকারের নানাবিধ উদ্যোগ সত্ত্বেও) এতে করে শিক্ষিত বেকারদের জীবনে নেমে আসছে হতাশা, একাংশ হচ্ছে বিপথগামী। অনেকেই হচ্ছে নেশাগ্রস্ত; সন্ত্রাসী। বাড়ছে অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকা-। নষ্ট হচ্ছে সামাজিক পরিবেশ। শিক্ষিত যুবসমাজকে মূল ধারায় ফিরিয়ে এনে মেধা ও মননের বিকাশের অধিকতর সুযোগ তৈরির জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা একান্ত দরকার। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টির প্রতি সদয় দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Scroll to Top