ছয়টি বড় ভূমিকম্পের শঙ্কায় বাংলাদেশ!

বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারত ও মিয়ানমারের প্লেটটি দেশের পূর্বাংশে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা ও জরিপ সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস)।

সংস্থাটির মতে, আগামী এক বছরে এ অঞ্চলে ৬ থেকে ৭ মাত্রার অন্তত ছয়টি ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এসব ভূমিকম্প ঢাকা, ময়মনসিংহসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা তো রয়েছেই, সে সঙ্গে ৬০০ কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়বে দেশ।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গত একশ’ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনায় ৭ মাত্রার ওপরে ছয়টি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে এ অঞ্চলে। ৮০ বছরের বিরতিতে গত ২৫ এপ্রিল নেপালে প্রায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তার পর গত এক সপ্তাহে থেমে থেমে আরো শতাধিক ভূমিকম্প হয়েছে এ অঞ্চলে। এই ভূমিকম্পে এক রকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে হিমালয়কন্যা। এ ঘটনায় প্রায় সাত হাজার প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত-মিয়ানমার ও বাংলাদেশ অংশের ভূতাত্ত্বিক প্লেটটি এখনো সক্রিয় এবং তা ক্রমে অগ্রসর হচ্ছে।

ঢাকা ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আকতার বলেন, ‘আমাদের উত্তরে দুটো সোর্স বা উৎপত্তিস্থল রয়েছে, যেগুলো খুবই বিপজ্জনক। আমাদের পূর্বে যে পাহাড়ি অঞ্চল, যেমন—মণিপুর, মিজোরাম, মিয়ানমার এখানেও একটা উৎসস্থলে রয়েছে। সে হিসেবে উত্তর থেকেও আমাদের ঝুঁকি রয়েছে, পূর্ব থেকেও একটা ঝুঁকি রয়েছে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ এই এক বছরেই দেশে ৪ থেকে ৫ মাত্রায় প্রায় ৯০টি ভূমিকম্প হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম চার মাসে সংগঠিত হয়েছে ২০টি।

বুয়েটের গবেষণায় দেখা যায়, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, রাজশাহীর তানোর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের ডুবরী, সীতাকুণ্ড, সিলেটের শাহজীবাজার ও রাঙামাটির বরকলে আটটি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএনডিপির সহায়তায় বুয়েটের গত বছরের গবেষণায়ও বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকির কথা উল্লেখ রয়েছে।

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘ইউএসজিএস বলছে, আগামী এক বছরে এই ফল্ট জোনে ৭ মাত্রার একটি, ৬ থেকে ৭ মাত্রার পাঁচটি আর ৪ থেকে ৬ মাত্রার অসংখ্য ভূকম্পন হতে পারে।’

দেশের মাটির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ বলছে, ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে এমন নরম মাটি সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে, শতকরা ৮০ ভাগ। সিলেটে ৭০ আর ঢাকায় এর অনুপাত ৬৫ ভাগ। নরম মাটিতে স্থাপনা বেশি হওয়ায় ঝুঁকির কথাও জানানো হয়েছে ওই বিশ্লেষণে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ফাটল রেখার দৈর্ঘ্য এবং ফাটল রেখার সময় বিবেচনায় যে শক্তি রিলিজ হয়েছে, তার টোটাল শক্তির তিন ভাগের এক ভাগ শক্তি ভূ-অভ্যন্তর থেকে বের হয়ে এসেছে। পূর্বে যদি ভূমিকম্প হয়, তবে এক রকম হবে এবং পশ্চিমে যদি হয়, তবে ফল আরেক রকম হবে।’

1430730043ভূমিকম্প রোধে উদ্যোগের ধীরগতির কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থেকেও ফায়ার ব্রিগেড বলছে, প্রস্তুতি আছে তাদের। তবে তার আগে প্রয়োজন সমন্বয় পরিকল্পনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার কথা জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান। তিনি বলেন, ‘ইকুইপমেন্ট ও ম্যান পাওয়ার এবং অন্যান্য ভেহিক্যাল যেগুলো আছে, ট্রান্সপোর্টেশন সব মিলিয়ে আমরা প্ল্যান করেছি। এগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।’

সে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক বাড়াতে প্রশিক্ষণ বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ভূমিকম্পের সম্ভাব্য বিপর্যয় রোধে এর কারণ চিহ্নিত করে তা দূর করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সে সঙ্গে ভূমিকম্পে করণীয় বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বানও জানিয়েছেন তাঁরা। সূত্র: এনটিভি অনলাইন

Exit mobile version