থাইল্যান্ড উপকূলে আন্দামান সাগরে নৌকায় ভাসতে থাকা ‘রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের’ বাঁচাতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস অফিসের পরিচালক জেফ রাথকি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেসব দেশের লোকজন গভীর সমুদ্রে নৌকায় ভাসছে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা।
এক্ষেত্রে মানবিক বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেফ রাথকি বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে আমরা ওই অঞ্চলের দেশগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান রেখেছি। আন্দামান সাগরে ভাসতে থাকা নৌকায় মানবেতর জীবন-যাপনকারীদের রক্ষায় আঞ্চলিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, আর তা করতে হবে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী।”
যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমভাগে অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি পাচারের শিকার হয়েছেন, যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ।
ভাগ্য বদলাতে বাংলাদেশ থেকে মাছ ধরার ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ায় চেষ্টার কথা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। আর মিয়ানমারে জাতিগত বৈষম্যের শিকার রোহিঙ্গারাও দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে, যার সুযোগ নিচ্ছে পাচারকারীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে এই অবৈধ অভিবাসীদের নৌকায় তুলে পাচারকারীরা প্রথমে নিয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ডে। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে তাদের কিছুদিন রেখে সুযোগ বুঝে আবারও নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া উপকূলে।
সম্প্রতি এরকম একটি পরিত্যক্ত আস্তানায় গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নতুন করে তোলপার শুরু হয়। থাই সরকার পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় এবং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সরকার তাদের সমুদ্র সীমায় নজরদারি বাড়ানোয় মাঝ সমুদ্রে আটকা পড়ে পাচারকারীদের নৌকায় থাকা যাত্রীরা।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, ছয় হাজারেরও বেশি অসুস্থ ও ক্ষুধার্ত অবৈধ অভিবাসী সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধারের অপেক্ষায় আছেন।
উদ্ভূত সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে নিয়ে আগামী ২৯ মে সম্মেলনের আয়োজন করেছে থাইল্যান্ড সরকার। সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন জেফ রাথকি।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সমূদ্রে আটকে থাকা লোকজনের জীবন বাঁচানো। আমি ওই অঞ্চলের সরকারগুলোর নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করতে চাই। তারা অনেক রোহিঙ্গা ও শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন। এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে আহ্বান জানাচ্ছি।”
সাগরে ভাসমানদের উদ্ধার কাজে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতরা দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে বলেও জানান যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রাখব, কেননা রাখাইন রাজ্যের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের যে অঙ্গীকার তারা করেছে, তা প্রতিপালনে তাদের জরুরিভাবে সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন।”