‘দুই মাস তিনি (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) কোথায় ছিলেন, কিভাবে ছিলেন, তা আমাকেও জানাননি। বলতে পারছেন না মাঝখানের সময়টুকুতে আসলেই কী হয়েছিল। এমনকি যেভাবে তিনি গতকাল (সোমবার) আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন, আমি তাঁকে এভাবে আগে কাঁদতে দেখিনি। তাঁর বাবার মৃত্যুর সময় এবং এক-এগারোর সময় গ্রেপ্তারের পর যেভাবে কেঁদেছেন, তার চেয়েও করুণ ছিল এ দিনের কান্না। প্রায় ১০ মিনিট কেঁদেছেন। ফাঁকে ফাঁকে সবার খোঁজখবর নিয়েছেন। তাঁর শরীর খুবই খারাপ। আমরা তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর্জি জানাব।’ গতকাল মঙ্গলবার শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ কালের কণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন।
ওই হাসপাতালে বিচারাধীন মামলার আসামিদের ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে সালাহ উদ্দিন আহমেদের। সোমবার শিলং পৌঁছে রাতেই স্বামীর সঙ্গে এক দফা সাক্ষাৎ করেন হাসিনা আহমেদ। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১১টায় তিনি দ্বিতীয় দিনের মতো স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যান। বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তবে হাসিনা একাই হাসপাতালের ভেতরে ঢোকেন। জনি বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ১৫ মিনিট পর ফেরেন হাসিনা আহমেদ।
দুই মাসেরও বেশি সময় পর স্বামীর সঙ্গে দেখা হলো। এত দিন তিনি কোথায়, কিভাবে ছিলেন, জানতে পেরেছেন কি না, আপনাদের মধ্যে কী নিয়ে কথা হলো- হাসপাতালে ঢোকার আগে এ প্রশ্নের উত্তরে হাসিনা আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যতটুকু কথা হয়েছে তিনি (সালাহ উদ্দিন) বলেছেন, কোথায় ছিলেন, কারা তাঁকে নিয়ে গেছে, তিনি কিছু বুঝতে পারেননি। চোখ, মুখ ও হাত-পা বাঁধা ছিল, শুধু এইটুকুই বলছেন। এর বেশি কিছু জানাননি। ওনার শরীর খুবই খারাপ। একটানা দুই মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। হাত-পা কাঁপতে থাকে। খুব দ্রুত তাঁর উন্নত চিকিৎসা দরকার। তাঁর হৃদরোগের সমস্যা আছে, কিডনির সমস্যাও জটিল আকার ধারণ করেছে।’
স্বামীকে দেখে ফেরার পর হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য ভারত বা বাংলাদেশ, কোনো দেশই আপাতত সালাহ উদ্দিনের জন্য নিরাপদ নয়। আসলে তাঁর (সালাহ উদ্দিন) যে শারীরিক অবস্থা, তাতে আমরা মনে করছি সিঙ্গাপুরের যে তিনজন চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে দেখছেন, এ মুহূর্তে তাঁর জন্য তাঁদের তত্ত্বাবধানই জরুরি।’
ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়। তাহলে তিনি স্বামীকে কেন তৃতীয় দেশে নিতে চাচ্ছেন- এ প্রশ্নের উত্তরে হাসিনা আহমেদ বলেন, ২০ বছর ধরে তাঁর (সালাহ উদ্দিন) সব চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে হয়েছে। হৃদরোগের জন্য তিনবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, রিং পরানো হয়েছে। কিডনির চিকিৎসাও সিঙ্গাপুরেই হচ্ছে। তাই সেখানেই স্বামীকে নিয়ে যেতে চান। তৃতীয় দেশ বলতে তাঁরা সিঙ্গাপুরকেই বোঝাচ্ছেন।
সিঙ্গাপুরে কোন কোন ডাক্তার তাঁকে দেখছিলেন- জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘হৃদরোগের চিকিৎসকের নাম ডাক্তার ফিলপ কো, ডাক্তার স্টিফেন লিং করছেন কিডনির চিকিৎসা। আমি এখানে (ভারতে) চিকিৎসা করাতে চাই না। প্রয়োজনে সিঙ্গাপুরের ডাক্তারের পরামর্শও আমরা আদালতের সামনে পেশ করব এবং তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর্জি জানাব।’
আজ আপনার স্বামীর সঙ্গে কী কথা হলো জানতে চাইলে হাসিনা আহমেদ বলেন, পারিবারিক বিষয় ও বাচ্চাদের নিয়ে কথা হয়েছে।
আপনি এক মাসের জন্য শিলংয়ের পুলিশ বাজার এলাকার সেন্ট্রাল পয়েন্ট হোটেলে রুম ভাড়া করেছেন বলে খবর ছড়িয়েছে, এ কথা সত্য কি না- জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমার দুইটা বাচ্চার পরীক্ষা চলছে। আমি ১০ দিনের বেশি থাকতে পারব না। আমি অনেক সমস্যা ফেলে রেখে এসেছি। ১০ দিনের জন্য রুম ভাড়া করেছি।’
পরবর্তী করণীয় ঠিক করেছেন? জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘এ মুহূর্তে জরুরি হচ্ছে এখানকার ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত এবং তাঁর (সালাহ উদ্দিন) মেডিক্যাল রিপোর্টগুলো। আইনি বিষয়ও আছে। আইনজীবীরা কী বলেন, সেটাও শুনতে চাই।’
স্বামীর সঙ্গে দেখা করার আগে গতকাল দুপুরে শিলংয়ের লাশুমের এলাকায় অপরাধবিষয়ক আইনজীবী এসপি মাহান্তর কার্যালয়ে যান হাসিনা। এসপি মাহান্ত এ সময় আদালতে থাকায় হাসিনা তাঁর কনিষ্ঠ সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।