দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে সংগঠনটির দুই নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শিক্ষক ছাত্রসহ অন্তত ১৫ জন। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার পরও ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে চলবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ টি এম শফিকুল ইসলাম।
ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ এবং পুলিশের গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেলে পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শতাধিক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
সংঘর্ষে আহত ৭-৮ জনকে উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ হলে হলে তল্লাশি চালায়।
সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাবিপ্রবি শাখার ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক অরুন কান্তি রায় সিটন। নিহত জাকারিয়া হাবিপ্রবির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি দিনাজপুর সদরের গোপালপুর এলাকায়। নিহত অপর ছাত্র মিল্টন কৃষি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায়। দুজনই হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ নির্বাহী কমিটির নেতা ছিল।
সংঘর্ষের সূত্রপাত একটি হল দখলকে কেন্দ্র করে। ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখার আহমেদ রিয়েল এবং সাধারণ সম্পাদক অরুন কুমার রায় সিটনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ নুর হোসেন হল দখল করে নেয়।
এ হলের দখল পুনরায় ফিরে পেতে অপর গ্রুপ হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জেমি, শেখ রাসেল হলের সভাপতি পলাশ ও ছাত্রলীগ নেতা নয়নের নেতৃত্বে পাল্টা হামলা চালালে পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
রিয়েল অভিযোগ করে বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশ ও বহিষ্কৃত নেতা জেমি, পলাশ ও নয়নের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও বহিষ্কৃত নেতাদের গুলিতে মিল্টন ও জাকারিয়া নামে দুইজন নিহত এবং জাহিদ, সিফাতসহ পাঁচ জন আহত হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জেমি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় অডিটেরিয়ামে সেমিনার চলাকালে রিয়েল ও সিটনের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ সংয়োগ বন্ধ করে দিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভিসিসহ সবার ওপর হামলা চালায়। তখন তারা আত্মরক্ষার্থে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ তাদের প্রতিহত করতে আসলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। তবে এ ঘটনায় হতাহতের বিষয়টি এ মুহূর্তে সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়।
হাবিপ্রবি প্রক্টর এ টি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ৭-৮ জনকে আমরা উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। তবে এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি এ কে এম খালেকুজ্জামান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে পরিমাণ এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় নিহত এবং আহত হওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে গত ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। দীর্ঘ ১ মাস ১২ দিন পর গত ১১ জানুয়ারি খুলে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি আবাসিক হল। ওইদিন কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্চনার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবার আগেই অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। এরই মধ্যে ছাত্রলীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর একটি গ্রুপ শিক্ষকদের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে গত ১৮ জানুয়ারির সংঘর্ষের পর থেকে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে রিয়েল ও সিটন গ্রুপ।