আমার চোখ তো বাঁধা ছিল। হাত বাঁধা ছিল। একটা লং জার্নি। মনে হয়, ১২-১৪ ঘণ্টা হবে। দুই ঘণ্টার হয়তো স্টপেজ ছিল। তারপর শিলং গলফ কোর্সের পাশে ওরা আমাকে ফেলে রেখে যায়। আমি তখন চোখ খুলে দেখেছি। কিছু লোককে বললাম, আমাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাও অথবা পুলিশে খবর দাও। তারা পুলিশে কল করল। আমার হিস্ট্রি বলার পর তারা মনে করল, আমি বোধ হয় মেন্টাল পেশেন্ট।’
১১ মে ভোর থেকে শিলংয়ে আটক থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ গতকাল সোমবারই প্রথম এভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বললেন।
সালাহ উদ্দিনকে গতকাল সকালে হাসপাতালের আসামিদের ওয়ার্ড থেকে সিটি স্ক্যানের জন্য হাসপাতালের মূল ভবনে নেওয়া হয়। ১৫ মিনিট পর তাঁকে আবার ওয়ার্ডে ফেরত নেওয়া হয়। দুই ভবনে যাওয়ার মাঝপথে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশি পাহারায় সিটি স্ক্যান করতে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁকে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল। পুলিশের সহায়তা নিয়েই হাঁটছিলেন তিনি। তবে তাঁর শরীরে বাহ্যিকভাবে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে প্রথম আলোর আলাপচারিতা ছিল এ রকম:
—আপনার শরীর কেমন?
ভালো না।
—আপনার স্ত্রী তো এখানে আসছেন?
মনে হয়। আপনারা সবাই কেমন আছেন?
—আপনি কেমন আছেন?
এখনো জীবিত আছি।
—আপনি দেশে ফিরতে চান?
দেশে তো এখন ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। এটা সরকারের উচিত হয়নি। আমি তো কোনো সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামি নই। তো কেন এটা করা হয়েছে, আমি তো জানি না।
—স্থানীয় লোকজনই কি আপনাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল?
আমি লোকজনের হেলপ চাই। তারাই ফোন করে পুলিশকে নিয়ে আসে। টহল পুলিশ আসে। তখন আমি তাদের সাথে গিয়েছি।
—উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে কি কোনো মানবিক সহায়তা চাইবেন?
আমার স্ত্রী এলে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার পর এটা বলতে পারব। তবে আমি চিকিৎসা নিতে চাই। আমার অবস্থা ভালো না। শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। স্পাইনাল কর্ড ও ব্যাক পেইন হচ্ছে।
—আপনাকে যখন অপহরণকারীরা নিয়ে আসছিল, তাদের কথাবার্তা কি খেয়াল করেছিলেন?
আমার চোখ-কান বন্ধ ছিল। এগুলো এখন আমি কিছুই বলতে পারব না।
—দেশে ফিরতে চান?
বাংলাদেশ তো আমার দেশ। কেন ফিরব না বলেন।
এদিকে গতকাল রাতে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থিত সিভিল হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি তৃতীয় কোনো দেশে যেতে চান। প্রায় আড়াই মাস পর সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর দেখা হলো। হাসিনা আহমদ স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত সিভিল হাসপাতালে স্বামীর ওয়ার্ডে ছিলেন।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভারত সরকারের কাছে খুব কৃতজ্ঞ। সাথে এখানকার স্থানীয় প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছেও খুব বেশি কৃতজ্ঞ। কারণ, তারা আমার স্বামীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং তাঁকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। আমার স্বামী খুব বেশি অসুস্থ। আমরা চেষ্টা করব ওনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৃতীয় কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
আইনগত বিষয় নিয়ে সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে হাসিনা আহমদ বলেন, ‘উনি যেহেতু অসুস্থ, তাই ওনার সঙ্গে আজ খুব বেশি কথা বলতে পারিনি। কাল সকালে আমি আবার আসব। ওনার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি ঠিক করব। কাল আসার সময় আইনজীবী নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’
হাসিনা আহমদ চলে যাওয়ার পর সালাহ উদ্দিনের চিকিৎসক হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ জি কে গোস্বামীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান, আজ (গতকাল) সকালে তাঁর সিটি স্ক্যান করার পর বিকেলে আরও কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে।
তবে সালাহ উদ্দিন আহমদকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোয় দেরি হতে পারে বলে জানা গেছে। গতকাল মেঘালয়ের ইংরেজি দৈনিক শিলং টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মেঘালয় পুলিশ চাইছে সালাহ উদ্দিনকে ফেরত পাঠাতে আইনি প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শেষ হোক। কিন্তু তাঁর শারীরিক পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। তা ছাড়া, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সালাহ উদ্দিনকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করবে বিএসএফ। তবে বিএসএফ গত রোববার জানায়, সালাহ উদ্দিনের ফেরতের বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। মেঘালয়ের পুলিশপ্রধান রাজীব মেহতাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরই ভারতীয় পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করতে পারে।
মেহতা বলেন, আদালতই ফরেনার্স অ্যাক্ট লঙ্ঘন করার বিষয়ে বা তাঁকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এখন আমাদের দায়িত্ব সালাহ উদ্দিনকে আদালতের সামনে হাজির করা। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো নির্দেশ আসে, সেটিও আমরা আদালতের সামনে তুলে ধরব।’
সূত্রঃ প্রথমআলো