আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে মন্ত্রীসভা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম ও ত্রাণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকেও মন্ত্রীসভা থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্তের পর এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারের বিশেষ একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতির বিষয়টি উল্লেখ করলেও এডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া’র (আজ বেলা তিনটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়) বিষয়ে এখনো লিখিত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
উল্লেখিত মন্ত্রীদের নিয়ে বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন থেকে সমালোচনা চলছিলো।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিয়মিত মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন না বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো শুরু থেকেই। মন্ত্রণালয়ের আমলারা একারণে প্রায়ই সমস্যার মধ্যে ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সই করানোর জন্যও তাকে যথা সময়ে মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে পাওয়া যেতো না।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলটি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নিজ মেয়ের জামাই র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ নারায়নগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের মামলার জড়িত থাকার অভিযোগ গ্রেফতার হওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মায়া। তার মন্ত্রীসভায় থাকার নৈতিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মায়াকে খালাস করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে নতুন করে আপিল শুনানির আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ গত ১৪ জুন। এই আদেশের পর সবমহল থেকেই মায়ার মন্ত্রীত্ব ও সংসদ সদস্য পদে থাকা না থাকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৭ সালের ১৩ জুন সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে মায়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত মায়াকে ১৩ বছরের কারাদ- দেন। একইসঙ্গে তাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। মায়া এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে খালাস দেয়, যা বাতিল হয়ে যায় আপিল বিভাগের আদেশে। এরআগে তার ছেলে দিপু ১৯৯৬-০১ টার্মের আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী এবং উত্তরায় জমিদখল করে তাতে মার্কেট তৈরি করে ভাড়া দেয়াসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ ওঠে। ওই সময়ও সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল।
অন্যদিকে ব্রাজিল থেকে পচা গম আমদানি করে বেকায়দায় পড়েন এডভোকেট কামরুল ইসলাম। পচা গম আমদানির প্রক্রিয়া ও এর দর নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মন্ত্রী জাতীয় সংসদে পচা গমের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে আরও সমালোচনার মুখে পড়েন। ফলে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়ে চলেছেন তিনি। দেশের প্রায় সকল গণমাধ্যম ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত পচা গমের দৃশ্যমান ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে চলছে। আর মন্ত্রী এ নিয়ে কোনো ধরনের অনুশোচনা বা দোষ স্বীকার না করে উল্টো পচা গমের পক্ষে সাফাই গেয়ে চলেছেন। নিজে ‘কেলেঙ্কারির সঙ্গে তিনি জড়িত নন’ এমনটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন তিনি। ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া দলীয় কর্মকাণ্ডে ও সমালোচিত হন কামরুল ইসলাম। তিন সিটিতে বিতর্কিত নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা পালনে তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তাছাড়া অতিকথনের কারণে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বিরক্ত কামরুল ইসলামের উপর।
সূত্রঃ শীর্ষনিউজ