ব্লগারদের হত্যার বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ব্লগারদের হত্যার বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক। সরকার এই হত্যাগুলোর সঙ্গে যুক্তদের গ্রেফতার ও বিচারের জন্য খুবই আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এদের হত্যার বিচার হবেই। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে তথ্য প্রযুক্তি আইন-২০০৬ ও অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিশ্বব্যাপী বাক স্বাধীনতা নিয়ে কর্মরত মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল-১৯ এই বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠক সঞ্চালনা করেন সংগঠনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-এশিয়া বিষয়ক পরিচালক তাহমিনা রহমান।

আইনমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকার নতুন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছে। এর খসড়া এখন ওয়েবসাইটে আছে। এই আইন হলে আইসিটি আইনের সংস্কার নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, তার সমাধান হয়ে যাবে।

বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, গত সাত বছরে ইন্টারনেট ব্যবহার দ্রুত গতিতে বেড়েছে। ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখের নিচে। আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার কোটিতে। দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। প্রতি ১২ সেকেন্ডে একজন বাংলাদেশি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট করছে। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ছে। অপরাধও বাড়ছে। অপরাধীরা অপরাধের ধরনও পাল্টাচ্ছে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী আইনের সংশোধন হবে।

সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফারাজি বলেন, এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। বাক স্বাধীনতার কথা বলে তাদের অনুভূতিতে আঘাত করা ঠিক না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে এমন কোনো কথা ব্লগে না লেখাই ভালো। কেননা অনলাইনে সবকিছু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

আইসিটি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার বলেন, সরকারের ডিজিটাল প্রচার ও তা বাস্তবায়নের সঙ্গে আইনটি যায় না। এ দেশে বেশির ভাগ আইনই ১৫০-২০০ বছরের পুরোনো। এই আইনগুলোর পরিবর্তন হওয়া দরকার।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান আদ্রিয়ান জোনস ব্লগার ও সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তাদের নিরাপত্তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। মুক্তচর্চার পরিবেশ যেন বাধাগ্রস্ত না হতে পারে সে ব্যাপারে এ দেশের সব মহলের জোরালো ভূমিকাও প্রত্যাশা করেন তিনি।

বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য হোসনে আরা ডালিয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও শিরীন আকতার, আইন কমিশনের সদস্য ড. এম শাহ আলম, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনের কমিশনার সালেহ আহমেদ হাকিম, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান প্রমুখ।

বক্তারা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৪৬ ও ৫৭ ধারার সমালোচনা করে বলেন, ৪৬ ধারায় নিয়ন্ত্রককে অপরাধের ব্যাখ্যা করার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। আর ৫৭ ধারায় অললাইনে লেখা কোনটি অপরাধ বলে গণ্য হবে তাও অস্পষ্ট। ফলে এ ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহারের সুযোগ আছে। তা ছাড়া এই দুটি ধারাকে সংবিধান, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করে বক্তারা তা বাতিলের দাবি জানান। তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর উপর একটি আইনি বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন আর্টিকেল ১৯ এর পরিচালক থমাস হিউজ।

Exit mobile version