শনিবার (১১ এপ্রিল) রাত ১০টার পরে যে কোনও সময়ে কার্যকর করা হবে কামারুজ্জামানের ফাঁসি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পুরোই প্রস্তুত।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে রাত ১০টার পর যেকোনও সময়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসি।
সূত্রগুলো জানায়, ফাঁসির পর কামারুজ্জামানের মরদেহ শেরপুর পাঠানো হবে। একটি দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে মরদেহ নিয়ে যাওয়া আর রাতের আঁধার থাকতেই কবর দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করতে হবে বলেই মধ্যরাতের আগেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
শনিবার বিকেলে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে শেষ দেখা করে গেছেন। এর আগেই কারাগারে পৌঁছায় কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার নির্বাহী আদেশ। সে আদেশও তাকে পড়ে শোনানো হয়।
কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আপিল করা হলে তাও খারিজ হয়ে যায়। গত ৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই রায় দেওয়ার পর থেকেই কামারুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। তখন থেকে সিদ্ধান্ত নিতে যৌক্তিক সময় চেয়ে চার দিন কাটিয়ে দেন এই জামায়াত নেতা। পরে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) তার কাছে আবারও শেষ সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়। এ সময়ই সিদ্ধান্ত জানতে যাওয়া দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়, কামারুজ্জামান ক্ষমা চাইছেন না।
তারই ভিত্তিতে এগিয়ে চলে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া। শনিবার সকালেই উদ্যোগ নেওয়া হয় নির্বাহী আদেশ তৈরির। নির্বাহী আদেশের ফাইল প্রস্তুত করে তা পাঠানো হয় রাজধানী মনিপুরীপাড়ায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে। সেখানে তিনি আদেশের ফাইলে স্বাক্ষর করলে দুপুরে তা চলে যায় কেন্দ্রীয় কারাগারে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ আদেশের ভিত্তিতে চলছে ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া।
তবে তার আগেই কামারুজ্জামানের স্ত্রী-পুত্র-পরিজনকে শেষবারের মতো তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ডেকে পাঠায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
বিকেল চারটার পরপরই পরিবারের ২১ সদস্য কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দেখা করেন কামারুজ্জামানের সঙ্গে।
প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা শেষ দেখা করে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কেন্দ্রীয় জেলখানার চারিদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বিভিন্ন বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয় কারাগারের সামনের সড়কে সাধারণ যান চলাচল।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় শেরপুর জেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৬৪ জনকে হত্যা ও নারী নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হলে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে গত ৫ মার্চ তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন কামারুজ্জামান। ৬ এপ্রিল এ আবেদনও খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
এরপর তার মৃত্যুদণ্ড রোধে একটাই পথ ছিলো রাষ্ট্রপতির ক্ষমা।অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরই ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় কারাগার।