মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বারকে খুঁজে বের করতে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার একাত্তরে মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আফতাবউজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর জব্বারের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন।
রায়ে বলা হয়, জব্বারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
চারটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একটিতে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ তিনি করেছেন তাতে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য হলেও বয়স বিবেচনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে আদালত বলেন। আনুমানিক ৮০ বছর বয়সি জব্বার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন বলে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়।
পেশায় প্রকৌশলী আবদুল জব্বার ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে’ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে স্বাধীনতার জন্য বাঙালির সংগ্রাম যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত, তখনো মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে মঠবাড়িয়া-বামনা-পাথরঘাটা আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জব্বার সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন। প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে তাকে পরিচিত করিয়ে দেয় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার রাজাকারদের ‘রিং লিডার’ হিসেবে।
প্রসিকিউশনের নথিতে বলা হয়, জব্বারের শ্বশুর ছিলেন পিরোজপুরের মুসলিম লীগের নেতা। শ্বশুরের হাত ধরেই একাত্তরে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম দমনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা দিতে শান্তি কমিটি গঠন করা হলে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হন জব্বার।
১৯৭১ সালে এক জনসভায় জব্বার বলেছিলেন ‘মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দুদের স্থান এই পাকিস্তানের মাটিতে হবে না, হিন্দুদের সম্পদ সব গনিমতের মাল, সবকিছু মুসলমানদের ভোগ করা জায়েজ।’
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জব্বার আত্মগোপনে চলে যান। স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীরা জিয়াউর রহমানের আমলে আবার রাজনীতি করার সুযোগ পেলে জব্বারও সক্রিয় হন।
১৯৮৬ সালে তিনি যোগ দেন সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে; পিরোজপুর-৪ আসন থেকে হন সাংসদ। ১৯৮৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে টিন ও চাল আত্মসাতের মামলা হয়। মামলা এড়াতে তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেও ২০০১ জাতীয় পার্টিতে ফেরেন। পরে তিনি জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানও হন।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম একাত্তরের শীর্ষ ৫০ যুদ্ধাপরাধীর একটি তালিকা করেছিল, যাতে আবদুল জব্বারের নামও ছিল।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিনোদবিহারী বিশ্বাসের ছেলে যজ্ঞেস বিশ্বাস ১৯৭২ সালে জব্বারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে পটপরিবর্তনের পর তা ধামাচাপা পড়ে যায়।