ঘুষ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত ও শিবির নেতা-কর্মীদের পুলিশে ঢুকিয়েছেন মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) তোফায়েল আহমেদ। এসপি অন্তত ১০০ জনের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে লোকদেরকে পুলিশে ঢুকিয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে গণমাধ্যমের কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী।
তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। জেলার পুলিশ সুপারসহ ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তাদের তালিকা তাঁর কাছে রয়েছে। এদের দুর্নীতির প্রমাণও তাঁর কাছে রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, গত বুধবার অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, তিন থানার ওসি, র্যাব ও আনসার-ভিডিপির কর্মকর্তাদের ‘পিঠের চামড়া’ তুলে নেয়ার হুমকিসহ কঠোরভাবে ধমক দিয়েছেন মন্ত্রী। সভায় উপস্থিত কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা থানার ওসিদের দাঁড় করিয়ে মন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জিজ্ঞাসায় সঠিক জবাব না পেয়ে মন্ত্রী তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিও দেন। শেরপুর এলাকায় একটা অপরাধের ঘটনায় যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় সভায় উপস্থিত এক র্যাব কর্মকর্তার প্রতি উত্তেজিত হন মন্ত্রী।
উপরোক্ত বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানান, কাউকে আমি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করিনি। দুর্নীতিবাজদের শাসন করা দরকার দেশের স্বার্থে। আমি আগামী রবিবারই জাতীয় সংসদে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি ও এ জেলার পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কর্মকর্তাদের এই চিত্র তুলে ধরব।
এদিকে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমাজকল্যাণমন্ত্রী অশোভন আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ ঊর্ধ্বতন তিন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের প্রেরিত ফ্যাক্স বার্তায় পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ উল্লেখ করেন, বুধবারের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে অশোভনীয় বক্তব্য প্রদান করলে উপস্থিত কর্মকর্তারা অস্বস্তি বোধ করেন। স্পেশাল ব্রাঞ্চের অ্যাডিশনাল আইজি, সিলেট রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজির (গোপনীয়) কাছে পাঠানো ওই বার্তায় অবশ্য এর বেশি কিছু লেখা ছিল না।
সভায় ধমক দেওয়ার কথা স্বীকার করে মহসিন আলী বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাসন করেছেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে সম্বোধন না করায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আমি তিরস্কার করেছি। ইচ্ছা করেই মুক্তিযুদ্ধকে ‘খাটো’ করার চেষ্টা করা হয়। যারা এদেশের জন্য যুদ্ধ করেছে তাদের অসম্মান করে রাজাকারদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসব এখানেই হচ্ছে, এদেশে আর কোথায়ও সম্ভব হবে না কোনোভাবেই। পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদের নাম উচ্চারণ করে তিনি বলেন, তার তো বিদায়ের সময় হয়ে গেছে। তিনি সেদিন বিদায়ী ভাষণ দেওয়া শুরু করেছেন। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। পুলিশে এই শ্রেণির ব্যক্তি যদি দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে দেশের অগ্রগতি তো বাধাগ্রস্ত হবে। সম্প্রতি পুলিশে নিয়োগের সময় অন্তত ১০০ জনের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে নিয়েছেন। ঘুষ নিয়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোকজনকে পুলিশে ঢুকিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা সভায় পুলিশ সুপারকে শাসন করেছি।
এ ছাড়াও জানা গেছে, উক্ত সভায় উপস্থিত কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা থানার ওসিদের দাঁড় করিয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট থানার আইন-শৃঙ্খলা এবং ‘দুর্নীতিতে’ জড়িত থাকার কারণ জানতে চান মন্ত্রী। ওই তিন থানার ওসিকে দাঁড় করানোর ব্যাপারে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, কুলাউড়ার ওসিকে ১০ লাখ টাকা না দিলে কথা বলে না। তার বিরুদ্ধে ৩০০ জনের দরখাস্ত পেয়েছি। জুড়ী থানার ওসি দলীয় লোকদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। আবার নিরপরাধ লোকদের ফাঁসিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। মোটা টাকার বিনিময়ে ওসি দিনকে ‘রাত’ বানাচ্ছে। পছন্দ না হলে তার খেয়াল খুশি মতো ডাকাতি মামলার আসামি বানাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমি এলাকার তৃণমূলের মানুষের খবর রাখি। তাদের দুঃখ-কষ্ট জানি। আমার এলাকায় দুর্নীতিবাজদের জায়গা নেই। এসব চলবে না। দুর্নীতি যারা করবে তাদের রক্ষা নেই। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ করেও কিছু করতে পারবে না। আমি সত্য ও ন্যায়ের পথে আছি। আমি ‘উপরে’ বলেছি, এসপি তোফায়েলকে শুধু বদলি করে মৌলভীবাজার থেকে নিয়ে গেলেই হবে না। তাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে।