ক্রিকেটার নাসিরের সংগ্রামী জীবনের গল্প

766
নাসির হোসেন

নাসির হোসেন, বর্তমান সময়ে অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা। মাঠে, মাঠের বাইরে নানা দুষ্টমিতে মাতিয়ে রাখেন চারপাশটাকে। সম্প্রতি কথা হলো নাসিরের সঙ্গে। দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে এল নানা গল্প। এ সাক্ষাত্কারে তুলে ধরা হলো অন্য এক নাসিরকে।

নাসির হোসেনসংগ্রামী জীবনের গল্প
কষ্ট ছাড়া কোনো কিছুই পাওয়া যায় না, সে যে পেশাতেই থাকুন না কেন। আমিও অনেক কষ্ট করেছি। থাক, বাদ দেন…সুখে আছি, সুখেই থাকি। কেন কষ্টের কথা টেনে আনা? (একটু থেমে) যা হোক, শুরু থেকে ক্রিকেট খেলতে বাড়ি থেকে ওভাবে সমর্থন পেতাম না। বাসা থেকে কিছু চাইলেও সেটা দিতে পারত না। ক্রিকেটারদের তো কেবল কেডস কিনলেই হয় না। আমার বয়স তখন ১২ বছর, একেকটা ব্যাটের দাম তখনই ছিল ১০-১২ হাজার টাকা। সবার পক্ষে এত দাম দিয়ে ব্যাট কিনে দেওয়া সম্ভব নয়। একেকটা জুতার দাম ছিল পাঁচ হাজার টাকা। অনেক কষ্ট করেছি তখন। ওই সময় খেলতাম অন্যের দেওয়া ব্যাট-প্যাড দিয়ে। প্রথম তিন-চার বছর এভাবেই খেলেছি।

আমুদে জীবন-যাপন
পারিবারিকভাবেই আমরা একটু আনন্দ-মজা করতে পছন্দ করি। আমার জীবন-যাপনেও এটার বিরাট প্রভাব।

ফটোগ্রাফি নিয়ে বিশেষ শখ
ছবি তোলার বাতিক আছে আমার। এ কারণে বিশ্বকাপ থেকে ফেরার সময় একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে ফেলেছি। তবে অন্যের ছবি তুলতে নয়, ক্যামেরাটা কিনেছি নিজের ছবি তুলতেই।

যে স্বপ্নটা বুকে সযতনে লুকিয়ে রেখেছি
আমার স্বপ্ন খুব একটা বড় নয়। স্বপ্ন দেখি, রংপুরে একটা বাড়ি বানাব। বাড়িটা কেমন হবে? সেটা টিনের হতে পারে, ইটের কিংবা প্লাস্টিকের হতে পারে (হাসি)! তবে একটা দারুণ বাড়ি আমি বানাবই। সেটা হবে একেবারেই ভিন্ন ধরনের।

আলাদিনের চেরাগ পেয়ে গেলে যে তিনটি ইচ্ছার কথা বলবেন দৈত্যকে
১. স্মৃতিতে যা কিছু আছে, সব মুছে দিতে বলব। একটা ফ্রেশ মুড চাই।
২. ক্রিকেটে বাংলাদেশ কখনো হারবে না।
৩. একজন ভালো মানুষ হওয়া। সব দিক দিয়েই ভালো হতে চাই।

বিয়ে নিয়ে ভাবনা
দুই-তিন বছর পর বিয়ে করার ইচ্ছা আছে।

পাত্রী হিসেবে কেমন মেয়ে পছন্দ?
আমার পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে, আমার ক্রিকেটার পরিচয়কে নয়, ব্যক্তি নাসিরকে ভালোবাসবে, পাত্রী হিসেবে এমন মেয়েই পছন্দ। অনেক সাধারণ একটা মেয়ে হবে। একেবারে সাদাসিধা। অনেক হাসি-খুশি থাকবে। আমার মতোই ইয়ার্কি-ফাজলামো পছন্দ করবে।

কোনো মেয়ে কখনো ঝড় তুলেছিল বুকে?
ছেলেবেলায় নিজের অজান্তে কত কিছুই তো হয়! থাক এ পর্যন্তই…।

প্রেম-ভালোবাসা বলতে কী বোঝেন?
বাকওয়াজ! উমম…প্রেম-ভালোবাসা মানে…উমম…ভালোবাসা বলতে বুঝি, আমি কাউকে যে পরিমাণ ভালোবাসি, সে-ও আমাকে একই পরিমাণ ভালোবাসবে। ভালোবাসার আদান-প্রদানটা সমান হলেই কেবল প্রেমটা জমে ওঠে। প্রেম-ভালোবাসা হবে তার সঙ্গেই, যার সঙ্গে সময় কাটাতে, সব কিছু শেয়ার করতে ভালো লাগে।

যে ঘটনা বেশি আনন্দ দেয়
আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই আনন্দের। তবে বিকেএসপি জীবনটা খুব মিস করি। রংপুর অনেক মিস করি। যখনই সময় পাই রংপুরে ছুটে যাই।

যে ঘটনা বেশি কষ্ট দেয়
নিজে যখন খারাপ খেলি বা বাংলাদেশ দল হেরে যায়, ভীষণ কষ্ট লাগে। পরিবার থেকে সবসময় দূরে থাকতে হয়। সে কারণেও খারাপ লাগে। আমার বড় আম্মাকে খুব মিস করি। ছেলেবেলায় তাঁকে হারিয়েছি। তাঁর চলে যাওয়াটা ভীষণ কষ্ট দেয়। ছোটবেলায় পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে কেবল খেলাই করতাম। এ কারণে বাড়িতে প্রচুর বকা খেতে হতো। তখন আমাকে বাঁচাত বড় আম্মা।

নাসির হোসেনযা ভালো লাগে
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা মারতে ভীষণ পছন্দ করি। ঘুরে বেড়াতে, মাছ ধরতে পছন্দ করি। মানুষকে হাসাতে ভালো লাগে, নিজেও হাসতে ভালো লাগে।

ক্রিকেটের বাইরের জীবন
একদম সাধারণ, আর দশটা মানুষের মতোই। একটু নিরাপদে থাকার চেষ্টা করি। তবে আর দশটা মানুষের মতো রাস্তা-ঘাটে চাইলেও চলতে পারি না।

ক্রিকেটার না হলে
আসলে বলাটা কঠিন। তবে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বা এমন কিছু হতে হবে সে চিন্তা ছিল না। তবে ক্রিকেটার হওয়ার চিন্তাটা এসেছে ১৫-১৬ বছর পর; বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর।

আপনাকে নিয়ে অনেকের প্রেমের গুঞ্জন
মানুষ আসলে আমাদের সঙ্গে ওভাবে মেশে না। তাই অনেক কিছুই অনুমানের ভিত্তিতে বলে। আবার অনেকেই ঈর্ষাকাতর হয়ে বলে। এসব গুঞ্জনে কান না দেওয়াই যুক্তিযুক্ত। মানুষ অনেক কিছুই বলবে। আমি এগুলো গায়ে মাখি না। ইতিবাচক হোক, নেতিবাচক হোক, মানুষ আমাকে নিয়ে যতই আলোচনা করে, ততই ভালো লাগে! তখন মনে হয়, মানুষের মনে অন্তত আছি।