দুই বছর নিষিদ্ধ ধোনির চেন্নাই

মহেন্দ্র সিং ধোনির হলুদ চেন্নাইকে একেবারে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে দেওয়া হলো। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেরই সবচেয়ে সফল দল এটি। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে, কি চ্যাম্পিয়নস লিগে। আইপিএলের আটটি আসরের ছয়বারই ফাইনালে উঠেছে। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুবার। দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস লিগেও। সেই চেন্নাই সুপার কিংসকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হলো আইপিএল থেকে। দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে রাজস্থান রয়্যালসকেও।
আইপিএলের নানা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর ভারতীয় আদালত বিশেষ একটি কমিশন গঠন করেন। সেই লোধা কমিশন আজ তাঁর রায় পড়ে শোনালেন। তাতে মূলত এই দুই দল আর দলের কর্ণধারদের সাজা দেওয়া হয়েছে। চেন্নাইয়ের অন্যতম মালিক, আইসিসির চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসনের জামাতা গুরুনাথ মায়াপ্পন আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের অন্যতম কর্ণধার, অভিনেত্রী শিল্পা শেঠির বর রাজ কুন্ড্রাও।
এ ব্যাপারে এখনো ধোনি কিংবা চেন্নাই দলের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে লোধা কমিশনের রায়ে একটু হলেও আশার আলো আছে চেন্নাইয়ের জন্য। কারণ সরাসরি দলকে নয়, কমিশন শাস্তি দিয়েছে আসলে ফ্রাঞ্চাই​জ মালিকদের। চেন্নাইয়ের মালিক হিসেবে সেই নিষেধাজ্ঞার শাস্তিটি পেয়েছে ইন্ডিয়া সিমেন্টস, ভারতের অন্যতম বড় এই সিমেন্ট কারখানার আসল মালিক কিন্তু শ্রীনিবাসনই।

একইভাবে রাজস্থানের মালিক হিসেবে শাস্তিটি পেয়েছে জয়পুর আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজ। ফলে এই দুই ফ্রাঞ্জাইজ যদি তাদের মালিকানা অন্য কারও কাছে পুরোপুরি বিক্রি করে দেয়, তখন হয়তো আইপিএলে খেলতে বাধা থাকবে না চেন্নাই-রাজস্থানের। তবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার বিসিসিআইয়ের, কমিশনের সেই সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। বিচারপতি লোধা তাঁর পর্যবেক্ষণে আরও বলেছেন, ফ্রাঞ্জাইজ নিষিদ্ধ হলেও চেন্নাই কিংবা রাজস্থানের কোনো খেলোয়াড়কে সেই শাস্তি ভোগ করতে হবে না। তারা পুরোপুরি মুক্ত।
তবে খেলোয়াড়েরা অন্য দলে চলে যাবেন কি না, তাও এখনো নিশ্চিত নয়। এখন অনেক কিছুই নির্ভর করছে বিসিসিআইয়ের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর। ইন্ডিয়া সিমেন্টস আর জয়পুর ফ্রাঞ্জাইজ তাদের মালিকানা পুরোপুরি অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দিলে এই দুটো দলকে খেলানোর অনুমতি দেওয়া হবে কি না, এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
আজীবন নিষিদ্ধ শ্রীনির জামাতা, শিল্পার জামাই

ফলে বেশ কিছু প্রশ্ন এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে বাতাসে। এই দুই দলের বদলে আইপিএলের পরবর্তী আসরে নতুন কোনো দল যুক্ত হবে কি না, কিংবা আইপিএল সাত দলে নেমে আসবে কি না। নিষেধাজ্ঞার কারণে পরবর্তী চ্যাম্পিয়নস লিগেও চেন্নাই খেলতে পারবে কি না, সেটিও এখনো পরিষ্কার নয়।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, মায়াপ্পন বা কুন্ড্রাদের শাস্তি শুধু নিষেধাজ্ঞাতেই শেষ হচ্ছে কি? বিচারপতি লোধা তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, তাঁরা কেবলমাত্র বিসিসিআইয়ের শৃঙ্খলাবিষয়ক নীতিমালা অনুসরণ করে রায় দিয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ফৌজদারি অপরাধও করেছেন। তবে সেই অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ভার এই কমিশনের নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।
ফ্রাঞ্চাইজগুলো এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারবে। কিন্তু যেহেতু ভারতের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এই রায় দিয়েছেন, এর বিরুদ্ধে আবেদন করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কমিশনের প্রধান বিচারপতি লোধা বলেছেন, কোনো ব্যক্তিবর্গ বা গোষ্ঠীর চেয়ে ক্রিকেট অনেক বড়। এই রায়ের ফলে হয়তো খেলোয়াড় কিংবা ফ্রাঞ্চাইজ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু খেলা হিসেবে ক্রিকেট যে ক্ষতির মুখে পড়েছে, তার তুলনায় এই ক্ষতি কিছুই নয়।
সূত্রঃপ্রথমআলো

Exit mobile version