পাকিস্তান দলের বোলিং অ্যাটাক সবচেয়ে শক্তিশালী। কোচ ওয়াকার নিজেও ছিলেন দুনিয়া কাঁপানো ফাস্ট বোলার। তাই এই ডিপার্টমেন্টের শক্তিমত্তার জানান দেয়ার ক্ষেত্রেও থাকেন কিছুটা এগিয়ে। বাস্তবেই কী তাই। প্রথম ম্যাচে সাঈদ আজমলের বোলিং ১০-০-৭৪-০, ওয়াহাব রিয়াজ-১০-০-৬৯-৪, জুনায়েদ খান ১০-০-৫৩-০। এদের মধ্যে কিছুটা সফলতা ওয়াহাবের। মোহাম্মদ হাফিজও আছেন। কিন্তু তার অনুমতি শুধু ব্যাটিংয়ের। এ চিত্র যদি হয় কোনো ম্যাচে একটি দলের সেরা বোলারদের। তাহলে তাদের পক্ষে অ্যাডভান্টেজ নেয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। ব্যাটিংয়ে যারা রয়েছেন, তাদের তো চিনতেই কষ্ট হবে তরুণ বলেই। ফিল্ডিংয়েও যারা বরাবরই থাকেন পূর্বধারাতেই (ক্যাচ ছেড়ে দেয়, গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে শরীর না ফেলা)। এমন এক পাকিস্তানের বিপক্ষে যদি আজকের ম্যাচেও শতভাগ ফেবারিট ধরা হয় বাংলাদেশ দলকে, সেটা বোধ হয় বাড়িয়ে কিছু বলা হবে না। যদি ব্যাটিং, বোলিংয়ে বড় ধরনের দুর্বলতা নেমে না আসে তাহলে আজ মিরপুর শেরেবাংলায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের বিজয়োৎসবটা মাশরাফিদের জন্য খুব বেমানান হয়ে যাবে না। বলা হয়ে থাকে পাকিস্তান আনপ্রেডিক্ট্যাবল দল। হয় তো। কিন্তু এবার কেন যেন মনে হচ্ছে ওই তকমায় যাওয়ার অবস্থাতে নেই তারা। একে তো তারুণ্যনির্ভর। এরপর ইনজুরির জন্য অনেককে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তাই তো দলটির বিপক্ষে ক্রিকেট ইতিহাসে যা যা হয়নি, সেগুলোর প্রত্যাশা করা একেবারে অমূলক কিছু নয়। কারণ বাংলাদেশ দল এখন শক্ত একটা ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে। বিশ্বকাপে যাওয়ার ক’মাস আগেও ছিল না এমন চিত্র। শুধু ব্যর্থতা। জিম্বাবুয়েকে হোমে হারিয়ে, ব্রিসবেনে যেয়ে ১৫ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প। মাশরাফিরা যেন এখন অনন্য উচ্চতায়। বোলিং, ব্যাটিং। সবখানেই দুর্দান্ত পারফরমেন্স। যে ম্যাচগুলো খেলে এসেছেন তারা অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। ঢাকাতেও সে ম্যাচেরই প্রতিচ্ছবি। এমনটাই প্রত্যাশা হাতুরাসিংহে ও হিথ স্ট্রিকদের শিষ্যদের কাছে আজো তথা সিরিজের প্রতিটা ম্যাচেই। গত ম্যাচে নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলেননি মাশরাফি। এ ম্যাচে তার ফেরার অর্থ আরো উজ্জীবিত টিম বাংলাদেশ। মাশরাফি এমনি একজন ক্রিকেটার, যিনি মাঠে নিজেও সেরাটা দেন, অন্যদেরও সেরাটা দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। সাকিব প্রথম ম্যাচেও দারুণ করেছেন নিজের পারফরমেন্স ও ক্যাপ্টেনসিতে। আজো থাকছেন মাশরাফির ডেপুটি হিসেবে। এ দুইয়ের সাথে রান মেশিন উপাধি পাওয়া মুশফিকুর রহীম, পারফরমেন্সে ফেরার প্রত্যাশায় থাকা মাহামুদুল্লাহ, টপ অর্ডারে চমৎকার ক্যামব্যাক করা তামিম ইকবাল, সাফল্য প্রত্যাশায় থাকা সৌম্য সরকার, ড্যাশিং সাব্বির রুম্মন ও নাসির হোসেন, ঘূর্ণি বল নিয়ে আরাফাত সানি ও পেস অ্যাটাকে মাশরাফির সাথে রুবেল-তাসকিন। গোটা বাংলাদেশ দলই যেন এখন বিস্ফোরণ ঘটানোর অপেক্ষায়। আজো তারা থাকবেন ওই প্রত্যাশায়। সেটা হলে মিরপুরে হয়ে যাবে ছোটখাটো একটা সিরিজ জয়ের উৎসবও। নিজ মাঠ বলেই নয়, আসলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের এখন সুদিন। আর সেটা পরিপূর্ণ হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জেতার মধ্য দিয়ে। এ একটি দল মাশরাফিদের অনেক আক্ষেপের কারণ। আজ সেটা মুছে দেয়ার সময়। প্রথম ম্যাচ নিয়ে কিছুটা দ্বিধা ছিল। কী জানি পাকিস্তানের এ দলটা না জানি কী করে। না! যে পারফরমেন্স তারা দেখিয়েছেন, প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে যেখানে থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটা বড্ড কঠিন। এক ইনিংসে দু’টি সেঞ্চুরি আর কোনো দিন পায়নি। সর্বাধিক রান করার রেকর্ড। সবই তো করল বাংলাদেশ। লক্ষণীয় ছিল মুশফিক তামিমের ব্যাটিং। সাঈদ আজমলকে যেভাবে বলে কয়ে ছক্কা-চার হাঁকিয়েছেন। ওহায়াব রিয়াজ, জুনায়েদের বল যেভাবে সাধারণ মানের বানিয়েছেন, তাতে আজো রান করার উৎসবই চলবে। কে করবেন, কে সুযোগ নেবেন- সে অপেক্ষায় দর্শক সমর্থকেরা। বাংলাদেশ দলে আজ পরিবর্তন রয়েছে। সেটা পেস বোলার আবুল হাসান রাজুর স্থানে মাশরাফি। অন্যরা সবাই থাকছেন। গতকাল দুই দলই কাটিয়েছে বিশ্রামের আমেজে। যদিও অল্প স্বল্প অনুশীলন করেছেন কেউ কেউ। আজো দিবা-রাতের ম্যাচ এবং দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে খেলা।