ভারতের এসেল গ্রুপের কথা মনে আছে? আইসিএল? ২০০৮ সালে এই আইসিএলে খেলতে যাওয়ার কারণেই তো বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ, মোহাম্মদ রফিক, শাহরিয়ার নাফীস, অলক কাপালি ও আফতাব আহমেদের মতো ক্রিকেটাররা। এই আইসিএল কেবল বাংলাদেশেই নয়, মিলিয়ন ডলারের সুবাস ছড়িয়ে এলোমেলো করে দিয়েছিল ভারতসহ অনেক ক্রিকেট খেলিয়ে দেশকেই। এসেল গ্রুপ ছিল সেই আইসিএলের উদ্যোক্তা।
আজ বেশ অনেক বছর পর এসেল গ্রুপ আবার পরিকল্পনা করছে ক্রিকেট দুনিয়াকে ভাগ করে খেলাটির জন্য নতুন এক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার। পরিকল্পনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও সেটি এরই মধ্যে ফাঁস হয়ে গেছে সংবাদমাধ্যমে। আইপিএলের মতো সফল টুর্নামেন্টের পথ কিন্তু দেখিয়েছিল শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যাওয়া আইসিএলই। এসেল গ্রুপ এবার আইসিসি মতোই বিকল্প একটি ক্রিকেট সংস্থাই নাকি গড়ে তুলতে চায়! স্বাভাবিকভাবেই এই খবরে উদ্বিগ্ন আইসিসি। উদ্বেগের আরও বড় কারণ, আইপিএলের ‘জন্মদাতা’, ভারতীয় বোর্ড থেকে এক রকম বিতাড়নের শিকার লোলিত মোদিকে নাকি এই উদ্যোগে হাত মেলানোর প্রস্তাব দিয়েছে এসেল গ্রুপ!
ভারতে অন্যতম ধনকুবের সুভাষচন্দ্রের মালিকানাধীন এসেল গ্রুপ ইতিমধ্যেই নাকি ৫ কোটি ডলারের প্রস্তাব ছুড়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ককে। কেবল ক্লার্কই নন, প্রস্তাব পেয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নারও। ব্যাপারটা এখনো প্রস্তাব দেওয়ার পর্যায়ে থাকলেও পুরো বিষয়টি নিয়ে মারাত্মক চিন্তিত আইসিসি। ব্যাপারটি তদন্ত করতে জরুরি ভিত্তিতে একটি কমিটিও নাকি করে দেওয়া হয়েছে। দুবাইয়ের আইসিসি অফিসে এসেল গ্রুপের এই তৎপরতা ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গার্ডিয়ানের খবর বলছে, এসেল গ্রুপ অস্ট্রেলিয়ায় ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট কন্ট্রোল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করার চেষ্টা করেছিল। একইভাবে অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশেও এমন ‘প্রাইভেট’ ক্রিকেট বোর্ড গঠন করার পরিকল্পনা নাকি আছে তাদের। সবগুলো দেশের ‘প্রাইভেট’ ক্রিকেট বোর্ডগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। যেটি হয়ে উঠতে পারে আইসিসির বিকল্প। এরই মধ্যে আইসিসি তদন্ত করে দেখছে, আসলেই অস্ট্রেলিয়ায় বেসরকারি ক্রিকেট বোর্ড ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করার চেষ্টা এসেল গ্রুপ করেছে কি না।ধনকুবের সুভাষচন্দ্র, হতে চান ক্যারি পেকার! ফাইল ছবি
এ ব্যাপারে মুখ না খুললেও হিন্দুস্তান টাইমসকে এসেল গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নরেশ ধ্যানদয়াল বলেছেন, ‘ভারতে ক্রিকেট নিয়ে আমাদের সুবিশাল পরিকল্পনা আছে। অনেক রাজ্যে এ মুহূর্তে এ বিষয়ে প্রাথমিক অনেক কাজ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না। তবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’
আইসিএল ব্যর্থ হলেও মোদির মতো তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক বুদ্ধির মানুষ সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে হাত মেলালে ফলটা অন্য রকম হতেও পারে। তা ছাড়া ব্যক্তি স্বার্থে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে মোদী ক্রিকেটে বিদ্রোহের সূচনা করতে পারেন-এমন শঙ্কা আইসিসির মধ্যে থাকাটাও স্বাভাবিক। আইসিসির ভাবনা এসেল গ্রুপের মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল জি নেটওয়ার্ক ও টেন স্পোর্টস নিয়েও। দশ টেস্ট খেলুড়ে দেশের পাঁচটিরই ক্রিকেট সম্প্রচারের স্বত্ব আছে তাদের।
লোলিত মোদী অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, প্রথমে এসেল গ্রুপের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেও এই মুহূর্তে তিনি এমন পরিকল্পনায় নেই। তিনি পরিকল্পনাটিকে ‘অবাস্তব’ বলেও অভিহিত করেছেন। তবে তিনি শঙ্কার আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছেন সুভাষ চন্দ্রের চরিত্র বিশ্লেষণ করে। বলেছেন, ‘সুভাষকে যতটুকু জেনেছি, কোনো জিনিস একবার মাথায় এলে তা যেকোনো মূল্যে করার লোক তিনি। সবচেয়ে বড় কথা তাঁর আছে অনেক টাকা।’ মোদী খুব সম্ভবত বলতে চেয়েছেন, অর্থের প্রলোভন দিয়ে নিজের পরিকল্পনাটুকু বাস্তবায়ন করার সব শক্তিই সুভাষ চন্দ্রের আছে।
এদিকে, এসেল গ্রুপের এই উদ্যোগকে ‘অনুমান-নির্ভর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ওয়ালি এডওয়ার্ডস। তিনি মাইকেল ক্লার্ক ও ডেভিড ওয়ার্নারের বিশাল প্রস্তাবের বিষয়টিও নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা প্রায় সবাই ভালো পারিশ্রমিক পায়। ওয়ালি ক্রিকেট পরিকাঠামোর ভাগ রোধে আইসিসিকে সর্বাত্মক সহায়তার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও একটা বড় বিদ্রোহের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একবার ব্যর্থ হলেও এ যুগের ‘ক্যারি পেকার’ হয়ে উঠতে সুভাষচন্দ্র যে ধনুকভাঙা পণ করেই নেমেছেন!
সূত্র: ক্রিকইনফো, গার্ডিয়ান, হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া,