ক্রিজে ছিলেন ১১২ মিনিট৷ খেলেছেন ৭৫টি বল৷ রান করেছেন মাত্র ৪৭৷ মেরেছেন ৩টি চার৷
তার চরিত্রের সঙ্গে বড্ড বেমানান৷ রোববার মিরপুরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চরিত্রবিরোধী ইনিংস দেখা গেছে ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাটে! সচরাচর এমন ইনিংস খেলেন না৷ নেমেওছিলেন চার নম্বরে ব্যাট করতে৷ অনেক ওভার খেলার সময় হাতে পেয়েছিলেন৷ তা সত্ত্বেও কেন এমন ইনিংস?
ভারত অধিনায়ক পরাজিত৷ সিরিজে৷ কিন্তু নিজের ক্রিকেটীয় যুক্তি থেকে সরে যেতে চান না৷ ধোনি উত্তর দিলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল একদিকে উইকেটটা টিকিয়ে রাখা৷ আমি বহুদিন পরে চার নম্বরে ব্যাট করতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম৷ উল্টো দিক থেকে উইকেট পড়ছিল৷ আমি তখন উল্টোপাল্টা চালিয়ে আউট হয়ে গেলে লোকে বলত শাহিদ আফ্রিদির মতো আউট হলাম৷ আমি আফ্রিদি হয়ে বাঁচতে চাই না৷ আমি ধোনি হিসেবেই বেঁচে থাকতে চাই৷ বলের গুরুত্ব বুঝে ব্যাট করতে চেয়েছিলাম৷’ হারের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে সোমবার ভারত অধিনায়করে বিশ্লেষণ : ‘আরো ২০-২৫ রান বেশি হলে লড়াই হতো৷ কারণ, দ্বিতীয় ইনিংসে বল স্লো হয়ে যাচ্ছিল৷ পড়ে থমকে আসছিল৷ ব্যাট করাটা খুব সহজ ছিল না৷ চাপে রাখা যেত৷ হলো না সেটা৷’
রাত কেটে নতুন দিন৷ মাহি কি এখনো অভিমান করে আছেন? সোমবার ভারতীয় হোটেলে ঢুঁ মেরে জানা গেল, ভারত অধিনায়ক স্বাভাবিক রয়েছেন৷ ধোনি বলছেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে৷ আমি তার উত্তর দিয়েছি৷ আমি নিজের থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু বলিনি৷’ অধিনায়কত্ব নিয়ে আর একটি কথাও বাড়াতে চাননি মাহি৷ তবে নিজের যুক্তিতে অটল থেকেছেন৷ কেন রাহানে বাদ? ভারত অধিনায়কের যুক্তি, ‘রাহানে দ্রুত গতির পিচে তাড়াতাড়ি শুরু করার ক্ষমতা রাখে৷ মিরপুরে পিচ দ্রুত গতির ছিল না৷ সেখানে রাহানে আরো স্লো হয়ে যেত৷ সে জন্য ভেবেছিলাম রায়ডুকে খেলানো দরকার৷ রায়ডু স্লো পিচে রানটা তাড়াতাড়ি তুলতে পারে৷ আগেও আমাদের হয়ে কার্যকরী ইনিংস খেলেছে৷ সবচেয়ে বড় কথা, দল নির্বাচন নিয়ে আমি কারো কোনো কথা শুনতে চাই না৷ ওটা একদম আমার বিষয়৷ আমি ওটা ভালো বুঝি৷’
জানা গেল, রোববার ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর ভারতীয় ড্রেসিংরুমে খুব হতাশ হয়ে পড়েন অধিনায়ক৷ তিনি সতীর্থদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি দুঃখিত৷ হারের সব দায় আমি নিজের কাঁধে নিচ্ছি৷’ জানা গেল, এতটা হতাশ কখনো দেখা যায়নি ভারত অধিনায়ককে৷ আরো দুটি ক্ষেত্রে ভারত অধিনায়ক খুব আপসেট হয়ে পড়েন৷ প্রথমত, যখন পর পর উইকেট পড়ছিল তখন অক্ষর প্যাটেল ক্রিজে গিয়ে মুস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে প্রথম বলে আউট হওয়ার সময়৷ তার পর বৃষ্টিতে সওয়া এক ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার পর অপরাজিত রবীন্দ্র জাদেজা ব্যাট করতে গিয়ে সেই মুস্তাফিজুরের প্রথম বলেই আউট হওয়ার পর মাহি খুব বিরক্ত হয়ে যান৷ জানা গেল, তিনি বারবার করে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পুরো ৪৭ ওভার খেলতে বলেছিলেন৷ রানটা তা হলে আরো কিছুটা বাড়ত৷ কিন্তু তা ঘটেনি৷
মানসিক ও শারীরিকভাবেও ক্লান্ত অধিনায়ক৷ ‘এই মরশুম শেষ হতে চলেছে৷ এই মরশুম সবচেয়ে লম্বা ছিল৷ ভাবতে পারেন, আমরা প্রায় ৮ মাস বাড়ির বাইরে ছিলাম! সত্যি সব মিলিয়ে একটা ক্লান্তি এসে গেছে৷ এবার কয়েকটা দিন বিশ্রাম দরকার৷’ ঢাকায় আসার পর মাহিকে একদম অন্যরকম লেগেছে৷ তিনি ক্রিকেটের বাইরে একরত্তি মেয়ে জিভাকে নিয়ে কথা বলতে বেশি আগ্রহী৷ আসলে ক্লান্ত মাহি তরতাজা হতে চান৷ ক্রিকেটের বাইরে তার মন পড়ে আছে শুধু মেয়ের কাছেই৷ বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হেরে যাওয়ার পর যেন আরো বেশি৷ বারবার খোঁজ নিচ্ছেন মেয়ের৷ নিজেই বলছিলেন, ‘মেয়ে এখনই আমাকে দেখলে ঠিক চিনতে পারে৷ অদ্ভুতভাবে আমাকে দেখলেই হাসে৷ কোলে উঠতে চায়৷ কী করে বোঝে কে জানে!’ থামেন ধোনি৷ বাবা হওয়ার গর্ব থেকে বলে ওঠেন, ‘কথা বলা এখনো শুরু হয়নি৷ সেটা বলতে পারলে আর বোধহয় আমাকে ছাড়বে না৷ সত্যি, এই অনুভূতি বোঝাতে পারব না৷’
‘ফাদার্স ডে’তেই সিরিজ হেরেছেন৷ আরো মন খারাপ৷ কিন্তু এখনো একটা ম্যাচ বাকি৷ ভারত অধিনায়ক নিজের মন ভাল রাখার জন্য খোঁজ নিয়েছেন, ঢাকায় কোথায় বাচ্চাদের ভালো জামা পাওয়া যায়৷ মেয়ে জিভা ও স্ত্রী সাক্ষী এই মুহূর্তে কলকাতায়৷ ঢাকায় বসে মেয়ের প্রসঙ্গ উঠতে ধোনিকে অন্যরকম শোনায়৷ যা আগে কখনো দেখিনি৷ ‘মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানো সবচেয়ে ভালোলাগার মুহূর্ত এখন আমার জীবনে৷ সবচেয়ে আনন্দের৷ বাবা হওয়ার অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না৷ এত ক্রিকেটীয় সাফল্য পেছনের সারিতে চলে গেছে৷ মেয়ের মুখ দেখার পর কিছুই আর মাথায় থাকে না৷’
জিভা বদলে দিয়েছে মাহিকে৷ ঢাকায় চূড়ান্ত ব্যর্থতা সত্ত্বেও সেই জন্য ভারত অধিনায়ক অবলীলায় বলে দিতে পারেন, ‘সিরিজে ২-১ কিংবা ৩-০ হওয়া কোনো ফ্যাক্টর নয়৷ শেষ ম্যাচে আমরা ক্রিকেট কতটা ভালো খেললাম, সেটাই আসল৷ ভালো ক্রিকেট উপভোগ করেই খেলতে হয়৷’ সত্যি, সম্পূর্ণ অচেনা ধোনি!
সূত্র : আজকাল